৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ছেলের জন্য আইসিইউ বেড ছেড়ে দিয়ে মায়ের মৃত্যু, সিদ্ধান্ত কে দিয়েছিল?

আইসিইউতে একজন রোগীকে সেবা দেয়া হচ্ছে। - ছবি : বিবিসি

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে একজন মুমূর্ষু মা তার ছেলের জন্য নিজের আইসিইউ বেড ছেড়ে দেয়ার কিছুক্ষণ পর শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন।

হৃদয়বিদারক এই ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া এবং আইসিইউ কনসালট্যান্ট ডা: রাজদ্বীপ বিশ্বাস এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত ১৫ জুলাই চট্টগ্রাম শহরের সিএমপি কলোনি এলাকার বাসিন্দা, ৬৫ বছর বয়সী কানন প্রভা পাল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে মহিলা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হন।

এর কয়েকদিন পর তার ছেলে ৪৩ বছর বয়সী শিমুল পালও করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন একই হাসপাতালের পুরুষ আইসোলেশন ওয়ার্ডে।

এরপর মায়ের শারীরিক অবস্থার ক্রমেই অবনতি হতে থাকে।

এক প্রকার সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে ২২ জুলাই কোভিড ইউনিটের তাৎক্ষণিক খালি থাকা একটি নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র- আইসিইউ বেডে দ্রুত ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার ২৭ জুলাই পর্যন্ত তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।

‘মায়ের অবস্থা অনেক ক্রিটিকাল ছিল’
এদিকে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন ছেলের অক্সিজেন স্যাচুরেশনও দ্রুত নেমে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।

কিন্তু জেনারেল হাসপাতালসহ চট্টগ্রামের কোনো হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি পাওয়া যায়নি।

ছেলের অবস্থা খুব খারাপ জানতে পেরে মৃত্যুশয্যায় থাকা মা নিজের আইসিইউ বেড ছেড়ে দিয়ে ছেলেকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য চিকিৎসকদের ইশারা করেন, এমন খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।

তবে, বিবিসি বাংলা হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসকের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তারা সকলেই জানিয়েছেন, এ বিষয়টা তারা ‘অবগত নন’।

তবে ডা: রাজদ্বীপ বিশ্বাস বলেন, তখন ওই মায়ের অবস্থা বেশ ক্রিটিক্যালই ছিল।

‘মা আইসিইউতে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে থাকলেও তার অবস্থা অনেক ক্রিটিকাল ছিল, কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন বার বার কমে যাচ্ছিল। পরে ছেলেরও অক্সিজেন কমতে থাকলে তারও আইসিইউ সাপোর্টের দরকার হয়। কিন্তু কোথাও কোনো আইসিইউ (বেড) খালি ছিল না।’

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ বেড আছে ১৮টি। সংকটাপন্ন রোগীর চাপ বাড়ায় সব বেডই গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই একদম পূর্ণ বলে তিনি জানান।

পরিবারের অনুরোধ
মায়ের এই ক্রিটিক্যাল পরিস্থিতির খবর যখন চিকিৎসকরা পরিবারের সদস্যদের জানান, তখন পরিবারের সদস্যরাই শিমুল পালকে তার মায়ের আইসিইউতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত দেয় বলে হাসপাতালটির চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, পরিবারের সদস্যরা অনুরোধ করেন যেন মা প্রভা পালকে আইসোলেশনে চিকিৎসা দিয়ে, তার জায়গায় ছেলে শিমুল পালকে আইসিইউ সাপোর্ট দেয়া হয়।

পরিবারের অনুরোধে এবং তাদের থেকে লিখিত অনুমোদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে মুমূর্ষু মাকে আইসিইউ থেকে বের করে আইসোলেশন সেন্টারে রাখা হয়। আর ওই আইসিইউতে জায়গা দেয়া হয় ছেলেকে।

আইসিইউ থেকে বের করার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই মায়ের শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে কয়েকঘণ্টার মাথায় করোনার কাছে হার মেনে মারা যান এই মা।

করোনা ওয়ার্ডের আইসিইউ বেড ছেলের প্রয়োজনে ছেড়ে দেয়া এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার এই ঘটনা নাড়া দিয়েছে চিকিৎসকদেরও।

‘ঘটনাটি খুব মর্মান্তিক। এই ধরনের পরিস্থিতিতে মানসিক শক্তি নিয়ে কাজ করাটাও একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। কিন্তু আমাদের তো ভেঙে পড়ার উপায় নেই। যতটুকু আছে, সেটা দিয়েই কাজ করে যেতে হবে,’ বলেন ডা: রাজদ্বীপ বিশ্বাস।

মায়ের জীবন ত্যাগের মধ্য দিয়ে আইসিইউ শয্যা মিললেও এখন ছেলের অবস্থাও সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আইসিইউ ইনিচার্জ ডা: তানজিম আহমেদ।

তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৬৫তে নেমে গেছে যেখানে কিনা ৯০-এর ওপর থাকার কথা।

তাকে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দেয়া সত্ত্বেও অক্সিজেন স্যাচুরেশন বার বার নেমে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement