১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যেন ব্যবহার না হয়

-

বাংলাদেশে এখন নানাভাবে মানুষের বাকস্বাধীনতার সীমা টানা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমগুলো সেলফ সেন্সরশিপের মধ্যে কাজ করছে। এর মধ্যে সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইটগুলো কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে যাচ্ছে বলে খবর প্রকাশ হয়েছে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে মনিটরিং সেল গঠন করা হচ্ছে। বিপুল অর্থ ব্যয়ে বিদেশ থেকে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি আমদানি করা হচ্ছে। সরকারের দৃষ্টিতে আপত্তিকর, ক্ষতিকর, বেআইনি লেখা বা পোস্ট ফিল্টারও বন্ধ করতে ডিভাইস বসানো হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন মত প্রকাশের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ফেসবুকে মানুষ তার মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করছে। সরকারের সমালোচনামূলক নানা ধরনের লেখালেখি ও মন্তব্য প্রকাশ হচ্ছে, যা সরকারের জন্য অনেক ক্ষেত্রে বিব্রতকর হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া, সম্প্রতি কোটাবিরোধী আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে কিশোরদের যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল; তার প্রধান নিয়ামকশক্তি ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে যাতে সরকারবিরোধী মতামত নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সে কারণেও নজরদারি বাড়ানোর এসব উদ্যোগ নেয়া হতে পারে।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া ও চরিত্রহননমূলক নানা ধরনের প্রচারণা চালানো হয়ে থাকে। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে নানা ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড চলে। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে সমাজে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে এমন কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে এ ধরনের প্রচারণা নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এমন উদ্যোগ নেয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়, বরং এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে।
বাংলাদেশে এমন উদ্যোগের কিছু বিপজ্জনক দিক রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার নামে বিরোধী রাজনৈতিক মতাবলম্বীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। সরকারের সমালোচনাকেও অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা শেষ পর্যন্ত মানুষের বাকস্বাধীনতার ওপর আঘাত হানে। আগামী নির্বাচনের আগে মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার রাজনৈতিক বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটাতে পারে, এমনকি সরকারের কঠোর সমালোচনাও করতে পারে। কিন্তু এ কারণে যদি কারো বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা আশা করব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের নামে ভিন্নমতাবলম্বীরা যাতে কোনোভাবেই হয়রানির মুখে না পড়ে।

 


আরো সংবাদ



premium cement