পদ্মার ভযাবহ ভাঙ্গনে নড়িয়া-সুরেশ্বর সড়কের মূলফৎগঞ্জ বাজার সংলগ্ন খান বাড়ী জামে মসজিদ ও হযরত খাঁজা মঈন উদ্দিন চিশতী অনুসারী গাজী কালুর মেহমান খানা নামের চার তলা ভবন, দিলু খানের দো-তলা ও খান বাড়ীটি পদ্মার গর্ভে চলে গেছে। এ সময় ভবনের সামনের পাকা সড়কটিও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
শনিবার রাত ৯টার সময় একই সাথে বাড়ীগুলো ও মসজিদটি পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। মারাতœক ভাঙ্গন ঝুকিতে রয়েছে মুলফৎগঞ্জ বাজার, পদ্মার গর্ভে বিলীন মেহমান খানার সামনের তিনতলা ভবন, নড়িয়া বাজার, পূর্ব নড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। নদীর ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে যেকোন সময় হারিয়ে যাবে আশপাশের আরো অনেক স্থাপনা। পদ্মার তীরবর্তী লোকজনের চোখে কোন ঘুম নেই। তারা দিন রাত তাদের সর্বশেষ সম্বল ঘর-বাড়ী, দোকান-পাট সড়িয়ে নিতে চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে, এ বছরও বর্ষা মৌসুম শুরু থেকে নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ভাবে পদ্মা নদীর ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে নড়িয়া উপজেলার বাশতলা, মুলফৎগঞ্জ, সাধুর বাজার, ওয়াপদা এলাকার দুই হাজারেরও বেশী পাকা ঘর বাড়ি, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,ব্রীজ কালবাট নদী গভে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে নড়িয়া উপজেলা শহর ও মূলফৎগঞ্জ বাজারসহ আশ পাশের এলাকাটি নদী গর্ভে চলে যাবে। একই সাথে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ হাট-বাজার, মসজিদ-মাদ্রাসা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। পদ্মা নদীর তীর রক্ষাবাঁধ বাস্তবায়ন না হলে এবং নদীর ¯্রােত পরিবর্তন না হলে বর্ষা মৌসুমেই সরকারী-বেসরকারী প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশী ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায় এলাকাবাসী। এলাকাবাসী আরো জানায়, এ বছর বর্ষা মৌসুমের পূর্বে পদ্মা নদীর তীর রক্ষা বাধের দ্রুত বাস্তবায়নের দাবীতে ভাঙ্গন কবলীত এলাকার লোকজন মানব বন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করলেও তা বর্ষার আগে বাস্তবায়ন হয়নি। এ ভয়াবহ ভাঙ্গন রোধে সরকার পদ্মা নদীর দক্ষিন (ডান) তীর রক্ষা বাধ প্রকল্প গ্রহন করে।
এরপর গত ২ জানুয়ারী তীর রক্ষা বাধ নির্মানের জন্য ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে তা একনেকের বৈঠকে পাস করে। এ বছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙ্গন শুরু হলে তাৎক্ষনিক ভাবে ৫কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে কিছু জিও ব্যাগ ফেলে নদীর গতি পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়। কিন্ত প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এবং কাজ ধীর গতিতে হওয়ায় কোন কাজেই আসেনি সরকারে এ অতিরিক্ত বরাদ্দ। গত শনিবার দুপুরে নড়িয়ার বাশতলা থেকে মুলফৎগঞ্জ সড়কের ১শ মিটার পদ্মা নদী গর্ভে চলে যায়।
এর পর শনিবার রাতে একই সাথে পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে যায় নড়িয়া-সুরেশ্বর সড়কের মূলফৎগঞ্জ বাজার সংলগ্ন খান বাড়ী জামে মসজিদ ও হযরত খাঁজা মঈন উদ্দিন চিশতীর অনুসারী গাজী কালুর মেহমান খানা নামের চার তলা ভবন, দিলু খানের দো-তলা ও খান বাড়ীটি। এ দিকে নড়িয়া বাজার এবং মুলফৎগঞ্জ বাজার পদ্মার কাছে চলে আসায় ব্যবসায়ী ও আশ পাশের লোকজন প্রতিটি মুর্হুত ভাঙ্গন আতংকে দিন কাটাচ্ছেন। পদ্মার ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসীর দাবী ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হলে এখনো নড়িয়া বাজার রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙন রোধে খুব শিঘ্রই পদ্মার দক্ষিন তীর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হবে।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, বিলাসবহুল বাড়িটি পদ্মায় তলিয়ে গেছে শুনে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। পদ্মার তীরবর্তী লোকজনদের দুরত্ব বজায় রাখতে মাইকিং করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে ১ হাজার ৪শ জন ক্ষতিগ্রস্থদের শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আশা করি ঈদের আগেই আরো ১ হাজার পরিবারের মাঝে ত্রান সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা