২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দেশে ভয়াবহ মাত্রায় বায়ুদূষণ

সবাই উদাসীন

-

কোনো দেশে অতিরিক্ত বায়ুদূষণের অর্থ, দেশের জনস্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে বড় পরিবেশগত হুমকি। বিশ্বে প্রতি ৯টি মৃত্যুর মধ্যে একটির কারণ বায়ুদূষণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, প্রতি বছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মৃত্যুর জন্য বায়ুদূষণ দায়ী। বাতাসে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা অতিরিক্ত হলে হাঁপানি, ক্যান্সার, স্ট্রোক ও ফুসফুসের রোগের মতো স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ে। শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ব্যাহত এবং মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রতিটি দেশ বায়ুর মান ভালো রাখতে যতœশীল থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে বায়ুর মান ক্রমাগত অস্বাস্থ্যকর হলেও প্রতিকারের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। সে কারণেই ২০২৩ সালে বায়ুদূষণে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষে এবং রাজধানী শহর ঢাকা তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, ২০২২ সালের তুলনায় গত বছর ঢাকায় বায়দূষণ বেড়েছে ২০ শতাংশ। ঢাকার বাতাসে গত বছর ক্ষতিকর অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৮০.২ মাইক্রোগ্রাম। ২০২২ সালে যা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৬৫.৮ মাইক্রোগ্রাম।
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন ২০২৩ (ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট ২০২৩)-এ এসব তথ্য উঠে এসেছে।
মূলত মানবদেহে ক্ষতিকর অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম ২.৫) মাত্রা পর্যালোচনা করে বায়ুদূষণের প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে আইকিউএয়ার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মান অনুযায়ী, বাতাসে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণার বার্ষিক গড় প্রতি ঘনমিটারে পাঁচ মাইক্রোগ্রাম বা তার কম হতে হবে। কিন্তু প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত বছর বাংলাদেশে তা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭৯.৯ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত বার্ষিক মানমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৬ গুণ বেশি। ২০২৩ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে ছিল ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। এখানে প্রতি ঘনমিটারে (পিএম ২.৫) ছিল ৯২.৭ মাইক্রোগ্রাম।
পরিষ্কার, স্বাস্থ্যকর ও টেকসই পরিবেশ একটি সর্বজনীন মানবাধিকার। বায়ুমানের উপাত্তের অভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব হয়, যা দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত করে। বায়ুমানের উপাত্ত জীবন বাঁচায়। যেখানে বায়ুমান সম্পর্কে প্রতিবেদন করা হয় ও ব্যবস্থা নেয়া হয়, সেখানে বায়ুর মান উন্নত হয়।
লক্ষণীয়, বায়ুদূষণের উৎসগুলো সারা বছর থাকে। তবে বর্ষাকালে বৃষ্টিতে দূষণ কম থাকে। দেশে বায়ুদূষণ মূলত ইটভাটা ও যানবাহনের ধোঁয়া থেকে বেশি হয়। অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ধূলিকণা, কারখানা, গৃহস্থালির চুলা, প্লাস্টিকের আবর্জনা পোড়ানো এবং উন্মুক্ত ভাগাড়। আন্তঃসীমান্ত দূষণও এ জন্য দায়ী। ফসল পোড়ানোর মৌসুমে ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান থেকে ধোঁয়া বাংলাদেশে প্রবেশ করে। জলবায়ু পরিবর্তনও বাতাসে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণার ঘনত্ব প্রভাবিত করতে বড় ভূমিকা রাখে। বায়ুদূষণজনিত মৃত্যুতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারও দায়ী।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আমরা কার্যকর কোনো ব্যবস্থা বা পদ্ধতি গড়ে তুলতে পারিনি। এদেশের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা প্রকৃতিনির্ভর। এভাবে চলছে বছরের পর বছর। তবু আমাদের কর্তাব্যক্তিদের কারো হুঁশ নেই, বায়ুদূষণ কমিয়ে আনার চেয়ে দূষণ যাতে না হয়, সেদিকে মনোযোগ দেয়ার। একই সাথে এটিও সত্য যে, বায়ুদূষণ রোধে দেশে যেসব আইন রয়েছে, এগুলোর কোনো প্রয়োগ নেই। আইন বাস্তবায়নে কারো কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।


আরো সংবাদ



premium cement