২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রাজধানীতে ছয় হাজার ছিনতাইকারী

রাস্তায় নাগরিকদের নিরাপত্তা নেই

-

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ছিনতাইকারীদের নিয়ে একটি তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলেছে। এ জন্য একটি সফটওয়ার উন্নয়ন করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, রাজধানী শহরের ছয় হাজারের বেশি ছিনতাইকারী রয়েছে। সাসপেক্ট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম (এআইভিএস) নামের এ কার্যক্রমের আওতায় নতুন নতুন ছিনতাইকারী চক্র পাওয়া যাচ্ছে। ডিমএপি এ অপরাধকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করেছে- ছিনতাই ও ডাকাতি। ১৭৩৭ জন ছিনতাইকারী ও ৪৪৬১ জন ডাকাত।
অপরাধী শনাক্ত করার এআইভিএস সফটওয়্যারে ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের ছবিসহ নাম, বয়স, আঙুলের ছাপ, বিস্তারিত ঠিকানা ও তাদের অপরাধনামার একটি বিস্তারিত বিবরণ থাকে। এ তথ্যভাণ্ডার পরবর্তীতে একই ধরনের চক্রগুলো শনাক্ত করে অপরাধীদের দমনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এ পর্যন্ত এই ভাণ্ডারে ৬১৯৮ জনের বিস্তারিত বিবরণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
পুলিশের এই নতুন তৎপরতায় ঢাকা শহরে ছিনতাই-ডাকাতি কমে এসেছে এমন তথ্য নেই। বাস্তবতা হলো-বিশ্বের সবচেয়ে অনিরাপদ বড় শহরের একটি ঢাকা। যেকোনো সময় দুষ্কৃতকারীদের কবলে পড়ার ভয় নিয়ে মানুষকে এই নগরীতে চলাচল করতে হয়। এমন অনিশ্চয়তা আপাতত এ শহরে কমার কোনো লক্ষণ নেই।
ছিনতাইকারীরা মানুষের দুর্বল অবস্থাকে পুঁজি করে অপকর্ম করে। বেছে নেয় এমন সময় যখন রাস্তায় মানুষের আনাগোনা কম থাকে। ভোরে বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশন থেকে বাসাগামী মানুষকে নিশানা বানায় তারা। দলবেঁধে আক্রমণ করে। তাদের কাছে থাকে ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র। মানুষজনের গতিরোধ করে নগদ অর্থ ও সাথে থাকা মূল্যবান বস্তু কেড়ে নেয়। আড়তে যাতায়াতকারী ব্যবসায়ী ও অন্যান্য পেশার লোকদেরও লক্ষ্য বানায়। গাড়ি ও মোটরসাইকেল আগলে চালক ও যাত্রীদের কাছ থেকে মুঠোফোন, স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়। এ জন্য নির্জন রাস্তা বাছাই করে। বিমানবন্দর সড়কে বিদেশফেরত যাত্রীদের অভিনব কায়দায় ছিনতাই করা হয়। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে ভুয়া চেকপোস্ট বসিয়ে যাত্রীদের তল্লাশির নামে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। তবে দিনদুপুরেও ঢাকায় বহু ছিনতাই হয়। জনাকীর্ণ রাস্তা ও পাবলিক বাসে ভিড়ের মধ্যে মানুষ ছিনতাই চক্রের কবলে পড়ছে প্রতিনিয়ত।
একটি প্রতিবেদনে সম্প্রতি পুলিশের এক সদস্য ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন এমন খবর পুলিশ সূত্রে এসেছে। ওই ঘটনায় পুলিশের বিশেষ শাখার এক নারী কনস্টেবলের রিকশা থামিয়ে সোনার চেইন, টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয় ডাকাতদল। একই রাতে ধানমন্ডিতে আরেকটি ডাকাতি করে একই চক্র। পরের দিন ১৩ মে তেজগাঁও ও বনানীতে আরো দু’টি ডাকাতি সংঘটিত হয়। সিসিটিভি ক্যামেরার শতাধিক ফুটেজ যাচাই করে নিজস্ব তথ্যভাণ্ডার এআইভিএস ব্যবহার করে দলটিকে শনাক্ত করে পুলিশ। তবে পুলিশের ‘বিশেষ শাখার’ এক সদস্য ছিনতাইকারীদের হাত থেকে রেহাই না পাওয়ায় এ বার্তাই দেয়, শহরে উচ্চহারে এটি ঘটছে। এমনকি পুলিশ এ থেকে নিজেও বাঁচতে পারছে না।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক ছাত্র ক্যাম্পাসের পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক দম্পতির কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়। এখানেই শেষ নয়, তাদের মারধর ও হেনস্তাও করে তারা। ওই ছাত্ররা সরকারি ছাত্র সংগঠন- ছাত্রলীগের সদস্য। অবশ্য এ জন্য দুই নেতার বিরুদ্ধে লোক দেখানো ব্যবস্থা নিয়েছে ছাত্রলীগ। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ধরনের ঘটনা সংগঠনটির সদস্যরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরো ঘটিয়েছে। পুলিশ সদস্যদেরও একই ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত হতে দেখা গেছে। রাজধানীর মতিঝিলে ১০ লাখ টাকা ছিনতাই চেষ্টায় জড়িত থাকায় বংশাল থানার এক কনস্টেবল দণ্ডিত হয়েছেন।
রাজধানীতে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রযুক্তির ব্যবহার আশাব্যঞ্জক। সত্যিকার অর্থে পুলিশ চাইলে এই অপরাধ নির্মূল করা যায়। তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারের সময় এমন অপরাধ প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসে। ছিনতাইকারী চক্রের সাথে খোদ পুলিশের সম্পর্ক থাকার খবরও পাওয়া যায়। অর্থাৎ পুলিশের কোনো একটি অংশের আনুকূল্যে ওই চক্রগুলো গড়ে ওঠে। একপক্ষ যখন দুর্বৃত্তদের পাকড়াওয়ে তৎপর, তখন অন্য একটি পক্ষ তাদের সহযোগী হলে সেখানে পূর্ণ সফলতা আসে না। যদি পুলিশের ভেতর শুদ্ধি অভিযান চালানো যায়, তা হলেই সফটওয়্যারের সহযোগিতায় এ ধরনের অপরাধ দমন কার্যকর হতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement