০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


চলনবিলে মাছের অভাব

সরকার নজর দেবে কি?

-

‘মৎস্যভাণ্ডার’ খ্যাত উত্তরবঙ্গের চলনবিলে এখন মাছের আকাল। নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে এ পত্রিকার পাবনা-সিরাজগঞ্জের দু’জন সংবাদদাতা জানালেন এ কথা। চলনবিলে মাছের আকালে দেশের এই বিরাট প্লাবন ভূমিতে শুঁটকিরও সঙ্কট। ভরা মৌসুমেই মাছের সঙ্কটে সংশ্লিষ্ট মালিকরা। শুঁটকির চাতাল খালি পড়ে থাকায় এবার ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, এ বছর বর্ষায় চলনবিলে আগের মতো সেই উথালপাতাল ঢেউ ছিল না। পানির অভাবে চলনবিলে মাছের বংশবিস্তার বিঘিœত হয়েছে। জলাভূমি ও প্লাবন ভূমিতে আশঙ্কাজনকভাবে মৎস্য উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। মাছ ধরা ও মাছ শুকানোর মৌসুমেও বেশির ভাগ শুঁটকির চাতালই ফাঁকা। মহাজনের দাদনের টাকা নেয়া চাতাল-মালিকরা এখন লোকসানের শঙ্কায় আছেন। জানা যায়, চলনবিল আসলে পদ্মা-যমুনার প্লাবন ভূমি। অতীতে এ বিলের মাছ অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় প্রভাব বিস্তার করত। শতবর্ষেরও বেশি আগে ১৯১৪-তে এ বিলের মাঝখান দিয়ে ঈশ্বরদী থেকে সিরাজগঞ্জ রুটের রেলপথ বানানো হয়েছিল। ফলে কলকাতায় ট্রেনে নিতে সুবিধা হয় চলনবিলের মাছ। ১৯৭৭ সালে এর মাঝ দিয়ে বাঘাবাড়ী (সিরাজগঞ্জ) থেকে সিংড়া (নাটোর) পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরি করা হয়। তার ২৫ বছর পরে একইভাবে নির্মিত হয় ৫৫ কিলোমিটার লম্বা বনপাড়া (নাটোর)-হাটিকুমরুল (সিরাজগঞ্জ)-যমুনা সেতু সংযোগ সড়ক। এক হাজার ৮৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের চলনবিলের এখন টিকে আছে মাত্র ৩৬৮ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যেও মাত্র ৮৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় পানি থাকে সারা বছর। দেশী মাছকে কেন্দ্র করে চলনবিলে রয়েছে ২৭০টি অস্থায়ী শুঁটকি চাতাল। তাড়াশের একটি চাতাল মালিক জানান, ‘গতবার দুই চাতালে প্রায় এক হাজার ৪০০ মণ শুঁটকি হয়েছিল। কিন্তু এবার মাছ ধরা পড়েছে কম। ফলে তাজা মাছের অভাব প্রকট।’
শুঁটকির ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশে-বিদেশে মিঠা পানির শুঁটকির চাহিদা অনেক। তবে বাংলাদেশ সরকারের এ বিষয়ে উদাসীনতা দৃশ্যমান। স্বল্প সুদে ব্যাংক লোন পাওয়া গেলে চড়া সুদের দাদনের মহাজনদের কবল থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলত। উল্লেখ্য, শুঁটকির মান ভেদে এ, বি ও সি-এই তিনটি গ্রেডে বাছাই করা হয়। ‘এ’ গ্রেড বা সর্বাধিক ভালো মানের শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের পর যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন, আরব আমিরাত, ইরাক, কুয়েত, সিরিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। অন্য দুই গ্রেড দেশের প্রধানত দিনাজপুর, রংপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, খুলনা, রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এবার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২৭০টি চাতালে ৩৫ কোটি টাকা দামের সাড়ে ৪০০ টন শুঁটকি উৎপাদন। এ জন্য এক হাজার ৩৫০ টন কাঁচা মাছ থাকা চাই। কিন্তু চলনবিলে মাছ তেমন পর্যাপ্ত নয় এবং এখানে জালে বেশি ধরা পড়ছে না। বড় ব্যবসায়ীদের দাদনের টাকায় বড় বড় চাতাল বানানো হলেও বর্তমানে সেগুলো অনেকটা ফাঁকা মাছের অভাবে।


আরো সংবাদ



premium cement