০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সেমুতাংয়ের কূপ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে বাপেক্স

কমে আসছে গ্যাসের চাপ
মানিকছড়ির সেমুতাং গ্যাস ক্ষেত্র : নয়া দিগন্ত -

১৯৬৩ সালে আবিষ্কৃত খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার সেমুতাং গ্যাস ফিল্ড একটি সম্ভাবনাময় গ্যাসক্ষেত্র। ২০১১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উৎপাদন শুরু হয়। প্রথম দিকে দৈনিক গড়ে ১৪-১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলেও বর্তমানে প্রতিদিন মাত্র .৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি কূপ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ বাড়াতে সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছে বাপেক্স।
জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে ব্রিটিশ কোম্পানির একটি গ্যাস অনুসন্ধানী দল সেমুতাং গ্যাস ক্ষেত্রটির সন্ধান পান। পরে একে একে পাঁচটি কূপের মাধ্যমে ১৯৬৯ সালে পরীক্ষামূলকভাবে টানা এক বছর গ্যাস ও তেল উত্তোলনে বিপুল গ্যাস ও তেল মজুদের সন্ধান পায় কোম্পানিটি। এই খবর জানাজানি হলে ২ নম্বর কূপে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় সন্ত্রাসীরা। এতে রিগ মেশিনসহ ওয়েল হেড ভূগর্ভে তলিয়ে যায়। ফলে থমকে যায় গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রম। ১৯৮৩ সালে পেট্রোবাংলা আবার গ্যাস ক্ষেত্রটি পুরোদমে চালু করলেও হঠাৎ দুইজন প্রকৌশলী অপহরণের শিকার হয়। পরে ১৯৯৪, ১৯৯৭, ২০০০ ও ২০০৪ সালে বিভিন্ন কোম্পানির সাথে চুক্তি ও গ্যাসের ব্যবহার নিয়ে পেট্রোবাংলার সিদ্ধান্তহীনতায় গ্যাস ক্ষেত্রটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এই পরিত্যক্ত গ্যাস ক্ষেত্র নিয়ে পরিকল্পনা হাতে নেয়। ফলে ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রথমে ৫ নম্বর কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলনে যায় বাপেক্স। গ্যাসফিল্ড থেকে পাইপলাইনে ৬৫ কিলোমিটার দূরে বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রামে গিয়ে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয় সেমুতাং গ্যাস। শুরুতে গ্যাসের গতি ১৫-১৭ মিলিয়ন ঘনফুট থাকলেও তিন বছরের মধ্যে গ্যাসের গতি কমে যায়! ফলে বাপেক্সের অধীনে পুরনো ১ নম্বর কূপের পাশে ৬ নম্বর কূপ খনন শুরু করে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রমের দেশীয় সহযোগী প্রতিষ্ঠান কে এন। ২০১৪ সালের জানুয়ারি-এপ্রিল মাসের খননপ্রক্রিয়া শেষে ১২ এপ্রিল থেকে ৩ ডিসেম্বর (প্রায় ৮ মাস) গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হতে থাকে। শুরুতে দৈনিক গড়ে সাড়ে চার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেত। এক পর্যায়ে গ্যাসের চেয়েও পানি বেশি উঠতে থাকায় এই ৬ নম্বর কূপে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়। পরে আবার সংস্কার শেষে ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে আবারো এই কূপ থেকে গ্যাস সরবরাহ হতে থাকে। ২০১৮ সালে বাপেক্স সেমুতাং সাউথ-১ নামে ৭ নম্বর কূপ খননে গেলেও খননপ্রক্রিয়া শেষে গ্যাসের মজুদ না পেয়ে তা বন্ধ করে দেয়। এ দিকে গত ১৮ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে ৫ নম্বর কূপটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে ৬ নম্বর কূপ থেকে প্রতিদিন গড়ে . ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হওয়ায় বাপেক্স ৫ নম্বর কূপটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এই কূপ সংস্কারে সফলতা পেলে পরবর্তীতে ৬ নম্বর কূপটিও সংস্কার করবে বলে বাপেক্স সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
সেমুতাং গ্যাস ফিল্ড এলাকার বাসিন্দা ও সাবেক জনপ্রতিনিধি মো: এনামুল হক বলেন, এই পার্বত্য জনপদের সম্পদ জাতীয় গ্রিডে অবদান রাখচ্ছে। তবে আমাদের দুঃখ একটাই আমরা বাতির নিচে থেকেও অন্ধকারে বসবাস করছি!
স্থানীয় বাসিন্দা মো: আমজাদ হোসেনের দাবি, এই যোগ্যাছোলা ইউনিয়নে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। সরকার একটু মানবিক হলে সেমুতাং থেকে আমাদেরকে বিদ্যুৎ দিতে পারেন।
সেমুতাং গ্যাস ফিল্ডে দায়িত্বরত ম্যানেজার (প্রোডাকশন) মুহাম্মদ মাহিনূর রহমান কূপ সংস্কার, ৫ ও ৬ নম্বর কূপে গ্যাসের মজুদ কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বহিঃবিশ্বে যেভাবে গ্যাসের দাম বাড়ছে এবং দেশে প্রতিনিয়ত চাহিদা বাড়ায় নতুন কূপ খনন ও সংস্কারের মাধ্যমে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে নানা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে বাপেক্স। এরই অংশ হিসেবে সম্ভাবনাময় গ্যাস ক্ষেত্র সেমুতাংয়ে আপাতত ৫ নম্বর কূপটি বাপেক্সের নিজস্ব উদ্যোগে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এটিতে সফল হলে পরবর্তীতে ৬ নম্বর কূপটিও সংস্কারসহ আগামী দিনে নতুন কূপখননেও বাপেক্সের পরিকল্পনা রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement