২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

অভিযোগকে গুরুত্ব দিন

-

বাংলাদেশে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম কয়লাচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের ‘গুচ্ছ’ নির্মিত হচ্ছে। বরগুনা-পটুয়াখালী সমুদ্র উপকূলের ৫০ কিলোমিটারজুড়ে এগুলো স্থাপিত হতে যাচ্ছে। একটি নতুন গবেষণার ভিত্তিতে সম্প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছেÑ এর ফলে রোগব্যাধির ঝুঁকি বাড়বে। ফিনল্যান্ডের একটি গবেষণা সংগঠন এই অভিযোগ করেছে। এর নাম সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার। তাদের বক্তব্য, বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে যে ৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা রয়েছে, সেগুলো বিশ্বের বৃহত্তম পরিবেশ দূষণ ‘হটস্পট’-এর জন্ম দেবে।
ফিনিশ প্রতিষ্ঠানটির গবেষণার সূত্রে পত্রপত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট দূষণকারী পদার্থগুলো হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কার্যকারিতার ক্ষতি করবে, যাতে হাঁপানি, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের মতো ক্রনিক ব্যাধি ছাড়াও ‘কোভিড-১৯’ রোগের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধিজনিত ঝুঁকিতে পড়বে হাজার হাজার মানুষ। ৫ মে একটি অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে উল্লিখিত গবেষণাকর্মের লিড অ্যানালিস্ট লরি মিল্লিভির্তা প্রসঙ্গক্রমে বলেছেন, কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুচ্ছ থেকে সৃষ্ট, পরিবেশ দূষণের প্রভাব শুধু বরিশাল নয়, এ দেশের ঢাকা ও অন্যান্য প্রধান নগরীতে বসবাসরত মানুষের ওপরেও পড়বে। তাদের মতে, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বছরে ৬০০-৮০০ কেজি পারদ এবং ছয় হাজার টন পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) নির্গত হবে। এই প্রেক্ষাপটে ৩০ বছরের মেয়াদকালে এর ফলে ১৮ হাজার থেকে ৩৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। অন্যান্য ঝুঁকির মধ্যে আছে হাঁপানি রোগীদের ৭১ হাজার বার জরুরি কক্ষে গমন, শিশুদের মাঝে ১৫ হাজার নতুন হাঁপানি রোগী, নির্ধারিত সময়ের আগেই ৩৯ হাজার শিশুর জন্ম, অসুস্থতাজনিত ছুটির কারণে ২৬ মিলিয়ন কর্মদিবস হারানো এবং ফুসফুসের ক্রনিক রোগব্যাধি, ডায়াবেটিস ও স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে সংশ্লিষ্ট রোগীদের সর্বমোট ৫৭ হাজার বছর প্রতিবন্ধী জীবন কাটানো।
চীনের এক জরিপের বরাত দিয়ে আরো জানানো হয় যে, ‘কোভিড-১৯’ রোগে আক্রান্ত হলে উচ্চ রক্তচাপ এবং শ্বাসতন্ত্র ও হৃৎপিণ্ডের রোগ দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। বায়ুদূষণের সাথে ভাইরাসের বিস্তার সম্পর্কিত বলে কয়েকটি গবেষণাকর্মের সূত্রে সে অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে। আলোচ্য সংবাদসম্মেলনের আয়োজক ‘বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’ মনে করে, দূষণ সম্পর্কিত গবেষণায় বোঝা যায়Ñ করোনাভাইরাস এত দূরে এত দ্রুত কী করে সংক্রমিত হয়েছে। ফিনল্যান্ডের প্রতিষ্ঠানটির গবেষণায় জানানো হয়, কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের পারদের এক-তৃতীয়াংশ ১৫ শ’ বর্গকিলোমিটার এলাকার মাটি ও মিঠা পানিতে জমে থাকার কথা। এক হেক্টরে মাত্র ১২৫ মিলিগ্রাম পারদ এক বছরে জমলেই পানির মাছ দূষণের শিকার হতে পারে। দূষণের আশঙ্কাপূর্ণ এলাকাতে অন্তত ৫টি অভয়ারণ্য রয়েছে ইলিশ মাছের। এ দিকে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট জানায়, কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে ৩০ লাখ মানুষ ইলিশ উৎপাদনে জড়িত। ওই সংবাদ সম্মেলনে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, এ বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবিকা হারিয়ে যাবে দূষণের দরুন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাণিবিজ্ঞানীর মতে, পারদ দূষণের শিকার হয়ে মাছ প্রজনন ক্ষমতা হারাতে পারে। পারদ শস্যের জন্যও ক্ষতিকর বলে গবেষণাকর্মে উদ্বেগ ব্যক্ত করা হয়েছে।
দেশের উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ অপরিহার্য। আবার এটাও অনস্বীকার্য, উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস কিংবা মানুষ, মৎস্য সম্পদ, শস্য প্রভৃতির বিপদ ডেকে আনা অন্যায়। যথাসাধ্য, প্রকৃতিকে অক্ষুণœ এবং দূষণের মাত্রা সর্বনিম্ন পর্যায়ে রেখে উন্নয়ন অবকাঠামোর প্রসার নিশ্চিত করতে হবে। তাই দেশবাসীর প্রত্যাশা, কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যাপারে আনীত অভিযোগ ও আশঙ্কার যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement
ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে উত্তাল পূর্ব আফ্রিকায় প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা, কমপক্ষে ১৫৫ জনের প্রাণহানি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর ভয়াবহ দুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন উগ্র ইসরাইলি মন্ত্রী শেরে বাংলার সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন হাত কাটা বন্দীর নেতানিয়াহুর সমালোচনা ইসরাইলের আলটিমেটাম, যা বলল হামাস রাশিয়ার প্রতি চীনের সমর্থনের বিরুদ্ধে ব্লিংকেনের হুঁশিয়ারি ইতিহাস গড়া জয় পেল পাঞ্জাব শিরোপার আরো কাছে রিয়াল মাদ্রিদ গাজানীতির প্রতিবাদে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদত্যাগ

সকল