নির্দিষ্ট ব্যয় বরাদ্দে দূরের কথা, নির্ধারিত সময়ে উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন না করা বাংলাদেশে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার আরেক প্রমাণ, ঢাকা-সিলেট হাইওয়ের ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ। এই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের ভুলতায় (রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ) চার লেনের ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হতে পাঁচ বছর লেগে যাচ্ছে। ২০১৫ সালের জুন মাসে এটা শেষ করার কথা ছিল। প্রায় ২৪০ কোটি টাকার প্রকল্পটির খরচ বেড়ে ৩৫৩ কোটি ২৭ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। বর্ধিত মেয়াদে কাজ শেষ করার আশ্বাস সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) দিলেও পরিকল্পনা কমিশন এ ব্যাপারে সন্দিহান।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে বিশদ তুলে ধরে বলা হয়েছে, ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কের ২৫তম কিলোমিটার পয়েন্টে ঢাকা বাইপাস জাতীয় মহাসড়ক আড়াআড়িভাবে অতিক্রম করেছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দৈনিক গড়ে ১১ হাজার এবং বাইপাস সড়কে প্রতিদিন গড়ে আট হাজার যান চলাচল করে থাকে। এই বিপুল সংখ্যক যানবাহন ভুলতা বাজার এলাকা দিয়ে যাতায়াত করায় সৃষ্টি হচ্ছে মারাত্মক যানজট। তদুপরি, পূর্বাচল উপশহরে যাতায়াতের প্রয়োজনে যানজট আরো বাড়বে।
এই প্রেক্ষাপটে ভুলতায় চার লেন ফ্লাইওভার নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ২০১৩ সালে। যান চলাচল স্বাভাবিক মাত্রায় রেখে রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বিশেষ করে সিলেট বিভাগে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ প্রতিষ্ঠাই এই ফ্লাইওভারের লক্ষ্য। ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর একনেকে প্রকল্পের অনুমোদন দেয়ার পর ৩০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্পের খরচ ২৬৩ কোটি ৩২ লাখ টাকায় উন্নীত করে আবার অনুমোদন দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। সেই সাথে মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া হয় দুই বছর। এতেও সওজ কাজ শেষ করতে পারেনি। এ অবস্থায় ২০১৮ সালের জুনে একনেক থেকে ব্যয় বাড়িয়ে ৩৫৩ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং একই সাথে মেয়াদ আরো দুই বছর বৃদ্ধি করে প্রকল্প ‘সংশোধন’ করা হয়। তবুও ফ্লাইওভারের কাজ শেষ করা যায়নি। অবশেষে, আলোচ্য প্রকল্পের কাজের মেয়াদ আরো বাড়াতে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ‘আন্তঃব্যয় সমন্বয় এবং খাতওয়ারি অর্থনৈতিক কোড সংশোধন’-এর কথা বলা হয়েছে, যা স্বয়ং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ২৭ জানুয়ারি অনুমোদন দিয়েছেন। সওজ সূত্র জানায়, ওই ফ্লাইওভারের পেভমেন্ট প্রশস্ত করা এবং পুনরায় নির্মাণ বাবদ দুই কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় হ্রাস পেলেও ভ্যাট ও ট্যাক্সের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় এ খাতে খরচ মোটের ওপর সোয়া কোটি টাকার বেশি বেড়েছে। মূল ফ্লাইওভার নির্মাণে প্রায় ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে। তা ছাড়া, মার্কিং ও বৈদ্যুতিকীকরণ খাতে যথাক্রমে দুই লাখ ৬৬ হাজার ও দুই লাখ ৭৩ হাজার টাকা ব্যয় বেড়ে গেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য, ‘দুই বছরের এ প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে সাত বছর করা হয়েছে। তবুও কাজ কিছু বাকি রয়ে গেছে। প্রতি মাসে কাজের পরিমাণ গড়ে ১.১৪ শতাংশ। তাই কয়েক মাসের কাজ এখনো বাকি। আসলে তদারকি না থাকলে প্রকল্পের কাজে অগ্রগতি কমে যায়।’
যেকোনো অনিয়ম-অপচয়-অসততাই গর্হিত বিধায় পরিত্যাজ্য। সেখানে বাংলাদেশের মতো একটা উন্নয়নমুখী রাষ্ট্রে এগুলো আরো উদ্বেগজনক বিষয়। অথচ বিদেশী ঋণনির্ভর বহু প্রকল্পেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে এ দেশে। মনে রাখা চাই, উন্নয়ন পরিকল্পনা মানে, নিছক কল্পনা নয়। উন্নয়ন প্রকল্পের যথাযথ ও নিয়মিত তত্ত্বাবধান এবং সেই সাথে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ছাড়া দেশের প্রকৃত উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। উন্নয়ন শুধু ক্ষমতাসীনদের প্রচারণা ও বাগাড়ম্বরে সীমাবদ্ধ থাকলে চলে না। এর সুফল তৃণমূল পর্যায়ে পেতে হলে সর্বস্তরে সুশাসন থাকা জরুরি। তা না হলে ‘ফ্লাইওভার’ স্টাইলের উন্নয়ন প্রকল্পে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হবে, কিন্তু বাস্তবে দেশ উন্নত হবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা