২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সিয়াম পালনকারীর আগের গুনাহ মাফ

-

রমজান মাস তাকওয়ার মাস। তাকওয়া কী? তাকওয়া শব্দের অর্থ- অতিমাত্রায় সতর্ক থাকা, কোনো কিছু থেকে সম্পূর্ণভাবে বেঁচে থাকা, অধিক মাত্রায় বর্জন করে চলা। আর পরিভাষায় তাকওয়া বলা হয় ওই ব্যক্তিকে, যে নিজেকে এমন সব কাজ হতে বিরত রাখে, যা আখিরাতে তার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাকওয়া অর্জনের উপায় কী? তাকওয়া অর্জনের উপায় হচ্ছে- আল্লাহর আইন যথাযথভাবে পালন করা। আল্লাহ ইরশাদ করেন- ‘হে ঈমানদাররা তোমাদের জন্য রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি। যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সূরা বাকারা ঃ ১৮৩) রোজা পালনের মাধ্যমে মুত্তাকি বা তাকওয়া অর্জন করা যায়। ‘রমজান মাস, যে মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে, মানবের হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন তাতে রোজা পালন করে।’ রমজান মাস, মর্যাদা ও সম্মানের মাস। কুরআন নাজিলের কারণে এ মাসের সম্মান, মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মহান আল্লাহ এ মাসে নবী-রাসূল সা:-এর ওপর সহিফা ও আসমানি কিতাব নাজিল করেন। হজরত ইবরাহিম আ:-এর ওপর সহিফা ১ রমজান, হজরত মুসা আ:-এর ওপর তাওরাত, হজরত দাউদ আ:-এর ওপর যাবুর, হজরত ঈসা আ:-এর ওপর ইঞ্জিল এবং আল কুরআন বিশ^নবী সা:-এর ওপর নাজিল করেন। রমজান মাস রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস। বিশ^নবী সা: বলেন, ‘সিয়াম প্রবৃত্তির তাড়না থেকে বাঁচার জন্য ঢাল। এর মাধ্যমে বান্দা আগুন থেকে মুক্তি পায়।’ ‘যে সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা, তা দৃষ্টিকে সংরক্ষণ করে এবং যৌনাঙ্গের হিফাজত করে। যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে না সে যেন সিয়াম পালন করে। কেননা, এটি তার জন্য সুরক্ষা’। ‘জান্নাতে একটি দরজা আছে যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিবসে সে দরজা দিয়ে সিয়াম পালনকারী প্রবেশ করবে।’ ‘যে ব্যক্তি ঈমান এবং এহতেসাবের সাথে রমজানে সিয়াম পালন করবে আল্লাহ তার আগের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ ‘বনি আদমের প্রতিটি আমলের প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি হতে থাকে। ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত। এমনকি আল্লাহ চাইলে তার চেয়েও বেশি দেন। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ ইরশাদ করেন-‘রোজার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা, রোজা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি স্বয়ং এর প্রতিদান দেবো। বান্দা একমাত্র আমার জন্য পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকে।’ ‘বিশ^নবী সা: যখন রমজানে জিবরাইল আ:-এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন আরো বেশি দানশীল হয়ে যেতেন।’ ‘সিয়াম পালনকারীর জন্য দু’টি খুশি- প্রথম খুশি যখন সে ইফতার করে, আরেক খুশি যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে। সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশক আম্বরের চেয়ে অধিক প্রিয়।’ (বুখারি, মুসলিম) মহান আল্লাহ তায়ালা মুত্তাকি বান্দার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে- ‘নিশ্চয় যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং যারা সৎকর্মপরায়ণ, আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন।’ ‘নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকিদেরকে ভালোবাসেন।’ ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার পাপ মার্জনা করবেন এবং তাকে দেবেন মহা পুরস্কার।’ ‘যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে জীবিকা দান করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ ‘যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’

‘যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের কাছে উপস্থিত হবে, তার দ্বারগুলো খুলে দেয়া হবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদের বলবে- তোমাদের প্রতি সালাম এবং জান্নাতে প্রবেশ করো স্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য।’
রমজান একটি নিয়ামতের মাস। দিনে রোজা পালন, রাতে আল্লাহর ইবাদত করি। এ মাসে কুরআন তিলাওয়াত, তারাবিহ, তাহাজ্জুত, নফল নামাজ, জিকির, বেশি বেশি দান করা হয়। এ মাস গুনাহ মাফের মাস।
আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার মাস। তিনি যেন জীবনের সব পাপরাশি ক্ষমা করেন। ইরশাদ হচ্ছে- ‘আমি একে আরবি ভাষার কুরআন বানিয়েছি, যাতে তোমরা তা বুঝতে পারো।’ ‘আল্লাহকে ভয় করো এবং জেনে রাখো- আল্লাহ সব কথা জানেন।’ ‘হে বস্ত্র মুড়ি দিয়ে শয়নকারী, রাতের বেলা নামাজে রত থাকো।’ ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি তাওবা কর। আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপগুলো মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন সব জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবহমান।’ ‘কাজেই যখনই অবসর পাও, ইবাদতের কঠোর শ্রমে লেগে যাও এবং নিজের রবের প্রতি মনোযোগ দাও।’
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, পঞ্চগড় নুরুন আলা নুর কামিল মাদরাসা, পঞ্চগড়


আরো সংবাদ



premium cement