দেশে বিগত কয়েক মাস ধরে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ফের ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। ঈদুল আজহা সামনে রেখে আট দিনের জন্য শিথিল করা হয়েছিল কঠোর বিধিনিষেধ। ফের আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধে সব ধরনের গণপরিবহন, সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়। বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব ধরনের শিল্পকারখানা। শুধু জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান যেমনÑ খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া পরিবহন ও সংরক্ষণ এবং ওষুধ খাতের শিল্পকারখানা খোলা থাকবে বলে জানানো হয়। যে কারণে ঈদের আগে বাড়িতে কোরবানির ঈদ পালন করতে যান রফতানিমুখী কারখানার লাখো শ্রমিক।
কিন্তু গত শুক্রবার ঘোষণা আসেÑ ১ আগস্ট থেকে শিল্পকারখানা খোলা থাকবে। গণপরিবহন বন্ধ রেখেই সরকার হঠাৎ করে রফতানিমুখী কলকারখানা খুলে দেয়ায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন লাখ লাখ শ্রমিক। অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্ভোগ সয়েই তাদের ফিরতে হয়েছে কর্মস্থলে। গণপরিবহন না চললেও ট্রাকসহ ছোট ছোট যানবাহনে ফেরিঘাটে পৌঁছান শ্রমিকরা। সেখান থেকে ফেরি, ছোট ছোট নৌকা, স্পিডবোট বা ডিঙ্গিতে যে যেভাবে পেরেছেন নদী পার হয়েছেন। ঈদের পর সরকার লকডাউন ঘোষণা করায় গ্রামের বাড়িতেই ছিলেন তারা। এখন শিল্পকারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা শুনে চাকরি বাঁচাতে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মস্থলে যেতে ছুটতে হলো তাদের। কাজ হারানোর ভয়ে ঝুঁকি নিয়ে দলবেঁধে ফিরতে বাধ্য হন তারা। একই সাথে গুনতে হয় তিন-চার গুণ বেশি ভাড়া। করোনার এই দুঃসময়ে চাকরি চলে গেলে তাদের পথে বসা ছাড়া আর উপায় থাকবে না, এমন শঙ্কায় এই ঝুঁকি নিতে হয়েছে তাদের। সময়মতো কর্মস্থলে হাজির না হলে চাকরি-বেতন দুই-ই খোয়ানোর অভিজ্ঞতা তাদের তাড়া করে ফিরেছে।
যদিও সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্যই কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে। কিন্তু গত শনিবার কর্মস্থলে পাগলের মতো ছুটে চলা শ্রমিকরা নদী পারাপারের সময় ফেরিতে ঠাসাঠাসি করে আসেন। সেখানে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। ফেরিঘাট থেকে রাজধানীসহ নানা প্রান্তে যেতে হয়েছে তাদের। মূলত গত শনিবার ছিল ঢাকামুখী মানুষের ঢল। বিশেষ করে তৈরী পোশাক কারখানার কর্মীদের স্র্রোত দেখা যায়। এমন লেজেগোবরে অবস্থার পর বিলম্বে কর্তাব্যক্তিদের বোধোদয় হয়। রফতানিমুখী শিল্পকারখানার কর্মীদের কর্মস্থলে ফেরার সুবিধার্থে গতকাল রোববার সব ধরনের গণপরিবহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। কিন্তু এর আগেই যা ঘটার তা ঘটে গেছে। পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মস্থলে আসতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধির যেভাবে লঙ্ঘন হয়েছে; তাতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দেশে করোনার প্রকোপ আরো বেড়ে যেতে পারে।
পরিবারের সদস্যসহ নিজেদের পেটের দায় মেটাতে অমানুষিক পরিশ্রম করা গার্মেন্টকর্মীরা এভাবে বারবার হেস্তনেস্ত হচ্ছেন, তাতে কারো কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। অথচ এসব শ্রমিকেরই শ্রম-ঘামে দেশের অর্থনীতি পুষ্ট হচ্ছে। যারা এই আয়ের কারিগর তাদের প্রতি রাষ্ট্রীয় এমন নিষ্ঠুর উদাসীনতা কেন? এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দেয়ার গরজ কারো আছে বলে মনে হয় না। বরং যারা এমন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার তাগিদ নেই সরকারের। সরকারি এই অব্যবস্থাপনা খেটেখাওয়া মানুষের সাথে একধরনের রসিকতা ছাড়া আর কিছু নয়। এই আচরণ দেখে বলা অসঙ্গত নয় যে, সরকারের ভাবনায় নাগরিকরা যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছেন কি না সন্দেহ। তা না হলে দরিদ্রদের সাথে বারবার এমন দায়িত্বহীন আচরণের অবসান ঘটত বৈকি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা