২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


২৩৫০ স্কুল-কলেজ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত

যথাশিগগির প্রতিকারের পদক্ষেপ নিন

-

দেশে বন্যার সূচনা হয়েছে কয়েক সপ্তাহ আগে। বহু জেলা প্রধানত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকার বানের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। গত কয়েক দিনে কিছু এলাকায় পানি নামতে থাকলেও এখনো বিস্তীর্ণ জনপদ বানের পানিতে সয়লাব হয়ে আছে। সেই সাথে বাড়ছে ডায়রিয়া ও ভাঙনসহ নানাবিধ দুর্ভোগ। তবে শত শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবার বন্যার কবলে পড়ায় এবং এখন পর্যন্ত বহু প্রতিষ্ঠানের ভবন ও অঙ্গন থেকে পানি সরে না যাওয়ায় জনমনে সবিশেষ উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। সামনের কয়েক দিনে যদি এ সমস্যার অবসান না হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট স্কুল-কলেজের ভবন বা অবকাঠামোই শুধু নয়, অসংখ্য শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে জানানো হয়, চলমান বন্যায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৩২ কোটি টাকার। বহু প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সে হিসাব নিরূপণের কাজ সম্পন্ন হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দুই হাজার ৩৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এক হাজার ৫৫৭টি মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানায়, গত সোমবার পর্যন্ত ১২টি জেলায় শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ক্ষতির শিকার হয়েছে চার হাজার ৩৩১টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৩০টি সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত। আলোচ্য প্রতিবেদনে জামালপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনো বন্যার পানি থাকার ছবি দেয়া হয়েছে। এর থেকে বোঝা যায়, বানের পানি নামছে খুব ধীরে। বলা বাহুল্য, উজান থেকে পানি ক্রমেই কমতে থাকলেও ভাটিতে নতুন নতুন এলাকা বন্যায় তলিয়ে যায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা ও অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পত্রপত্রিকার খবর, ক্ষতিগ্রস্ত বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে ঢলের পানি ঢুকে ক্লাস-পরীক্ষাসহ যাবতীয় শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুকপানি ওঠায় আসবাব, বইপত্র, ফাইল ও অন্যান্য উপকরণ নষ্ট হয়ে গেছে। কোথাও বা স্কুল-কলেজকে বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কখন আবার চালু হবে তা অনিশ্চিত। এ দিকে, এখন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই একাডেমিক ক্যালেন্ডার ঘোষণা করা হয়। নির্ধারিত সময়ে সিলেবাস শেষ করা ও পরীক্ষা নেয়া, নির্দিষ্টসংখ্যক ক্লাস নেয়া প্রভৃতি বিষয়ে বাধ্যবাধকতার কারণে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিপাকে পড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা শুরু করার দিন। বন্যার দরুন অনেক জায়গায় এই পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয় বলে ‘প্রয়োজনে’ পরে পরীক্ষা নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে।
প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৯টি জেলা থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত কুড়িগ্রাম জেলায় ২২৪টি বিদ্যালয় বন্যাকবলিত। এরপরই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত জেলা গাইবান্ধায় শুধু সুন্দরগঞ্জ উপজেলাতেই ৪৫টি বিদ্যালয় বন্যার পানিতে ক্ষতির কবলে পড়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রংপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে। এ দু’টি অঞ্চলে যথাক্রমে ৫২৯ ও ৫৭০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে এবারের বন্যায়। এ ছাড়া অঞ্চলওয়ারি হিসাবে সিলেটে ২৫২, রাজশাহীতে ১৩৫, চট্টগ্রামে ৩৬ এবং ঢাকায় ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আমরা মনে করি, মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্কুল-কলেজ-মাদরাসাকে বন্যার ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষয়ক্ষতি দূর করে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা জরুরি। এ জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা আবশ্যক।


আরো সংবাদ



premium cement