২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সীমা হত্যা বাড়ছে

জোরালো প্রতিবাদ নেই

-

ভারত সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা হলেও হত্যার হার কমছে না। দুটি প্রতিবেশী বন্ধু দেশের নাগরিকদের প্রতি পরস্পর সম্মান ও সম্প্রীতি বজায় থাকার বিষয় প্রত্যাশা করা হলেও একতরফাভাবে বাংলাদেশীরা সীমান্তে হত্যার শিকার হচ্ছেন। এই হত্যা অনেক সময় নৃশংসতা নিষ্ঠুরতার সাথে ভারতের সীমান্তরক্ষীরা করছে। এর সাথে আছে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের নির্যাতন নিপীড়ন এবং তুচ্ছতাচ্ছিল্যের ঘটনাও। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে ভারতের ভেতর থেকে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের এভাবে হত্যা করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হলেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব ব্যাপারে খুব একটা উচ্চবাচ্য নেই। হত্যার শিকার পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশের প্রশাসনের মনোভাব দেখে এই হত্যার প্রতিকার চাওয়া থেকে বিরত হন। অনেকে হয়রানি হওয়ার আশঙ্কা থেকেও পরিবারের হারানো সদস্যের হত্যার বিচার চাওয়া থেকে বিরত থাকেন বলে সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে।
সহযোগী একটি দৈনিকের খবরে জানা যাচ্ছে, মানবাধিকার সংস্থার হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ১৮ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আরো দু’জন বিএসএফের নির্যাতনে মারা গেছেন। বিএসএফ কিছু হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে নৃশংস কায়দায়। চলতি বছরের ১০ মে এমন এক পৈশাচিক ঘটনা তারা সাতক্ষীরার কুশখালী সীমান্তে ঘটায়। কবিরুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশীকে পায়ুপথ ও মুখে পেট্রল ঢেলে হত্যা করা হয়। ২৭ মে নওগাঁর সাপাহার সীমান্তে আজিম উদ্দিন নামের এক রাখালের দুই হাতের দশ আঙুরের নখ উঠিয়ে নেয়া হয়। এর আগে আমরা দেখেছি উলঙ্গ করে তেল মেখে বাংলাদেশীদের নির্যাতন করতে। ফেলানীকে হত্যা করে লাশ সীমান্ত কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। বন্ধু প্রতিবেশীদের ওপর নৃশংসতা কেন করা হচ্ছে এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হচ্ছে না।
এর মধ্যে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শীর্ষ প্রধানদের বৈঠক হচ্ছে নিয়মিত। সেখানে বিএসএফ প্রধান রীতিমতো বলে যাচ্ছেন সীমান্তে হত্যা বন্ধ করা হবে। ব্যবহার করা হবে না প্রাণঘাতী অস্ত্র। এ ধরনের অঙ্গীকার আর প্রতিশ্রুতির কোনো মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। সর্বশেষ গত ১২-১৫ জুলাই ঢাকার পিলখানায় উভয় দেশের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক শেষে বিএসএফের শীর্ষ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে না; অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু হচ্ছে। বিএসএফ প্রকাশ্যে পিটিয়ে গুলি করে বাংলাদেশীদের হত্যা করলেও সেটা বাহিনীপ্রধানের ভাষায় ‘অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু’। এভাবে সত্য এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ভারতীয়দের এখন কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। এ অবস্থায় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে বলেছিলেন, সীমান্তে হত্যা কমে আসছে। তার হিসাবে ২০১৮ সালে মাত্র তিনজন প্রাণ হারিয়েছে। বাস্তবে এ সংখ্যা ছিল ১৪। সীমান্তে বিএসএফ যখন নিষ্ঠুরতা বাড়িয়ে দিয়েছে এ অবস্থার প্রতিবাদ জানানোর বদলে হত্যার সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের কী স্বার্থ থাকতে পারে আমাদের জানা নেই।
রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিকেরা সমমর্যাদা পাচ্ছে না। ভারত বন্ধুত্বের যে অঙ্গীকার করে যাচ্ছে তার সাথে সীমান্তে আচরণের কোনো মিল নেই। এ অবস্থায় সীমান্ত হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রাখলে বাংলাদেশের জন্য কোনো লাভ হতে পারে না। খবরে প্রকাশ হয়েছে, সীমান্তে হত্যার শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা হত্যার প্রতিকার চাওয়ার সাহস হারিয়ে ফেলছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব ব্যাপারে সহযোগিতামূলক সম্পর্কের অভাব দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় মানবাধিকার কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মন্তব্য করে বলা হচ্ছে, নিজ দেশের নাগরিক হত্যা নিয়ে বাংলাদেশের যতটা জোরালো প্রতিবাদ জানানো উচিত ছিল, তাদের প্রতিবাদ ততটা জোরালো নয়। নিজের নাগরিকদের হত্যার প্রতিবাদ করতে সরকারের এমন কৃপণতা কেন, এর জবাব কে দেবে?

 


আরো সংবাদ



premium cement