২২ মে ২০২৪, ০৮ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৩ জিলকদ ১৪৪৫
`


উপকূলে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে শঙ্কা

এখনই ব্যবস্থা নিন

-

একটি জাতীয় দৈনিকের সাতক্ষীরা প্রতিবেদক জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাস করছে দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকার মানুষ। সেই সাথে ঝুঁকিপূর্ণ তাদের জীবন ও জীবিকা। লবণাক্ততার কারণে কৃষক ফসল ফলাতে পারছে না, হালের পশু ও অন্যান্য গৃহপালিত পশুর খাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে চাষযোগ্য জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। প্রতিনিয়ত এই অঞ্চলের মানুষকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা।
জলবায়ু পরিবর্তনে সাতক্ষীরার ৮১ শতাংশেরও বেশি জমি অর্থাৎ এক লাখ ৫৩ হাজার ১১০ হেক্টর জমি লবণাক্ততায় রূপ নিয়েছে। আর পতিত জমি রয়েছে ৪০ হাজার ৯৮১ হেক্টর।
জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯-২০ মৌসুমে এ জেলায় রোপা আমন চাল উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ ৭৫ হাজার ৮৬ টন, ২০-২১ মৌসুমে দুই লাখ ৫৮ হাজার ১০০ টন, ২১-২২ মৌসুমে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৭২৮ টন এবং ২২-২৩ মৌসুমে আমন চাল উৎপাদন হয় দুই লাখ ৪১ হাজার ৮৫৮ টন। ২০১৯-২০ মৌসুমের তুলনায় ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩৩ হাজার ২৩৮ টন উৎপাদন কমেছে।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান ড. নাসরিন আক্তার জানান, জলবায়ু পরিবর্তনে মাটির লবণাক্ততা ও ক্ষার বৃদ্ধি পাওয়া সড়ক-মহাসড়কে হাজার হাজার রেইনট্রি গাছ মরে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
২০০৯ সালে আইলার পর থেকে ১৫ বছরে এক ডজনের বেশি দুর্যোগের কবলে পড়েছে উপকূলের এই জেলা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শ্যামনগর, কালীগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলায় নদীভাঙনে গত কয়েক বছরে সহস্রাধিক ঘরবাড়ি, মসজিদ, মাদরাসাসহ কৃষিজমি নদীতে বিলীন হওয়ায় বাসস্থান ছেড়েছেন অনেক মানুষ।
উপকূলের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, উপকূলের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও জীবনযাত্রার উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
জেলা শিক্ষা অফিসারের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে এ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ৩৩ হাজার ৯৩৭ জন শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিল। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০২২ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৬ হাজার ৩৮৭ জন। অর্থাৎ ওই ব্যাচের কমপক্ষে সাত হাজার ৪৫০ জন শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে।
সুন্দরবন ঘেঁষা শ্যামনগরের দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার হুদা মালী বলেন, খরা, ঝড়, বৃষ্টি ও নদীভাঙন নিত্যসঙ্গী। আইলার পর লবণাক্ততার কারণে এলাকা উদ্ভিদশূন্য। সব সময় সুপেয় পানির অভাবে থাকতে হয়।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বলছে, প্রতি লিটার পানিতে শূন্য থেকে এক হাজার মিলিগ্রাম লবণ থাকলে সে পানি পানযোগ্য। উপকূলে প্রতি লিটার পানিতে ১০০০-১০,০০০ মিলিগ্রাম লবণ রয়েছে। হিসাব অনুযায়ী, সাতক্ষীরার ১৩ শতাংশ মানুষ খাবার পানির সঙ্কটে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, লিডার্স, ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ডসহ জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের তথ্যমতে, জেলার ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮১ জন মানুষের মধ্যে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ সুপেয় পানির সঙ্কটে রয়েছেন।
জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে শীতের সময় অধিক শীত, গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরম এবং বর্ষায় অতি বৃষ্টির ফলে দুর্ভোগ বাড়ছে। জলোচ্ছ্বাসে নদীভাঙনে এলাকার বহু মানুষ উদ্বাস্তু। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাতক্ষীরার মানুষ রেকর্ড পরিমাণ তাপমাত্রা অনুভব করছে।


আরো সংবাদ



premium cement