৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভাত ও বাঙালি

ভাত ও বাঙালি -

জানো, কথায় বলে, মাছে-ভাতে বাঙালি। ভাত না হলে বাঙালির এক বেলাও চলে না। ভাত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান খাবার, বাঙালির সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। ধান এ দেশের কৃষকদের তাই প্রধান সম্পদ। ধান থেকে হয় চাল, চাল থেকে ভাত। চাল তথা ভাত বাঙালির নিজস্ব খাবার, এমনটি আর নেই। বাঙালি কখনো ডাল-রুটির ভক্ত ছিল না, ছিল মাছ-ভাত, অগত্যা ডাল-ভাতের ভক্ত। ডাল-রুটি পাশ্চাত্য ও পশ্চিমা সংস্কৃতির। কালক্রমে রুটি এ দেশের খাবারের সাথে যুক্ত হলেও ভাতকে তার অবস্থান থেকে একটুও নড়াতে পারেনি। বিভিন্ন প্রাচীন লেখকের প্রায় সবাই তাদের এ সম্পর্কিত লেখায় একমত হয়েছেন যে, বিশ্ব তো নয়ই, এশিয়াতেও বাংলার চালের মতো চাল আর কোথাও হয় না। এত বেশি সরু ও সুগন্ধি চালের জাত বিশ্বের আর কোনো দেশে নেই।
চাল থেকে শুধু এক রকমের ভাতই হয় না। ভাত রান্না হয় বেশ কয়েক রকমের। সচরাচর আমরা যে ভাত খাই সেটা শুধু পানি দিয়ে সিদ্ধ করা। একে বলে ‘সাদা ভাত’। ভাত ফুটানোর পর যে অতিরিক্ত পানি ফেলে দেয়া হয় তাকে বলে মাড় বা ফ্যান। ফ্যান ঝরানোর পর ভাত হয় ঝরঝরে। এ জন্য এ ভাতকে ‘ঝুরা ভাত’ও বলে। দুই রকমের চাল বাংলায় চালু আছে- সিদ্ধ ও অসিদ্ধ বা আতপ চাল। সিদ্ধ চালে ঝুরা ভাত ভালো হয়। সিদ্ধ চালের ভাতের জন্য এ দেশে আগে বালাম ধানের ব্যবহার ছিল সর্বাধিক। কেউ কেউ মাড় না ফেলে তা ভাতের সাথে বসিয়ে ভাত রান্না করেন। সেই ভাতকে বলা হয় ‘বসা ভাত’। ঝুরা ভাতকে পরদিন বাসি করে খেলে তাকে বলে ‘কড়কড়া ভাত’ আর বিশেষ পদ্ধতিতে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রেখে দিলে হয় ‘পান্তা ভাত’।
আবার কেউ কেউ পানি একটু বেশি দিয়ে তা ভাতের সাথে মিশিয়ে থকথকে বা পাতলা কাদার মতো একধরনের ভাত রান্না করেন। সে ভাতকে বলা হয় ‘ফ্যানা ভাত’, ‘জাউ ভাত’ বা ‘লাসা ভাত’। দক্ষিণাঞ্চলে দেশীয় চাল ভাইটাল ফ্যানা ভাতের জন্য উৎকৃষ্ট চাল। তবে পাহাড়ি এলাকায় জুমে উৎপন্ন লালবিন্নি চালের লাসা ভাতের কোনো তুলনা হয় না। চাল থেকে পোলাও-বিরিয়ানিও হয়। তবে এগুলো বাঙালির নয়, মোগলদের সাথে সাথে এসব খাবার বাংলায় প্রবেশ করেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement