আল্লাহর বন্ধুদের পরিচয়
- ফাতিমা আজিজা
- ২১ জুন ২০২১, ০০:৫১
যারা আল্লাহর অলি তাদের না থাকবে কোনো অপছন্দনীয় বিষয়ের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা, না থাকবে ব্যর্থতা। তাদের জন্যই দুনিয়া ও আখিরাতের সুসংবাদ। দুনিয়া ও আখিরাতের সম্পূর্ণ দুশ্চিন্তামুক্ত এরাই এবং সব জান্নাতি হবে এর অন্তর্ভুক্ত।
আউলিয়া শব্দটি অলি শব্দের বহুবচন। অলি অর্থ নিকটবর্তী অথবা বন্ধু। ইসলামে অলি বলতে বুঝিয়েছে তাদেরকে যাদের মধ্যে ঈমান এবং তাকওয়া বিদ্যমান। আল্লাহ বলেন, ‘জেনে রাখো! আল্লাহর অলিদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না, যারা ঈমান আনে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে’ (সূরা ইউনুস : ৬২-৬৩)।
মানুষের ঈমান এবং তাকওয়ার ভিত্তিতে আল্লাহর অলিদের অবস্থান বা বেলায়াতের পার্থক্য ঘটবে।
আল্লাহর নবীরা তার সর্বশ্রেষ্ঠ অলি হিসেবে স্বীকৃত। নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন তাঁর রাসূলগণ। রাসূলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ তথা নূহ, ইবরাহিম, মূসা, ঈসা এবং মুহাম্মদ সা:। আর সব দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাসূলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন হজরত মুহাম্মদ সা:।
আল্লাহর অলিগণ আবার দুই ভাগে বিভক্ত : অগ্রবর্তী ও নৈকট্যপ্রাপ্ত এবং ডান ও মধ্যমপন্থী। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এদের পরিচয় দিয়ে বলেছেনÑ ‘যখন যা ঘটা অবশ্যম্ভাবী তা ঘটবে, তখন তার সংঘটনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কেউ থাকবে না। তা কাউকে নীচ করবে, কাউকে সমুন্নত করবে। যখন প্রবল কম্পনে প্রকম্পিত হবে জমিন। পর্বতমালা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়বে। ফলে তা উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পর্যবসিত হবে এবং তোমরা বিভক্ত হয়ে পড়বে তিন শ্রেণীতেÑ ডান দিকের দল; ডান দিকের দলের কী মর্যাদা! আর বাম দিকের দল; বাম দিকের দলের কী অসম্মান! আর অগ্রবর্তীগণই তো অগ্রবর্তী। তারাই নৈকট্যপ্রাপ্ত-নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতে (সূরা আল-ওয়াকিয়াহ : ১-১২)।
এই আয়াতে তিন শ্রেণীর লোকের কথা বলা হয়েছে : এক দল জাহান্নামের। তারা হচ্ছে বাম দিকের দল। আর বাকি দুই দল জান্নাতের। যাদের মধ্যে ডান দিকের দল এবং অগ্রবর্তী ও নৈকট্যপ্রাপ্তগণ। এই দল সম্পর্কে আল্লাহ্ আবার একই সূরায় বলেছেন, ‘তারপর যদি সে নৈকট্যপ্রাপ্তদের একজন হয় তবে তার জন্য রয়েছে আরাম, উত্তম জীবনোপকরণ ও নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত। আর যদি সে ডান দিকের একজন হয় তবে তোমার জন্য সালাম ও শান্তি; কারণ সে ডানপন্থীদের মধ্যে’ (সূরা আল-ওয়াকিয়াহ : ৮৮-৯১)।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো অলির সাথে দুশমনি রাখবে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ‘ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নেই যে, আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শোনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলে। সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি কোনো কাজ করতে চাইলে তা করতে কোনো দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি’ (সহিহ বুখারি-৬৫০২)।
হাদিসটিতে খাঁটি বান্দার গুণ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে যার প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আল্লাহর নির্দেশের বাইরে তিল পরিমাণও অগ্রসর হয় না। বান্দা মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর ওদিকে আল্লাহ্ বলেন, ‘ওহে প্রশান্তিময় আত্মা! চলে আসো তোমার প্রতিপালকের কাছে সন্তুষ্টিসহকারে এবং সন্তোষের পাত্র হয়ে আমার (সম্মানিত) বান্দাদের মধ্যে প্রবেশ করো আর প্রবেশ করো আমার জান্নাতে’ (আল ফজর : ২৯-৩০)।
এই বিশেষ অলিত্ব বা নৈকট্যের স্তর অগণিত ও অশেষ। এর সর্বোচ্চ স্তর নবী-রাসূলগণের প্রাপ্য। নবীগণ অলি হওয়াই অপরিহার্য। আর তাই রাসূল সা:-এর সর্বোচ্চ স্তরের অধিকারী যিনি সাইয়্যিদুল আম্বিয়া। অতঃপর যারা ঈমানের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ স্তরে তারা থাকবে আগের বেলায়াতের প্রাপ্য এবং যাদের ঈমানের শক্তি নিচের দিকে তাদের বেলায়াত কমতে থাকবে। এখানে বোঝা যাচ্ছে যারা ডান দিকের লোক তারা শুধু ফরজ আদায় এবং হারাম থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। কিন্তু যারা অগ্রবর্তী দলের অন্তর্ভুক্ত তারা সর্বদা ফরজের পাশাপাশি নফলের মধ্যে নিজেদের নিয়োজিত রাখেন।
আল্লাহর অলি চিহ্নিত করতে বা বুঝতে বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। বরং সাধারণ সব মানুষের মতোই এদের বেশভূষা। বরং রাসূল সা:-এর উম্মতের মধ্যে প্রকাশ্য বিদায়াতকারী ছাড়া সর্বস্তরে অলি বিদ্যমান। তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে কুরআনের ধারক-বাহকদের মাঝে, জ্ঞানী-আলেমদের মাঝে, জিহাদকারী ও তরবারি ধারকদের মাঝে, ব্যবসায়ী, কারিগর ও কৃষকদের মাঝে।
আল্লাহর অলিগণের মাঝে নবী-রাসূলগণ ছাড়া কেউ নিষ্পাপ নন, কোনো অলি গায়েব জানেন না। আল্লাহর অলি হওয়ার জন্য একটি মাধ্যম হচ্ছে রাসূল সা:-এর জীবনাচরণ পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করা। রাসূল সা: বলেছেন: ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মাঝে এমন কিছু লোক আছে যারা নবী নন এবং শহীদও নয়। কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে তাদের মর্যাদার কারণে নবীগণ ও শহীদগণ তাদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হবেন। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের অবহিত করুন, তারা কারা? তিনি বলেন, তারা ওইসব লোক যারা আল্লাহর মহানুভবতায় পরস্পরকে ভালোবাসে, অথচ তারা পরস্পর আত্মীয়ও নয় এবং পরস্পরকে সম্পদও দেয়নি। আল্লাহর শপথ! তাদের মুখমণ্ডল যেন নূর এবং তারা নূরের আসনে উপবেশন করবে। তারা ভীত হবে না, যখন মানুষ ভীত থাকবে। তারা দুশ্চিন্তায় পড়বে না, যখন মানুষ দুশ্চিন্তায় থাকবে। তিনি সূরা ইউনুসের ৬২ নং আয়াত তিলাওয়াত করলেনÑ ‘জেনে রাখো! আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না’ (সুনানে আবু দাউদ-৩৫২৭)।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা