২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আফ্রিকায় নজর জনসনের

-

ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পরে কিভাবে একটি ‘বৈশ্বিক ব্রিটেন’Ñ এর প্রচার চালাবে? একটি সম্ভাবনা হলো আফ্রিকার সাথে যোগসূত্র পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা, যেখানে ব্রিটেন একসময় প্রধান ঔপনিবেশিক শক্তি ছিল। তারই উদ্যোগে ব্রেক্সিটের দুই সপ্তাহ আগে লন্ডনে আফ্রিকার দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইইউর সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পর্কে বোঝাপড়ার বিষয়ে সংশয় বাড়ছে।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ২০ জানুয়ারি লন্ডনে একটি ‘বিনিয়োগ সম্মেলনে’ আফ্রিকার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নেতাদের আমন্ত্রণ করেছিলেন। এতে মিসর, ইথিওপিয়া, ঘানা, কেনিয়া, নাইজেরিয়া ও রুয়ান্ডাসহ বন্ধুত্ব ভাবাপন্ন আফ্রিকান দেশগুলোর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ওই সম্মেলনে জনসন ঘোষণা দিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্যিক সীমাবদ্ধতার মুখে ব্রিটেন ব্যবসা ও সম্পর্ক জোরদার করতে আগের চেয়ে আগ্রহী। তিনি বলেন, আফ্রিকা উন্নতি করছে।
তবে সেই অংশীদারিত্ব ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম কিভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়ে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা দ্বন্দ্বে আছেন। গত দুই দশকে দরিদ্র দেশগুলোতে সহায়তার জন্য ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ডিএফআইডি) প্রভাব বেড়েছে। ২০১৮ সালে ব্রিটেন সংস্থাটির মাধ্যমে ১৪.৬ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সহায়তা করেছে।
ব্রিটেনের বন্ধু দরকার
টনি ব্লেয়ারের অধীনে ১৯৯৭ সালে ডিএফআইডি একটি পৃথক বিভাগ হিসেবে কাজ শুরু করেছিল। জনসন এটিকে আবারো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে আনতে আগ্রহী। আফ্রিকায় ব্রিটেনের কূটনৈতিক মিশন যা আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব সামান্য। ব্রিটিশ ফরেন পলিসি গ্রুপের দ্বারা গত বছর প্রকাশ করা একটি প্রতিবেদন অনুসারে সাবেক রাষ্ট্রদূতদের একটি থিঙ্কট্যাঙ্ক জানায়, ২০১৪ সালে ব্রিটেনের সাব-সাহারান আফ্রিকার ৪৮টি দেশের ৩১টিতে ২৩১ জন কূটনীতিক ছিলেন। এই ব্রিটিশ মিশনের ১৬টিতে কেবল এক বা দু’জন কূটনীতিক ছিলেন। এরপরে আরো পাঁচটি দেশে মিশন খোলা বা পুনরায় খোলা হয়েছে।
এ দিকে সাহারার দক্ষিণাঞ্চলে ফ্রান্সের ৪২টি দূতাবাস ছিল, ২০১৮ সালে এক হাজার ৩৭৩ কূটনীতিক কাজ করেছেন। চীনের সংখ্যাটা সম্ভবত আরো বেশি। এ ছাড়া ব্রাজিল, ভারত ও তুরস্কের কূটনীতিকরা, আফ্রিকাতে ব্যবসা ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ আগ্রহী এবং অনেক দেশ ব্রিটেনকেও ছাড়িয়ে গেছে।
আফ্রিকায় ব্রিটেনের ব্যর্থতার আরেকটি দিক হলো ফরাসি ও চীনা নেতাদের নিয়মিত আফ্রিকা সফরের তুলনায় ব্রিটিশ নেতৃবৃন্দের আফ্রিকা ভ্রমণের বিষয়টি।
ব্রিটিশরা মালিতে ২৫০ জন সেনা পাঠাচ্ছে সেখানে একটি ফরাসি নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য। নাইজেরিয়ার সৈন্যদের উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ার বোকো হারামের উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, দক্ষিণ সুদানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে চাইছে এবং সেখানে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করেছে সোমালিয়া। ফরাসিরা এই মহাদেশে ব্রিটিশদের চেয়ে অনেক বেশি ছড়িয়েছে, জিবুতিতে তাদের একটি ঘাঁটি এবং সেখানে সাত হাজার ২০০ এরও বেশি সৈন্য রয়েছে। তবে বৈদেশিক সহায়তায় জিডিপির ০.৭ শতাংশ ব্যয় করার লক্ষ্য পূরণে ব্রিটেন ধনী দেশগুলোর জি-৭ গ্রুপের একমাত্র সদস্য।
লন্ডনে শীর্ষ সম্মেলনে জনসন বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ওপর জোর দিয়েছেন। তার কর্মকর্তারা আফ্রিকান কন্টিনেন্টাল ফ্রি ট্রেড এরিয়াকে প্রশংসা করেছেন, যা আফ্রিকান ইউনিয়নের ৪৪ জন সদস্যের মাধ্যমে ২০১৮ সালে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি, যা আফ্রিকার ভবিষ্যৎ ব্যবসায়ের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
জনসনের পূর্বসূরি থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আফ্রিকা ভ্রমণের ঘোষণা করেছিলেন, ব্রিটেন ২০২২ সালের মধ্যে আফ্রিকার বৃহত্তম একক বিনিয়োগকারী হওয়ার চেষ্টা করবে, সরকারি মালিকানাধীন সিডিসি (আগের কমনওয়েলথ ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন) দ্বারা পরিচালিত প্রাইভেট-ইক্যুইটি গ্রুপ। ২০১৪ সাল থেকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্রিটেনের অবস্থান চীন, আমেরিকা ও ফ্রান্সের পরে চতুর্থ স্থানে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আলোচনা সভায় জনসন স্বীকার করেন, একটি বিষয় আফ্রিকানদের বিরক্ত করছে তা হলো, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা এবং উচ্চশিক্ষার্থীদের ব্রিটেন সফরের ভিসা পেতে ভীষণ সমস্যায় পড়তে হয়। ভিসা পাওয়াটা সময়সাপেক্ষ এবং প্রায়ই অবমাননাকর হয়ে দাঁড়ায়। আফ্রিকায় ব্রিটেনের বেশির ভাগ কূটনৈতিক মিশনের কোনো পাসপোর্ট অফিস নেই, তাই আগন্তুকদের কয়েক শ’ মাইল পথ পেরিয়ে পাশের দেশগুলোতে ভ্রমণ করতে হয়; বিষয়টি আফ্রিকার ব্রিটিশ বিনিয়োগের বিস্তৃত দিকগুলোর বিরুদ্ধে এটি একটি ক্ষুদ্র প্রতিবন্ধক মনে হতে পারে। তবে আফ্রিকানরা ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের অপ্রয়োজনীয় বোধ করলে তারা নিজেরাই তাদের আর আর স্বাগত জানাবে না। ব্রিটেন ইইউর বিধিনিয়ম আর না মানলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্কসহ নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসের মতো ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সহযোগীদের সাথে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হলে ব্রিটেনকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে পারে। দূরের দেশগুলোর সাথে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি করে সেই ঘাটতি পূরণ করা সহজ হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement
রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়াল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে চুয়েট ১১ মে পর্যন্ত বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে শিশুর মৃত্যু হিলিতে ভটভটি-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২ ‘গাজার ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে ১৪ বছর লাগতে পারে’ সখীপুরে ছাগল চুরির মামলায় মা-ছেলে কারাগারে ‘অন্যায়ের সাথে নয়া দিগন্তের সাংবাদিকরা কখনোই আপোষ করেন না’

সকল