০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


রানা প্লাজা ট্রাজেডি

‘সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই বিচার প্রক্রিয়ার ধীর গতি’

মানববন্ধন ও প্রতিবাদী র‌্যালী - ছবি : নয়া দিগন্ত

সাভার বাসস্ট্যান্ডের রানা প্লাজার সামনে রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর পূর্তিতে রানা প্লাজা ট্রাজেডি দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই বিচার প্রক্রিয়ার ধীর গতি।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল থেকে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে পুস্পস্তবতক অর্পণ, হাজারো মানুষ হত্যার বিচার চাই এবং মৃতদের স্মরণ করো জীবিতদের জন্য লড়াই করো আহ্বানে আলোচনা সভা, মানববন্ধন ও প্রতিবাদী র‌্যালীসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

এ দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ গামের্ন্ট শ্রমিক সংহতি, গামের্ন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন, টেক্সটাইল গামের্ন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, সাভার আঞ্চলিক কমিটি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল বাংলাদেশ গামের্ন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিউন কেন্দ্র, গামের্ন্টস শ্রমিক জোট বাংলাদেশ, জি-স্কপ ও বাংলাদেশ গামের্ন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন।

জানা যায়, রানা প্লাজা শ্রদ্ধাঅর্পণ শেষে বাংলাদেশ গামের্ন্ট সংহতির উদ্যোগে বেলা ১১টায় উদ্ধারকর্মী হিমালয় হিমুর আত্মহুতীর ছয় বছরে বিরুলিয়ার গোলাপগ্রামে হিমুর মৃত্যুর স্থানে শ্রদ্ধা অর্পন অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে সকালে রানা প্লাজা হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর এবং হাজারো শ্রমিকের মৃত্যূর প্রতিবাদে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, বিআইজিডির গবেষক মাহীন সুলতান।

বক্তারা এ সময় বলেন, সারা দুনিয়ার কারখানার ইতিহাসে অন্যতম ঘটনা রানা প্লাজ ভবন ধসে হাজারো মানুষ ও স্বপ্ন নাই হবার ঘটনা। ১১ বছরেও যথেষ্ট স্বাক্ষী না পাবার খোড়া যুক্তিকে সামনে এনে বিচার প্রক্রিয়া ধীর করে রাখা হয়েছে। অথচ দোষীদের সনাক্ত করার মতো দিবালোকে মতো প্রমাণ ২৪ এপ্রিলের মধ্যেই নিহিত আছে।

বক্তারা আরো বলেন, শুধু ভবনমালিক সোহেল রানা নয়, বিভিন্ন কারখানার মালিক, ত্রুটিপূর্ণ ভবন অনুমোদনের জন্য সরকারি কর্মকর্তারাসহ আরো অনেকে এই ঘটনার জন্য দায়ী। অথচ সোহেল রানা ছাড়া বাকি সবাই জামিনে মুক্ত এবং আইনের ফাঁক ফোঁকড় গলে জেলের বাইরে। আইনের আশ্রয় নিয়ে মামলার গতি ধীর করার জন্য সর্বোচ্চ ততপর তারা।

বক্তারা বলেন, আইনের শাসন সবার জন্য নিশ্চিত হবার যে ব্যবস্থা থাকা দরকার তা প্রশ্নর সম্মুখীন আজ। সরকারের সদিচ্ছার অভাব এবং মালিকদের প্রভাবের কারণে এই দীর্ঘ সূত্রিতা চলছে বলে তারা অভিমত প্রকাশ করেন। বিচারিক আদালতের রায় অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারি থেকে ছয় মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির আদেশ আছে আপিল বিভাগের। এই সময়ে মধ্যে যাতে মামলা শেষ হয় এবং রানা প্লাজার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা ন্যায় বিচার পায় তার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু এই দোষীদের নানা কায়দায় রক্ষা করাই যেন এখন দীর্ঘসূত্রিতার প্রধান কারণ বলে রানা প্লাজায় নিহত স্বজনসহ জনগণের উদ্বেগ।

বক্তারা বলেন, রানা প্লাজার ঘটনাকে হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না। ইতিহাসে বাঁচিয়ে রাখতে এবং তরুণদের লড়াইয়ে প্রেরণা হিসেবে এই শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। আর সে কারণে রানা প্লাজার সামনের স্থানটিতে স্থায়ী বেদী নির্মান এবং স্থানটি রক্ষনাবেক্ষন করতে হবে।

বক্তারা বলেন, গত ১১ বছর ধরে রানা প্লাজার এই ঐতিহাসিক জায়গাটি নানাভাবে আবর্জনার স্তুপে, কখনো দখল করে দোকানপাট বসানো হয়েছে যা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। রানা প্লাজা স্থানটি আবর্জনার স্তুপে পরিণত না করে এটি যথাযথ সংরক্ষন করতে হবে। ধসে পড়া স্থানে বহুতল ভবণ নির্মাণ করে নিহত ও ক্ষতিগ্রন্থ শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা করার দাবি করা হয়।

বক্তারা আরো বলেন, একদিকে একজীবনের সমপরিমাণ সম্মানজনক-মর্যাদাপূর্ণ ক্ষতিপুরণ প্রদানের ব্যবস্থা না করে ব্যান্ড, এনজিও এমনকি সরকারের দফায় দফায় কিস্তিতে শ্রমিকদের অর্থ সহযোগিতার ও নানা প্রশিক্ষনের নামে শ্রমিকরা যাতে বিচারের দাবি সংগঠিত না হয়ে ভিক্ষুকের মতো দ্বারে দ্বারে কেবল সহায়তা খোঁজে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তারা বলেন, ক্ষতিপুরণ কোনো ভিক্ষা নয় এটি শ্রমিক ও নাগরিকের আইনী অধিকার। এই অধিকার রক্ষায় এক হওয়ার আহ্বান জানান তারা। নিহত ও আহত পরিবারকে ১১ বছর আগে যে আইনী ক্ষতিপুরণ বা অনুদান দেয়া হয়েছে তা কখনোই সম্মানজনক বা মর্যাদাপূর্ণ নয়। শ্রম আইনে ক্ষতিপুরণের আইন যা বদল হয়েছে তা অতি নগন্য। এক লাখ এবং দেড় লাখ থেকে দুই লাখ ও আড়াই লাখ পর্যন্ত বাড়ানো কোনো শ্রমিককে মানুষ হিসাবে গণ্য না করারই উদাহরণ। যে রাষ্ট্রে কোনো গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ নাই জনগণের মত প্রকাশের সুযোগ নাই, সেখানে রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকরা আরো বিপর্যস্থ। দোষীদের সর্বেবাচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোনো পথ খোলা নাই।

সমাবেশে এছাড়া বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ গামের্ন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন, সহ-সভাপ্রধান অঞ্জন দাস, নিহত শ্রমিক আঁখি আক্তারের মা নাসিমা আক্তার, আহত জেসমিন, নিহত শাওনের বাবা আজিজ মিয়া, নিহত ফজলে রাব্বীর মা রাহেলা আক্তার, নিহত শাহীদার মা তাহেরা এবং বাংলাদেশ গামের্ন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপিতি মো: রফিকুল ইসলাম সুজন।


আরো সংবাদ



premium cement
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর ওপর : মন্ত্রী রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় ওআইসি’র সহযোগিতা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী টর্চার সেলে শিশু-বৃদ্ধদের পেটাতেন মিল্টন : হারুন গাজা ত্যাগ করবে না ইউএনআরডব্লিউএ শৈলকুপায় সাংবাদিক মফিজুলের ওপর হামলা : প্রেসক্লাবের উদ্যোগে মানববন্ধন বিএনপির ভাবনায় ক্লান্ত ওবায়দুল কাদের : রিজভী অনলাইন জুয়ায় ২০ লাখ টাকা হেরে যুবকের আত্মহত্যা আল-জাজিরার অফিসে ইসরাইলি পুলিশের হানা মালয়েশিয়ায় কাল বৃহত্তম আন্তর্জাতিক ধর্মীয় সম্মেলন রাস্তা প্রশস্ত করতে কাটা হবে ৮৫৬টি গাছ সম্পদ অর্জনে এমপিদের পেছনে ফেলেছেন চেয়ারম্যানরা : টিআইবি

সকল