২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন

সুষ্ঠু ভোটের নেপথ্যের বয়ান

-

নারায়ণগঞ্জ সিটির নির্বাচন নিয়ে গতকালের ঢাকার পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনের যে মূল সুর সেটি খুবই ইতিবাচক। নির্বাচনে ফিরল উৎসব, কিংবা ভোটের সংস্কৃতিতে ফিরল নারায়ণগঞ্জ, আহা কতদিন পর আনন্দের ভোট ইত্যাকার শিরোনামের নানা প্রতিবেদনে একটি কথাই মুখ্য হয়ে উঠেছে যে, বর্তমান সরকার একটি চমৎকার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিয়েছে। এই প্রকাশ্য বক্তব্যের পেছনেও আরেকটি কথা প্রচ্ছন্ন আছে। সেটিই মূল কথা। সেটি হলো, এই সরকারের অধীনে ভালো নির্বাচন হওয়া সম্ভব। আর সেই সম্ভাবনা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে ঢাকার বেশির ভাগ মিডিয়া গত ১২ বছরে এই সরকার ও ইসির অধীনে কিভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে সেটি আড়াল করেছে। এমনকি নারায়ণগঞ্জের রোববার ভোট গ্রহণের সময় ও তার আগে-পরে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যেসব অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে সব কিছুই উপেক্ষা করেছে।
এই নির্বাচন মোটামুটি স্বচ্ছ দেখানোর একটি গুরুতর দায় সরকারের ওপর ছিল। বিষয়টি সবারই জানা। এই মুহূর্তে দেশী-বিদেশী নানা চাপে রয়েছে সরকার। মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের মুখে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মতো বিশাল ধাক্কা সামলাতে হিমশিম অবস্থা। বিদেশী কূটনীতিকদের ব্রিফ করে বলা হচ্ছে, সমস্যা দেখলে আমাদের বলেন। এই অবস্থায় সরকার কোনোভাবেই নির্বাচনটি বিতর্কিত হোক তা চায়নি। তারা এই ঝুঁকি নিতে পেরেছে সেলিনা হায়াৎ আইভীর জনপ্রিয়তার কারণেও। জানত, এ ক্ষেত্রে রাতের ভোট করার আদৌ দরকার নেই। সে জন্য ইভিএম নামক সারা বিশ্বে বাতিল যন্ত্রে ভোট গ্রহণের কৌশল নিয়েই কাজটি সেরে নিয়েছে। সুতরাং গত এক যুগের সব নির্বাচনের চেয়ে সবচেয়ে ভালো নির্বাচনটি করেছে।
কিন্তু এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া কি আদৌ সম্ভব? অতীত অভিজ্ঞতা কী বলে? জবাবটা দিয়েছেন সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেছেন, এই সুষ্ঠু নির্বাচন ২০১৩ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্মরণ করিয়ে দেয়। আজকের ক্ষমতাসীন দলই তখন ক্ষমতায় ছিল এবং সব সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিরোধী পক্ষ জয়ী হয়। ওই নির্বাচন হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের প্রেক্ষাপটে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনের সময়। সরকার সে সময়ও প্রমাণ করতে চেয়েছিল, দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। আমরা তাতে আস্থা রেখেছিলাম। ওই আস্থার মাশুল আমরা দিয়েছি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে।
মূলত সেই মাশুল দিতে হয়েছে গত এক যুগ ধরে। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন কেমন হয়েছে তা বুঝতে হলে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। নৌকার প্রধান প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, ইভিএম চুরির বাক্স। প্রশাসনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইভিএম কারচুপির মাধ্যমে তাকে হারানো হয়েছে। জাতীয় দৈনিকগুলোর খবরেও উল্লেøখ করা হয়েছে, কত মানুষ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ভোট দিতে না পেরে ফিরে গেছেন। ইভিএম মেশিন কোথাও কোথাও অকেজো ও হ্যাং হয়ে গেছে। নির্বাচনের আগে তৈমূরের লোকজনকে পুলিশ হয়রানি করেছে। বাড়ি বাড়ি হানা দিয়েছে। এমন কোনো কর্মী নেই, যার বাড়িতে পুলিশ যায়নি, যাকে ভয় দেখানো হয়নি।
এসব অভিযোগের প্রতিটিই নিয়মিত জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু কোনো একটি অভিযোগেরও সুরাহা করা বা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমন নজির নেই। খোদ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বিস্ময় প্রকাশ করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তার নিষ্ক্রিয়তায়। তিনি বলেন, একজন মাননীয় সংসদ সদস্য আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালিয়েছেন; কিন্তু আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তাকে একটি চিঠি পর্যন্ত দেয়া হয়নি। বরং বলা হয়েছে, তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেননি।
এটাই হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের আসল চেহারা, যেখানে পুরো প্রশাসন এক হয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে জয়ী করে এনেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
শিল্পী-সাংবাদিক দ্বন্দ্ব নিয়ে এলো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যশোর কারাগারে হাজতিদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ব্যাপক আতঙ্ক চিকিৎসার জন্য ঢাকা ছাড়লেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু কুষ্টিয়াতে মসজিদ কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫ চেয়ারম্যান তপন ও অজিত মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় ১৪ ডাকাত সদস্য গ্রেফতার রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়াল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

সকল