৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


গরুর প্রজনন দেখতে বিদেশ যাওয়া হচ্ছেনা সরকারি কর্মকর্তাদের

গরুর প্রজনন দেখতে বিদেশ যাওয়া হচ্ছেনা সরকারি কর্মকর্তাদের - ছবি : সংগৃহীত

মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম জানিয়েছেন, গরুর কৃত্রিম প্রজনন সম্পর্কে জ্ঞান আহরণে বিদেশ সফরের যে প্রস্তাব গেছে সেটি একনেকের বৈঠকের আগেই তারা বাতিল করে দেবেন।

‘প্রস্তাবটি আমার দায়িত্ব নেবার আগেই গিয়েছিলো। আমি ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছি সংশ্লিষ্টদের সাথে এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এ ধরণের বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তাব আমরাই বাতিল করে দেবো,’ বলছিলেন তিনি।

কিন্তু কিসের ভিত্তিতে গরুর প্রজনন দেখতে জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও কানাডা সফরের জন্য এতো কর্মকর্তার নাম প্রস্তাব হলো, বা এ ধরণের প্রস্তাবনা তৈরির ক্ষেত্রে আসলে কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা প্রজেক্ট তৈরি করেন তারা অনেক সময় প্রজেক্টের সাথে জড়িতদের প্রশিক্ষণের জন্য এ ধরণের প্রস্তাব করেন।

‘যদিও অনেক সময়ই তা অনুমোদন পায় না। আর করোনার এই সময়ে এগুলোকে কোনো ভাবেই আমরা অনুমোদন দিতে পারি না,’ বলছিলেন করিম।

যদিও বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তাদের এ ধরণের বিদেশ সফরের প্রস্তাবনা বা বিদেশ সফরের ঘটনা প্রায়শই আলোচনায় আসে ও তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়ে থাকে।

গরুর প্রজনন জ্ঞান অর্জনে এসব কর্মকর্তারা শেষ পর্যন্ত ওই চারটি দেশে যেতে পারলে তাদের জন্য সরকারের প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয় হতো।

এর আগে গত বছর ডিসেম্বরে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬ জন কর্মকর্তার পুকুর খনন দেখার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রস্তাব একনেকে পাস হলে তা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিলো।

তখন সরকারি অর্থে এ ধরণের বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তাব নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান।

ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘পুকুর খনন শিখতে আমরা উগান্ডায় যাচ্ছি কেন?’


পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান বিবিসি বাংলাকে বলেন, এবারের গরুর প্রজনন বিষয় বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তাব তার কাছে যায়নি তবে মহিষ নিয়ে একটি প্রস্তাব তিনি দেখেছেন।

‘আমরা বৃহস্পতিবার সচিবদের নিয়ে বসবো। করোনার এই সময়ে কৃচ্ছতা সাধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। অপ্রয়োজনীয় সব ব্যয় বন্ধ করা হবে’।

তিনি বলেন, ‘নানা ছুতোয় বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা আছে এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই তবে আমরা বৃহস্পতিবার এগুলো নিয়ে আলোচনা করবো’।

‘অনেক সময় প্রশিক্ষণের জন্য যাওয়ার দরকার পড়ে কিন্তু কোনটা কোন ধরণের কাজ এবং সেটার প্রয়োজন কতটা সেটাও তো দেখতে হবে। সব বিষয় আমাদের নজরে আছে এটা আমি নিশ্চিত করতে পারি’।

কর্মকর্তারা বলছেন, এসব বিদেশ সফর আগেও হতো কিন্তু এখন ফাঁস হয়ে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

গত বছর ডিসেম্বরে বোয়িংয়ের একটি বিমান ডেলিভারি আনতে বাংলাদেশের ৪৫ জন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে তুমুল হাস্যরসের জন্ম দিলেও শেষ পর্যন্ত ওই সফর আর বাতিল হয়নি।

এর আগেও একটি ক্যামেরা কিনতে তিনজনের বিদেশ যাওয়া, নলকূপ খনন শিখতে একাধিক কর্মকর্তার বিদেশে সফর নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সমালোচনা তৈরি হয়েছে।

কিভাবে এসব বিদেশ সফর ঠিক হয়
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলছেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতায় নানা ধরণের প্রকল্প হয়।

‘এসব প্রকল্পে বিশেষ করে বিদেশি অর্থায়ন থাকলে কর্মকর্তারা তাতে প্রশিক্ষণ খাতে বরাদ্দ রাখার চেষ্টা করেন। অনেক সময় অনেক প্রকল্পে বেসরকারি কোম্পানির অর্থ সহায়তা নেয়ার উদাহরণও আছে’।

জার্মানি থেকে একটি ক্যামেরা কিনতে তিনজন কর্মকর্তার বিদেশে যাওয়ার ঘটনায় জানা গেছে যে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিই তাদের অর্থে ওই কর্মকর্তাদের ওই সফরের আয়োজন করেছিলো।

পরিকল্পনা মন্ত্রী মান্নান বলছেন টেকনিক্যাল বা বিশেষ দক্ষতার জন্য অনেক সময় প্রশিক্ষণকে উৎসাহিত করা হয় বা এর দরকারও আছে।

কিন্তু সবসময় সে ধরণের বিবেচনা থেকে এসব প্রস্তাব যে আসেনা সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে, বলছিলেন তিনি।

মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম বলছেন, প্রকল্প তৈরির সময় এসব প্রস্তাবগুলো আসলেও তারা এসব প্রস্তাবকে অনুমোদন করবেন না।

শুধুই সরকারি কর্মকর্তারাই যান ?
গত বছর ময়মনসিংহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আটজন শিক্ষক ও কর্মকর্তার লিফট কেনার জন্য স্পেন ও সুইজারল্যান্ড সফরের ঘটনায় তুমুল শোরগোল হয়েছে।

পরে সমালোচনার মুখে উপাচার্য নিজে তার নাম প্রত্যাহার করে নেন।

আবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণের আরেকটি ঘটনা বেশি আলোচনার জন্ম দেয় গত বছরের জুলাইয়ে।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ও মহাকাশ বিষয়ক সংস্থা নাসা'র আয়োজিত এক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়।

তাদের পুরস্কৃত করতে নাসার পক্ষ থেকে ফ্লোরিডায় আমন্ত্রণ জানানো হয় দলটিকে।

কিন্তু ভিসা জটিলতায় বিজয়ী দলের সদস্যরা যেতে না পারলেও তাদের সহযোগী হিসেবে যাদের যাওয়ার কথা ছিল, সেই সরকারি কর্মকর্তারা শেষপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করে আসেন সরকারি খরচে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement