ছালেহাদের খাবার পৌঁছে দিচ্ছে আশুলিয়ার শিক্ষিত যুবকরা

অন্যের ঘরে খাবার রান্না করলেও ছালেহা বানুর নিজের চুলাতেই গত এক সপ্তাহ ধরে আগুন জ্বালানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। মী রিকশাচালক। করোনার প্রকোপে তারও আয় রোজগার প্রায় বন্ধ। বিয়ের উপযুক্ত দুই মেয়ে গার্মেন্টস কারখানা চাকরি করলেও এখন তাদেরও ছুটি। সব কলকারখানা বন্ধ থাকায় গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ছালেহার অন্যের বাসা বাড়িতে রান্নার কাজও বন্ধ। রাস্তায় রেব হতে মানা তাই রিকশা নিয়ে স্বামী হেমায়েত মোল্লাও ঘরের বাইরে যান না। এই অবস্থায় অন্যের কাছে সাহায্য সহযোগিতা চাইতেও পারছিলেন না এই পরিবার।

শনিবার সকাল থেকেই আশুলিয়ার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে ও মহল্লায় আশুলিয়া গ্র্যাজুয়েটস্ এসোসিয়েশনের (আগা) শতাধিক সদস্য খুঁজতে থাকেন ছাহেলা বানুদের মতো এমন অসহায় পরিবার। চার/পাঁচজন সদস্যের একটি পরিবারের জন্য পনেরো দিনের খাবার প্যাকেট করে বস্তায় করে সেই খাবার আগা’র সদস্যরা নিজেরাই পৌঁছে দিয়েছেন প্রায় তিন শ’ পরিবারের কাছে। ‘নিরাপত্তার স্বার্থে আপনি ঘরে থাকুন, আমরাই খাবার পৌঁছে দেব আপনার বাড়িতে’ এমন শ্লোগানের ব্যানার ও প্লেকার্ড রিকশা ভ্যান আর ঠেলাগাড়িতে করে একাধিক গ্রুপে ভাগ হয়ে আগা’র সদস্যরা ছড়িয়ে যান বিভিন্ন গ্রামে। আগে থেকেই তালিকা করা এমন অভাবী মানুষদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবারের প্যাকেট পৌঁছে দেন শিক্ষিত এই যুবকরা।

আর এই পুরো কাজের সামনে থেকে তদারকি করছেন আগা’র নেতৃবৃন্দ। এদের মধ্যে রয়েছেন আল মামুন, এস এম আমিরুল ইসলাম আসিফ, আবদুর রশীদ পলান, মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, জাকির হোসেন, রাকিব মন্ডলসহ সংগঠনের শতাধিক সদস্য খাবার বিতরণে অংশ নিয়েছেন। তারা একদিনেই প্রায় তিনশ পরিবারের মাঝে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। একটি পরিবারের ১৫ দিনের খাবার উপযোগী একেকটি প্যাকেটে রয়েছে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, তেল, আলু ও সাবান।

এদিকে খাবার প্যাকেট হাতে পেয়ে পঞ্চাশোর্ধ ছালেহা বানুর কাতর কষ্ঠে বলেন, ‘আল্লাহ তোমাকদের পাঠাই ছিনু বাবা, দুই বেটি ছাওয়াল লয়ে বড়ই কষ্টি ছিনু বাবা’।

আশুলিয়ার পাঁচটি ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রামেই আজ শনিবার আগা’র সদস্যরা নিজেরাই খাবার প্যাকেট পৌছে দিয়েছেন। যেসব গ্রামে সহায়তা পৌছে দেয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ছিল তৈয়বপুর, জিরাবো, কাঠগড়া, দুর্গাপুর, ঘোষবাগ, গুমাইল, দিয়াখালি, তাজপুর, বাগবাড়ি, ধনাইদ, দিয়াখালী, বগাবাড়ি, কুটুরিযা, বাংলাবাজার, জামগড়া, পবনারটেক, নয়ারহাট, ইয়ারপুর, পাড়াগ্রাম, রোস্তমপুর, গাজিরচট,টঙ্গাবাড়ি, ইমলামনগর, চারাবাগ, নলামসহ প্রায় ৩৫/৩৬টি গ্রামে অসহায় দুস্থ মানুষের ঘরে এক দিনেই খাবার পৌছে দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য সহায়তা হিসেবে এই খাবারের জন্য আগা’র সদস্যরা নিজেরাই আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। অন্য কোনো দাতাসংস্থা বা কোনো ব্যক্তির নিকট থেকে অনুদান বা নগদ অর্থ গ্রহন করা হয়নি। আগামী দিনেও যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অন্য কোনো মানবিক প্রয়োজনে আশুলিয়া গ্র্যাজুয়েটস এসোসিয়েশন দুস্থ অসহায় ও নিরন্ন মানুষের পাশে থেকে সহায়তা অব্যাহত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।