২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
চার বছর ধরে পাম্প হাউজ বন্ধ

অবিলম্বে সমাধান করুন

-

সিলেটের জকিগঞ্জে রহিমপুর খালের পাম্প হাউজ চার বছর ধরে চালু করা যাচ্ছে না প্রতিবেশী ভারত বাধা দেয়ায়। সহযোগী একটি পত্রিকা আরো জানিয়েছে, এই পাম্প হাউজ চালু করতে বাংলাদেশ-ভারত সমঝোতা স্মারক বা এমওইউ হওয়া উচিত বলে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) অভিমত। এ জন্য কমিশন প্রস্তাবও দিয়েছে। এ দিকে ভারতীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী শহরের শিল্পবর্জ্য ও চিকিৎসাবর্জ্যে আখাউড়ার একটি খাল দূষিত হয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিকারের উদ্দেশ্যে ভারতীয় ভূখণ্ডে বর্জ্যশোধনাগার বা ইটিপি স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তাব করেছে। জেআরসির সাম্প্রতিক এক বৈঠকে প্রস্তাবটি দেয়া হয়।
আলোচ্য পত্রিকার একই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সিইজিআইএস’র নির্বাহী পরিচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবহমান অভিন্ন নদী হবিগঞ্জের খোয়াই, কুমিল্লার গোমতী, ফেনীর মুহুরী, মৌলভীবাজারের মনুু এবং কুড়িগ্রামের ধরলা ও দুধকুমারের পানি উভয় দেশ ব্যবহারের ব্যাপারে চুক্তিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য দু’টি দেশ বিনিময় করেছে। চুক্তির আগে এসব নদীর পানি উত্তোলন ও ব্যবহারসহ ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২২ বছরের সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত বিনিময় করা হয়েছে। অবশ্য ভারতের কাছে প্রয়োজনীয় আরো কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে। এবার যৌথ নদী কমিশনের দু’দিনের বৈঠকের প্রথম দিনে গঙ্গার পানি চুক্তি নিয়ে আলোচনার কথা বলা হলেও এ সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। ২০২১ সালে জেআরসির বৈঠক উচ্চপর্যায়ে হওয়ার কথা।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাধায় চার বছর ধরে বন্ধ আছে সিলেটের জকিগঞ্জের রহিমপুর খালের পাম্প। অথচ কেবল ৫০ মিটার খনন করা হলেই চালু করা যায় পাম্প হাউজটি। অপর দিকে জানা যায়, অভিন্ন খালটির পানি ভারত উত্তোলন করছে ৪৯টি জায়গায় এবং অনেক পাম্প বসিয়ে। রহিমপুর এলাকার পাম্প হাউজ এবং এর সাথে গুরুত্বপূর্ণ কুশিয়ারা নদীর সংযোগকারী ‘ইনটেক চ্যানেল’ ‘আপার সুরমা কুশিয়ারা’ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। এর কাজ ২০০১ সালে শুরু হয়ে দীর্ঘ ১৫ বছরে শেষ করা হয়েছে। তখন খাল পুনরায় নির্মাণ এবং বাঁধ আবার তৈরি করা হলেও ইনটেক চ্যানেল নির্মাণ শেষ করা যায়নি। এই চ্যানেলের ৪১০ মিটারের মধ্যে ৩২৫ মিটারের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়েছিল। অবশিষ্ট কাজ ভারতের বাধার কারণে করা যায়নি। অন্য দিকে ১৫ বছর পার হয়ে যাওয়ায় ইনটেক চ্যানেল অসমাপ্ত রেখেই প্রকল্পটি সমাপ্ত করতে হয়েছে। এর পরও চার বছর পার হয়ে গেছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য ছিল ৫৩ হাজার ৮২০ হেক্টর এলাকার বন্যানিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন সুবিধাসহ ১০ হাজার ৬০০ হেক্টরের সেচসুবিধা নিশ্চিত করা। এ জন্য ১৪৬ কিলোমিটার বাঁধ, ৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার নিষ্কাশন খাল এবং ৫০ কিলোমিটার সেচখাল খনন করা হয়েছে। তবে সেচসুবিধার মাত্র অর্ধেকটা দেয়া গেছে। কারণ পাম্প হাউজের সাহায্যে আরো পাঁচ হাজার হেক্টর এলাকায় সেচ প্রকল্প চালু করা যেত, যা ভারতীয় আপত্তির মুখে সম্ভব হয়নি। কুশিয়ারার পানি দিয়ে এই সেচ দেয়ার কথা ছিল। এখন সংশ্লিষ্ট চ্যানেল নির্মাণ এবং নদীর পানি তোলার জন্য সমঝোতা চুক্তি প্রয়োজন ভারতের সাথে। পাউবো সূত্র জানিয়েছে, রহিমপুর খালের পাম্প হাউজের কাজ শেষ হলেও ভারতের বাধার দরুন তা চালু করা যায়নি। তাই সমঝোতা চুক্তি করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু ভারত এ বিষয়ে ‘তেমন আগ্রহী নয়’ বলে এখন জেআরসির মাধ্যমে প্রস্তাবটি দেয়া হয়েছে।
আমরা মনে করি, সমঝোতা চুক্তিসহ সম্ভাব্য সব উপায়ে রহিমপুর পাম্প হাউজ চালুর উদ্যোগ নিতে হবে যেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের অধীনে বন্যানিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচÑ তিনটি উদ্দেশ্যই পূরণ করা যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement