২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বিদ্যে বোঝাই বাবু মশাই

-

জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে যারা সফলতার স্বর্ণশিখরে পৌঁছে যান, জীবনের অন্তিম সময়ে তাদের আক্ষেপ প্রকাশ করতে আমরা দেখেছি। তাঁরা বলেছেন তাঁরা কিছুই অর্জন করতে পারেননি। সমুদ্রের তলদেশে গিয়ে মুক্তা আহরণ করা তো দূরের কথা, তারা সমুদ্রতটে কেবল ঝিনুক কুড়িয়েছেন। অথচ তাঁদের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় মানব সমাজ সমৃদ্ধ হয়েছে। আমরা তাদের সাহায্য নিয়ে অনেক দূর পথ এগিয়ে এসেছি। দেশ উন্নতি পেয়েছে। সমাজ উন্নতি পেয়েছে।
এর বিপরীত চিত্র আমরা সমাজে দেখতে পাই। যেমনÑ একটা ছেলে দু’পাতা কবিতা লিখেছে কিংবা অধ্যাপক হয়েছে বা ডাক্তার হয়েছে বা কলেজ-ইউনিভার্সিটির সিঁড়ি টপকে আসতে পেরেছে। তখন তাদের কারো কারো মনের মধ্যে এই ভাব জেগে উঠেছে ‘মুই কী হনুরে’। এরা আসলে জানে অর্ধেক। অর্ধেক জানা লোক ভয়ঙ্কর।
তাদের এই ধারণা যে কত ক্ষতিকর তা নিজের জন্য হোক বা সমাজের জন্য হোক। সবার জন্যই ক্ষতি। বিস্ময়ের বিষয়, এ ক্ষতি তারা বোঝে না।
এ অবস্থার কিছু খণ্ডচিত্র আঁকার চেষ্টা করছি। যা আমার নিজের জীবনেই ঘটেছে। কলেজ শিক্ষার শেষে আমি দাড়ি ছেড়ে দিয়েছিলাম। আর চেহারাটা হয়ে উঠেছিল একেবারে নিরেট মোল্লাদের মতো। তখন পড়াশোনা করে চলেছি দিন-রাত, একেবারে পাগলের মতো অবস্থা তখন। যে অবস্থার জের এখনো বয়ে চলেছি। বেশ বাশের যতœ নিতে পারি না।
আমি শিলিগুড়ি থেকে ফিরছি কোনো পত্র-পত্রিকা কিনতে পারিনি। অথচ বই ছাড়া আমি এক মিনিটও কাটাতে পারি না। ট্রেনে বসে আছি। আমার সামনে বসে আছে কয়েকজন ছেলে। তারা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরছে। এরকম ছেলে দেখলে আমার দারুণ অনুরাগ সৃষ্টি হয় মনে। আমি নিজের অধমবোধের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসি তখন। খোলাখুলি মেশার আকাক্সক্ষা জেগে উঠে হৃদয়ে।
জোর করে তাদের সাথে আলোচনা করতে গিয়ে বারবার হোঁচট খাচ্ছিলাম। ছেলেরা হাসাহাসি করছে। তাদের মধ্যে একজনের হাতে একটি ইংরেজি সাইন্স জার্নাল। পড়ছে না অনেকক্ষণ থেকে। সময় কাটে না আমার। বেহায়া হয়ে হাত বাড়ালাম সেই জার্নালটির জন্য। জার্নালটা পেলাম অনেকটা নতজানু হয়েই। জানি এই জার্নাল পড়া আমার পক্ষে কষ্টকর হবে। তার পরও পড়তে লাগলাম। সাত রাজার ধন হাতে চলে এলো জার্নালটি পড়তে পড়তে। পড়তে পড়তে দেখলাম ধ দিয়ে বীজগণিতের সূত্র লেখা আছে। সে সূত্রটি মাননির্ণয়ের। এ একেবারে অজানা সূত্র আমার কাছে। আমি উতল হয়ে তাদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলাম, ‘আরে ধ দিয়ে যে সূত্র হতে পারে জানা ছিল না। আমার এই জোর আবিষ্কারের আনন্দ বলে ওঠায় তারা হকচকিয়ে গেছে। তাদের মধ্যে একজন বলল, ধ দিয়ে কোনো সূত্র হয়? আপনি কি বলছেন? আমি বললাম সে আমার অজানা ছিল বাবা। তোমাদের এই জার্নালের পাতায় তো দেখলাম। দেখলাম তারা বেশ ঘাবড়ে গেছে। আমি আর কিছু বললাম না।
আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এই খণ্ডচিত্রটি মনে হয় আমাদের মুসলমান সমাজে সর্বত্রই ছড়িয়ে আছে। সেই ‘বিদ্যে বোঝায় বাবু মশাই’ কবিতাটির এই খণ্ডচিত্রের সাথে বেশ মানানসই। আত্মপরস্তির মধ্যে ডুবে থাকা। আমাদের পৎবধস ড়ভ ংড়পরঃু-দের অবস্থাটা এরকম। ঈশান কোণে মেঘ দেখলে এরা ভয়ানক ঘাবড়ে যায়। মৃত্যুর আতঙ্কে থর থর করে কাঁপতে থাকে।
এরা গধঃয-এ গ.ঝপ. পাস করেও ধ দিয়ে সূত্র হতে পারে এই ধারণা করতে পারে না। ছাত্রদের কাছে এমন প্রশ্ন এলে এরা ঘাবড়ে যায়। থর থর করে কাঁপতে থাকে। এরা আবার নিজেকে ঞযরহশ ঞধহশ মনে করে। আর সবাই মনে করে ভড়ষষড়বিৎ.
ফেসবুকে এসে আমার জীবনে দু’টি ঘটে যাওয়ার ঘটনার কথা বলি। ফেসবুকে এসে নতুন আমি ভৎরবহফ ৎবয়ঁবংঃ পাঠাতে থাকি। দু’জনের ক্ষেত্রে এ কি রকম আশ্চর্য ঘটনা ঘটল। প্রথমে বাংলাদেশের একজনের কথা বলি। তিনি বাংলাদেশে আমার মতোই একজন সাহিত্যিক। তার সাথে আমার অন্তত ৩০ থেকে ৪০টি লেখা একসাথে প্রকাশিত হয়েছে। এ হিসাবে ভরসা ছিল তিনি আমার ভৎরবহফ হবেন। দেখলাম তিনি আমাকে ভড়ষষড়বিৎ করে দিয়েছেন। এবার এপার বাংলার একজনের কথা বলি। সে আমার ছেলের বয়সী। সে যে ঘরানার লেখক, আমি তার পূর্বসূরি। অনেক অনেক লেখা আমার সেখানে প্রকাশিত হয়েছে। সে ছেলেও আমাকে ভড়ষষড়বিৎ হিসেবে রেখে দিয়েছিল।
ক্ষোভ প্রকাশ করার জন্য আমি এ লেখা লেখিনি। আমি আগেই বলেছি, আমাদের সমাজের এই অংশের লোকদের ওপর আমার অশেষ অনুরাগ এবং আসা-ভরসাও। তারা যদি সচেতন হন, তা হলে আমাদের অশেষ উন্নতি হবে। না হলে আমাদের সমাজের সেই ‘বিদ্যে বোঝাই বাবু মশাই’-এর মতো সলিল সমাধি ঘটবে। এসব বাবুরা না নিজেদের কল্যাণ করতে পারে, না সমাজের। জীবনকে সুন্দর করে সাজানোর জন্য জ্ঞানার্জন জরুরি। জ্ঞানের আলোয় জীবন সুন্দর হলে সমাজও সুন্দর হয়।
তুলসিয়া ঘাট, মালদা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

 


আরো সংবাদ



premium cement
রাত ১১টার মধ্যে রাস্তার পাশের চায়ের দোকান বন্ধের নির্দেশ ডিএমপির ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া কি হোঁচট খেল? ফেনীতে শিবিরের পানি-স্যালাইন বিতরণ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনে পিসিবির প্রস্তাবিত ৩ ভেন্যু চকরিয়ায় বিরোধের জেরে বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা গাজীপুরে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় দুই শিশুর মৃত্যু বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আল্লামা জুলকারনাইনের ইন্তেকাল ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে ‘মিথ্যাচার’ : যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের বিরুদ্ধে মামলা উপজেলা নির্বাচন : কেন্দ্রে থাকবে সর্বোচ্চ পুলিশ-আনসার ফেসবুকে ভিডিও দিয়ে মাসে লাখ টাকা আয় আরিয়ান মুন্নার নোয়াখালীতে পানিতে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু

সকল