১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

চাঁদপুর থেকে দুই মাস পর লঞ্চ চলাচল শুরু

স্বাস্থ্যবিধির কোনো তোয়াক্কা নেই
চাঁদপুর থেকে দুই মাস পর লঞ্চ চলাচল শুরু -

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে টানা দুই মাসেরও বেশি সময়ের পর রোববার থেকে শুরু হয়েছে চাঁদপুরের সাথে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার লঞ্চ চলাচল। তবে শুরুর দিনেই সরকারি নিয়মনীতি ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগ উঠেছে লঞ্চকর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। যাত্রী ও লঞ্চ কর্তৃপক্ষ কেউ মানছে না সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি। রোববার সকাল সাড়ে ৭টায় এমভি সোনার তরী লঞ্চ চাঁদপুর নৌ-টার্মিনাল থেকে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এমভি রফরফ লঞ্চ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যাত্রীদের লঞ্চে উঠানো এবং বাড়তি টিকেট বিক্রি করে। এ জন্য লঞ্চটির ৩ জন স্টাফকে পুলিশ আটক করে। পরে সতর্ক করে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২৫ মার্চ থেকে লকডাউনের ফলে ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সাথে চাঁদপুরের লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

রোববার সরেজিমন লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সামাজিক দূরত্ব বজায়ে রাখার কথা থাকলেও মানা হয়নি তা। অনেক যাত্রীর মুখে মাস্ক ছিল না। তাছাড়া লঞ্চ কর্তৃপক্ষের নিকট থেকেও দেখা যায়নি বিশেষ কোন ব্যবস্থা। লঞ্চগুলোতে হ্যান্ড স্যানেটাইজারের ব্যবস্থা বা জীবানুনাসক দ্রব্য স্প্রে করতে দেখা যায়নি। অতীতের সময়ের মত তারা স্বাভাবিকভাবেই যাত্রী পরিবহন করছে। কোন ধরনের নিয়মনীতি না মেনেই যাত্রীরা লঞ্চে যাত্রা করছেন। বিশেষ করে আশপাশের চরাঞ্চল থেকে নৌকায় করেও যাত্রীদের লঞ্চঘাটে আসতে দেখা যায়।

চাঁদপুর থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন নৌরুটে প্রায় অর্ধশত লঞ্চ চলাচল করে থাকে। নিরাপদ, আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী হওয়ায় চাঁদপুর হয়ে আশপাশের অনেক মানুষ লঞ্চে করে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকেন।

লঞ্চের কয়েকজন যাত্রী জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। আমাদের অফিসের কাজে যোগ দেয়ার জন্য আমরা ঢাকা যাচ্ছি। কিন্তু করোনা সংক্রমণরোধে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে তেমন কোন ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। অনেক যাত্রীর মুখে মাস্কও পরা নেই। এভাবে ঢালাওভাবে লঞ্চ চলাচল করলে করোনাভাইরাস আরো বাড়তে পারে।

চাঁদপুর জেলা বন্দর কর্মকর্তা আ. রাজ্জাক বলেন, দীর্ঘ দুই মাসের বেশি সময় পর ৩১মে রোববার থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। ঘাটে লঞ্চের সংখ্যা কিছুটা কম থাকায় লঞ্চ ছাড়ার সময়সূচি সঠিকভাবে মানা যায়নি। তবে কাল থেকে লঞ্চের সূচি মেনে চলাচল করবে। লঞ্চগুলো যেন অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা তৎপর রয়েছি। কোন লঞ্চ কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিজেদের সুরক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চে যাতায়াত করার যাত্রীদের অনুরোধ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে রফরফ লঞ্চের মালিক প্রতিনিধি বিপ্লব সরকার জানান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হলে যে লঞ্চটির ধারণক্ষমতা ৫০০ সেই লঞ্চ নিতে পারবে মাত্র ২শ যাত্রী। এক্ষেত্রে তাদের লঞ্চগুলোর ফুয়েল কস্ট আছে। ভাড়া না বাড়ালে তাদের পোষাবে না। এখন যাদের পোষাবে তারা লঞ্চ চালাবে আর যাদের পোষাবে না তারা স্টাফ সংকটে লঞ্চ বন্ধ রাখবে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ও আছে। যারা সরাসরি পাবলিকের সাথে ডিলিংস করবে তাদের সেফটির বিষয় আছে। তাদেরকে পিপিই পরে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, চলবে সীমিত আকারে। চাঁদপুর রুটে প্রায় ১০টি লঞ্চ চলাচল করবে। এর মধ্যে রয়েছে সোনারতরি কোম্পানির ৬টি লঞ্চের মধ্যে ২টি, জমজম কোম্পানির ১টি, হাইস্পিড কোম্পানির ২টি, রাসেল ১টি। এছাড়া রফরফ কোম্পানির ৩টি লঞ্চের মধ্যে ১টি চলতে পারে। আর চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটে আপাতত ৬টি লঞ্চ চলবে। তিনি আরো বলেন, চাঁদপুর থেকে ঢাকা যেতে সাধারণ ডেকে ভাড়া আগে ছিল ১০০ টাকা। এখন হয়তো ভাড়া নিতে হবে দেড়শ’ টাকা। তা না হলে আমাদের পোষাবে না।

আর সোনারতরী লঞ্চের সুপারভাইজার সাইফুল ইসলাম বলেন, চাঁদপুর-ঢাকা রুটে ২৪টি লঞ্চ আছে। লঞ্চ চালাতে সবাই আগ্রহী। তারা যার যার টাইম-সিডিউল অনুযায়ী চলবে। যাত্রী বেশি হলেতো লঞ্চ বেশি ছাড়তেই হবে। আমাদের ৩টি লঞ্চ রেডি আছে। বাকিটা মালিকপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে লঞ্চে তিনফুট দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা বাস্তবায়ন কঠিন হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে আমাদের লঞ্চগুলো চলাচল করবে। তিনি বলেন, আমরা আপাতত নির্ধারিত ভাড়াতেই লঞ্চ চালাবো। দু’ চারদিন ভাড়ার বিষয়টি অবজারবেশনে থাকবে। নির্ধারিত ভাড়ায় লোকসান হলেতো আর লঞ্চ চালানো সম্ভব হবে না।

এদিকে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে চাঁদপুর থেকে চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রেলপথে মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন ও বিভিন্ন সড়কে বাস চলাচল করছে।


আরো সংবাদ



premium cement