সাড়ে তিন মাস সাগরে ভেসে ইন্দোনেশিয়ায় ৮১ রোহিঙ্গা
- উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা
- ০৫ জুন ২০২১, ১৮:১৪, আপডেট: ০৬ জুন ২০২১, ০৯:৪৮
বাংলাদেশ থেকে সমুদ্র পথে পাড়ি দিয়ে ১০০ দিনের বেশি পানিতে ভেসে শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের ইদামান দ্বীপে পৌঁছেছে ৮১ রোহিঙ্গা। এর আগে একটি ইঞ্জিলচালিত নৌকায় এই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে নৌপথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। পরে ভারতে পৌঁছায়। ভারতীয় কোস্টগার্ড তাদেরকে খাবার ও পানীয় দিয়ে ফেরত পাঠায়। তাদেরকে ফের বাংলাদেশেও গ্রহণ করা হয়নি। এই রোহিঙ্গা দলটি নৌকায় মালয়েশিয়ায় ঢোকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এভাবে তিন মাসের বেশি সময় সাগরে ভাসার পর শেষ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে পৌঁছায়। দলটিতে শুরুতে ৯০ জন সদস্য ছিল। বাকি নয়জন নৌকায় মারা যান। এর মধ্যে আটজনের লাশ উদ্ধার করে ভারতীয় কোস্টগার্ড।
শেষ পর্যন্ত ইন্দোনিয়ায় তারা তীরে উঠার সুযোগ পেলেও দেশটির পুলিশ তাদেরকে ফেরত পাঠানোর কথা বলেছে ওই নৌকাতেই। শুক্রবারই পুলিশ তাদেরকে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে। অবশ্য দেশটির সরকারের এ ব্যাপারে শনিবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর কথা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার আশায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজার থেকে নৌকায় চড়ে রওনা দেয় ৯০ রোহিঙ্গার দলটি। তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। পথে নয়জনের মৃত্যু হয় নৌকায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে রোহিঙ্গা সঙ্কট পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আরাকান প্রজেক্টের পরিচালক ক্রিস লিউয়া বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের ইদামান দ্বীপে ৮১ রোহিঙ্গা পৌঁছেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত তারা পুরোপুরি নিরাপদে আছে। আশা করি, তাদের আবার সাগরে ঠেলে দেয়া হবে না।’
ইন্দোনেশিয়ায় তাদের আশ্রয় দেয়া হবে কি না, এ বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি জাকার্তা। তবে শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার ইদামান দ্বীপের স্থানীয় পুলিশ তাদেরকে নৌকায় ফেতর পাঠাতে চেয়েছে। কিন্তু শনিবার এ ব্যাপারে দেশটির সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর কথা রয়েছে।
কক্সবাজার থেকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রওনা দেয়ার চার দিন পর নৌকাটির ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ওই অবস্থায় প্রায় দুই সপ্তাহ খাবার ও বিশুদ্ধ পানি ছাড়াই সাগরে ভেসে ছিল আরোহীরা। বেশির ভাগ আরোহী কোনোরকমে বেঁচে থাকলেও মারা যায় আটজন।
আন্দামান সাগরে হারিয়ে যাওয়ার পর নৌকাটির যাত্রীদের নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিল জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। এরপর ওই শরণার্থীদের সাহায্য করতে ভারতীয় কোস্টগার্ডের দু’টি জাহাজ আন্দামান সাগরে পাঠানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আন্দামান সাগরেই ভাসমান নৌকা থেকে ৮১ রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। নৌকা থেকে আটজন রোহিঙ্গার লাশ পায় ভারতীয় কোস্টগার্ড।
জীবিতদের খাদ্য, ওষুধ, বস্ত্রসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা দেয়া হলেও ভারতে নামার অনুমতি দেয়া হয়নি। তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে ওই সময় ঢাকার সাথে আলোচনার কথা জানিয়েছিল নয়াদিল্লি। জবাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারেই ফেরত পাঠানো উচিত। তাদের আশ্রয় দিতে বাধ্য নয় বাংলাদেশ সরকার। তিনি আরো বলেছিলেন, ‘রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক নয়। তারা মিয়ানমারের নাগরিক। যে জায়গা থেকে এই ৮১ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা থেকে এক হাজার ৭০০ কিলোমিটার দূরে।’
এরপর তাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য গত তিন মাসে ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও মালয়েশিয়ার সরকারকে অসংখ্যবার অনুরোধ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও তাদের স্বজনরা।
বৌদ্ধ-অধ্যুষিত মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী। রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার এ জনগোষ্ঠীর নেই নাগরিকত্ব।
ভয়াবহ সেনা নিপীড়নের মুখে পালিয়ে, সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। তাদের ঠাঁই হয়েছে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে। এ অবস্থায় উন্নত জীবনের লোভ দেখিয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয়রত রোহিঙ্গাদের গোপনে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর চেষ্টা করে মানব পাচারকারীরা।
সূত্র : আল জাজিরা