০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভর্তুকি দিয়েও বাস্তবায়িত হচ্ছে না সরকারের উদ্দেশ্য

গোপালগঞ্জ সরকারি হাঁস-মুরগি পালন কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ

গোপালগঞ্জ সরকারি হাঁস-মুরগি পালন কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ -

গোপালগঞ্জে সরকারি হাঁস-মুরগি পালন কেন্দ্রে সরকার প্রতি বছর ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা ভর্তুকি দিলেও কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ডুবতে বসেছে খামারটি। জেলার ছোট ছোট খামারিদের স্বাবলম্বী করতে এ খামারে মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করা হলেও খামারিরা বাচ্চা পান না। বাচ্চা চলে যায় খামারকে ঘিরে গড়ে ওঠা দালাল চক্রের হাতে। প্রায় ৩ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই খামারটি।

সরকারি এ খামারটিতে উৎপাদিত ডিম, মুরগির বাচ্চা ও মুরগি বেশি দামে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ, মুরগির বাচ্চা, গোশত ও ডিম বিক্রয়ের কোনো তালিকা না থাকা, অবাধে ব্যবসায়ীদের কাছে ডিম-গোশত-ওষুধসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে গোপালগঞ্জ হাঁস-মুরগি পালন কেন্দ্রের উন্নয়ন কর্মকর্তা মির্জা নাজমুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

এছাড়া খামার বাবদ সরকার প্রতি বছরে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা ভর্তুকি দেয় গোশতের চাহিদা পূরণের জন্য। যেখান থেকে বেকার যুবক, হতদরিদ্র কৃষক ও দুঃস্থ মহিলাদের মধ্যে হাঁস-মুরগির বাচ্চা কমদামে সরবরাহের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কথা থাকলেও বাস্তবে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। এই করোনাকালেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। খামারে বাচ্চা উৎপাদন করার কথা থাকলেও বাস্তবে উল্টো মনগড়া নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অফিসের একজন কর্মচারী জানান, গত ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে মুরগি বিক্রি করেছেন ৬৬৩টি, প্রতিটি মুরগি বিক্রি করেছেন ১২০ টাকা দামে কিন্তু সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছেন ৬০ টাকা করে। অক্টোবরে ৩৬০টি মুরগি বিক্রি করেছেন ১২০ টাকা দামে, জমা করেছেন ৬০ টাকা করে। নভেম্বরে মোরগ বিক্রয় করেছেন ৭০০টি, প্রতি পিচ ১৮০ টাকা করে। কিন্তু সরকারি কোষাগারে জমা করেছেন ৬০ টাকা করে। এছাড়াও অফিসের ফার্নিচার ক্রয় বাবদ ৫০ হাজার টাকা, ল্যাপটপ বাবদ ৪০ হাজার টাকা, অফিস মেরামত বাবদ ৩ লাখ টাকা বিল ভাউচার করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

প্রতিদিন ১২০ গ্রাম করে মুরগিকে খাদ্য খাওয়ানোর কথা থাকলেও খাওয়ানো হচ্ছে ৬০-৭০ গ্রাম। যার ফলে প্রতিনিয়ত খাদ্যাভাবে মুরগি মারা যাচ্ছে। সেই অবশিষ্ট খাদ্যগুলো বাইরে বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে ওই অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারিরা। জেনারেটর মেশিন না চালিয়ে নিয়মিত তেল খরচ বাবদ ভূয়া বিল ভাউচার করে টাকা আত্মসাৎ করারও অভিযোগ রয়েছে। ভ্যাক্সিন, টিকা ও ওষুধ মুরগিকে না দিয়ে বাইরে বিক্রি করছেন নাজমুল ইসলাম।

জেলার বেকার যুবক, দরিদ্র কৃষক ও দুঃস্থ মহিলাদের মধ্যে স্বল্পমূল্যে মুরগির বাচ্চা ও ডিম সরবরাহের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ তাদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যেই সরকারিভাবে এ উদ্যোগ গৃহীত হয়। সে লক্ষ্য পূরণে ওই অফিসে কর্মরতরা সরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়নতো দূরের কথা বরং নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও করোনা দুর্যোগের মধ্যে রমজান মাসে খামারের ১৫শ’ মুরগি রাতের আধারে বিক্রি করে হিসেবে দেখিয়েছেন মৃত মুরগি হিসেবে। সরকারের কয়েক লাখ টাকা ক্ষতি দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করেছেন।

কোনরকম তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে গোপালগঞ্জ হাঁস-মুরগি পালন কেন্দ্রের উন্নয়ন কর্মকর্তা মির্জা নাজমুল ইসলাম বলেন, এই বিষয়ে কোনো বক্তব্য আমি দেবো না। যদি পারেন ঢাকা থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সাথে নিয়ে আসেন।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: আজিজ আল মামুন বলেন, এর আগেও আমার কাছে ওই হাঁস-মুরগি উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এসেছে। খামারটি আমার আওতাধীন নয়। তারপরও আমি মৌখিকভাবে তাকে সতর্ক করেছি।


আরো সংবাদ



premium cement