এই সরকারের শেষ সময়ে নিছক রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন করে আরো তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, নতুন ব্যাংকের আর প্রয়োজন নেই। এমনকি অর্থমন্ত্রীও একাধিকবার বলেছিলেন, নতুন ব্যাংকের কোনো প্রয়োজন নেই। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। এখন আর ব্যাংকের অনুমতি দেয়া ঠিক হবে না।’ কিন্তু তিনি তার অবস্থানে অটুট থাকতে পারেননি; তদুপরি নতুন এসব ব্যাংকের উদ্যোক্তা বা নেপথ্যে যারা আছেন; তারা সবাই ক্ষমতাসীন মহলের খুবই ঘনিষ্ঠজন। এর আগে একই প্রক্রিয়ায় বেসরকারি খাতে ২০১৩ সালে নতুন ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল।
২০১০ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সমীায় বলা হয়েছিল, ‘দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে আর কোনো নতুন ব্যাংকের প্রয়োজন নেই।’ দেশের ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদেরাও বলছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলো ভালো ব্যবসায় করতে পারে না। ব্যাংকগুলোর প্রায় সব ক’টির অবস্থাই এখন খারাপ।
এসব ব্যাংক কার্যক্রম চালকেরা পাঁচ বছরের মাথায় বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণের কবলে পড়েছে। এমনকি, ফারমার্স ব্যাংক আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে না পেরে ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের আস্থার সঙ্কট তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত নতুন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪২০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ৭১৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে এক হাজার ৭০৭ কোটি টাকা।
রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমতি দেয়া এসব ব্যাংক দেশের জন্য শুধু বোঝা নয়, আমানতকারীদের জন্য বড় ধরনের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজন না থাকলেও নিয়মনীতি উপেক্ষা করে এভাবে ব্যাংকের অনুমতি দেয়ার ফলে দেশের ব্যাংকিং খাতে মারাত্মক অস্থিরতা চলছে। ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর মানুষের বিশ্বাস নষ্ট হচ্ছে। নতুন এসব ব্যাংক থেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মালিকেরা নানাভাবে বিপুল অর্থ ঋণ নিচ্ছেন। সর্বশেষ নতুন যে তিনটি ব্যাংক অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, এর সবগুলোর মালিক ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সাথে জড়িত ব্যক্তি; যার মধ্যে মন্ত্রী এবং এমপিও রয়েছেন।
আমরা মনে করি, দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নতুন ব্যাংকের মাধ্যমে সঙ্কট সৃষ্টি করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না, বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত, ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ার প্রক্রিয়া থেকে সর্বোতভাবে দূরে থাকা। অর্থমন্ত্রীও নতুন ব্যাংক না দেয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন বলে আমরা আশা করি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা