০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কর্মকর্তারা মাঠে না থাকায় কৃষকরা ক্ষুব্ধ

সবাই দায়িত্ববোধের পরিচয় দিন

-

আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় খাদ্যশস্য বোরো ধান। তিন কোটি ৬০ লাখ টন চাল উৎপাদনের বিপরীতে শুধু বোরো থেকেই পাওয়া যায় প্রায় দুই কোটি টন। সবার জানা, দেশের হাওরাঞ্চল হচ্ছে বোরো আবাদের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র। এ বছরও সাতটি হাওর-অধ্যুষিত জেলার চার লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। অনুমান করা হয়, এখান থেকে আসবে দেশের মোট উৎপাদনের শতকরা ২০ ভাগ অর্থাৎ ৪০ লাখ টন। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ায় ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের বেশ কয়েকটি উপজেলায় অন্তত ৫০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই সংশয় দেখা দিয়েছে, এবার বোরো ধানের উৎপাদন আশানুরূপ না হওয়ার।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ঝড়, শিলাবর্ষণ এবং এর সাথে অস্বাভাবিক উষ্ণ বায়ুপ্রবাহে আবাদি জমির বোরো ধানের শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে গেছে। দেশের প্রধান ফসলের এই আকস্মিক দুর্দশা দেখে কৃষকরা হতভম্ব ও দিশেহারা। কিন্তু এই সঙ্কটক্ষণেও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের দেখা মিলছে না। এতে কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গণমাধ্যমের খবরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মাঠের পর মাঠজুড়ে ধানের সোনালি শীষ কালবৈশাখীর ঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে হঠাৎ সাদা হয়ে গেছে। এ অবস্থায় কী করবেন ভেবে না পেয়ে কৃষিজীবীরা হাতে ধানের শীষ নিয়ে অসহায়ভাবে আহাজারি করছেন। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের দুবলী ও নারায়ণপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অভিযোগ করেন, তাদের এলাকায় সরকারের কৃষি বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা নেই। খোঁজ নিলে জানা যায়, এ কর্মকর্তা দীর্ঘ এক দশক যাবত ডেপুটেশনে ময়মনসিংহে একই বিভাগের সহকারী পরিচালকের দফতরে কাজ করছেন। অথচ তাকে বেতনভাতা দেয়া হয় ঈশ্বরগঞ্জের অফিস থেকে। তিনি এসব কথা স্বীকার করেছেন। ঈশ্বরগঞ্জের একই ইউনিয়নের বাঘবেড় এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তিন মাস ধরে ছুটিতে আছেন অসুস্থ থাকায়। এ দিকে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকরা তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একই উপজেলার আটিয়া ইউনিয়নের নিজতুলন্দর ব্লকের একাধিক কৃষক জানান, তাদের এলাকার উপসহকারী কর্মকর্তা দীর্ঘ ছয় মাসেও ফসলের মাঠে যাননি। এই নারী কর্মকর্তা বলেছেন, ‘প্রতি সপ্তাহেই তিনি কৃষক সমিতিতে আসেন।’ মাঠে কৃষি উপসহকারীদের না পেয়ে আটিয়া ইউনিয়ন এবং তারুন্দিয়া ইউপির কয়েকজন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত ধানের শীষ নিয়ে আসেন উপজেলা কৃষি অফিসে।
অন্য দিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ইনজুরির দরুন শীষ সাদা হয়ে গেছে। মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে এর প্রতিকারের পদক্ষেপ নেয়া হবে।’ কৃষি প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ এবং কৃষিবিপ্লবের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এবার সব উপজেলায়ই বোরো ধানের ফলন হয়েছিল ভালো। কিন্তু হঠাৎ গরম বাতাস ক্ষতি করেছে। এসব দুর্যোগ আর দেখা যায়নি। গবেষকরা আসছেন এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কৃষকদের ঋণ ও প্রণোদনা দেয়া হবে।’ মন্ত্রীর সফরকালে সরকারি কর্মকর্তারা ও দলীয় নেতারা তার সাথে ছিলেন।
নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহের বেশ কয়েকটি উপজেলায় হঠাৎ দমকা গরম হাওয়া নষ্ট করে দিয়েছে বোরো ধানের গজানো শীষ। ফলে ৪০ হাজারেরও বেশি কৃষক চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন। চলতি সপ্তাহেই এই এলাকায় বোরো ধান তোলার উৎসব হওয়ার কথা ছিল। হাওরাঞ্চলের একমাত্র ফসল বোরো ধান, কিন্তু ৪ এপ্রিল সন্ধ্যাবেলায় হঠাৎ করে কেন্দুয়া, আটপাড়া, বারহাট্টাসহ হাওর এলাকার ওপর দিয়ে প্রচণ্ড গরম বাতাস বয়ে যায়, সেই সাথে ঘণ্টাকালের দমকা হাওয়ায় ধানের শীষ শুকিয়ে গেছে। ফলে দরিদ্র কৃষকরা পড়েছেন চরম ক্ষতির মুখে। কৃষিপ্রধান দেশের গরিব মানুষের স্বার্থে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাসহ সব দায়িত্বশীল ব্যক্তি যথাযথ দায়িত্ববোধের পরিচয় দেবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।


আরো সংবাদ



premium cement