২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সাড়া ফেলেছে ‘বিনা’ ধানের উন্নত জাত

কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় করুন

-

দেশের মাঠে যখন প্রচলিত ধানগুলোর এখনো থোড়ও হয়নি, তবে এই ধান কাটা শুরু করেছেন কৃষকরা কিছু দিন আগে থেকেই; ময়মনসিংহ সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরবর্তী গ্রাম ছাতিয়ানতলায়। ব্রহ্মপুত্র নদের একটি নিচু চর এটা। এই পাকা ধানের নাম ‘বিনা-১১’। নয়া দিগন্তের নিজস্ব প্রতিবেদনে এ কথাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে জানানো হয়, স্থানীয় মাওলানা আবু সাঈদ বলেন, ‘গত বছর বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) কর্মকর্তাদের পরামর্শে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেছিলাম বিনা ধান-১১। বিঘায় ১৬ মণ ফলন হয়েছে। এবার আবাদ করেছি দু’বিঘায়। অন্যরাও আমার দেখাদেখি উৎসাহিত হয়ে এ ধান চাষ করেছেন। কারণ এ ধানের ফলন বেশি ও অল্প দিনে ফলন মেলে। এই এলাকা বন্যাপ্রবণ বলে বোরো ধান কাটার পর প্রচলিত আমন ধান লাগানো হয়। আর কোনো ফসল এখানে হতো না। কিন্তু এখন এই বিনা আমন কাটার পরই একই জমিতে সরিষার চাষ করতে পারব।’ একই গাঁয়ের আরেক কৃষক আবু বকর জানান, ‘বালুমাটির এ চরে বোরো ধান মোটামুটি ভালো হলেও আমন মৌসুমের অন্যান্য ধান ভালো হয় না। কিন্তু বিনা ধান এর ব্যতিক্রম। পানিতে ডুবে গেলেও তা নষ্ট হয় না। বছরে দোফসলি জমি এখন তে-ফসলা।’
এ দিকে ‘বিনা’ দাবি করছে, মঙ্গাপীড়িত বৃহত্তর রংপুর ও বরেন্দ্র এলাকাসহ দেশের নানা জায়গায় হাজার হাজার হেক্টর জমিতে এই আগাম জলমগ্নতাসহিষ্ণু ও উচ্চফলনশীল আমন ধানের জাত বিনা-১১ চাষ করা হচ্ছে। এতে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা করা সহজ হয়েছে। এই দেশে অতিবর্ষণজনিত জলাবদ্ধতা ও বন্যায় ২০ লাখ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। এ ছাড়া জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিতে সৃষ্ট অকস্মাৎ বন্যা, পাহাড়ি ঢল, জোয়ারের বন্যা, অতি বন্যা প্রভৃতির ফলে আবাদের ভূমি হ্রাস পাচ্ছে। রোপা আমন ধানের জাতগুলো নিয়মিত ক্ষতির শিকার হয়। এ অবস্থায় আকস্মিক বন্যাতেও যেন আমনের ফলন না কমে, সে জন্য বিনা-১১ জাতটি ‘বিনা’র বিজ্ঞানীরা বের করেছেন। এটা ২০ থেকে ২৫ দিন পানিতে ডুবে থাকলেও হেক্টরে ৫-৫.৫ টন এবং বন্যামুক্ত বা স্বাভাবিক জমিতে সাড়ে ছয় টন পর্যন্ত ফলন দিতে পারে। আমনের মৌসুমে এর আয়ু ১১০ থেকে ১১৫ দিন। এই স্বল্প মেয়াদের দরুন এর চাষাবাদের ফলে শস্যের নিবিড়তা বাড়ানো যায়। ‘বিনা’ প্রতিষ্ঠানের প্রধান জানান, আমন জাতের জীবনকাল অধিক বলে উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানের জমিতে বছরে দু’টির অধিক ফসল চাষ করা যায় না। তবে নয়া বিন্যাসের আওতায় ময়মনসিংহসহ কয়েকটি জেলায় আগাম আমন ছাড়াও সরিষা/পাটশাক/রবিশস্য এবং বোরো ধান একই বছরে চাষ করা যাচ্ছে। উত্তরবঙ্গে স্বল্পময়াদি এ ধানগুলোর মাধ্যমে জমিতে বছরে তিন-চার ফসলের চাষ করা যাচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে আমন ধান কেটে সহজেই দু-একবার আলুর চাষ করা যায়। বিনা-১১ চাষে ‘মঙ্গা’ বা মরা কার্তিকের অবসান ঘটেছে। সর্বোপরি, বাংলাদেশে টেকসই খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেছে।
জানা যায়, বিনা-১১ চাষে সার ও পানিসহ নানান খরচ ৩০ শতাংশ হ্রাস পায়। ১১০ দিনেও এই ধান কাটা যেতে পারে। পানি জমলেও এ ধান চাষ করা যায়। এটা পানিতে তলিয়ে পচে যাওয়ার পরও আবার ধানের ডগা বা পাতা গজিয়ে ওঠে। তাই নতুন ধান রোপণ করতে হয় না। এখন দেশের ৫২ লাখ হেক্টর ভূমিতে আমনের চাষ করা হচ্ছে। এর ৬-৭ শতাংশে বিনা-১১ ধানের জাত চাষ করা হয়। দেশে মানুষ বাড়লেও জমি কমে যাচ্ছে। তাই ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। এ জন্য উফশীর সাথে বছরে তিনটি বা চারটি ফসল চাষ করা দরকার।
ওয়াকিবহাল মহল দেশে আগাম, বন্যাসহিষ্ণু, উফশী জাতের বিনা-১১ ধান চাষকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এর বীজ কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলা এবং তা সহজে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ এখনো দেশের বেশির ভাগ কৃষিজীবীই এ সম্পর্কে জ্ঞাত নন।


আরো সংবাদ



premium cement