২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চান্দিনায় করোনা উপেক্ষা করে ৩ ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ

চান্দিনায় করোনা উপেক্ষা করে ৩ ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ - ছবি: নয়া দিগন্ত

বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস সংক্রামণ উপেক্ষা করে কুমিল্লার চান্দিনায় বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেছে ২টি মিলের সহস্রাধিক শ্রমিক।

রোববার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত টানা ৩ ঘন্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা উপজেলার পশ্চিম বেলাশহর-হাড়িখোলা এলাকা অবরো করে রাখে তারা।

পরে পুলিশের তৎপরতায় অবরোধ তুলে নেয় আন্দোলনরত শ্রমিকরা। করোনাভাইরাস সতর্কতায় মহাসড়কে গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরও টানা তিন ঘন্টা অবরোধে ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। চান্দিনা থানা পুলিশ, দেবীদ্বার থানা পুলিশ ও ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিস্তার রোধে গত ২৬মার্চ থেকে চান্দিনা ও দেবীদ্বার উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন সানানগর এলাকার ঊষা জুট মিল ও নূরীতলা এলাকা আশা জুট মিলের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। সরকারি বন্ধের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার পর ৫ এপ্রিল খোলার কথা ছিল। পরবর্তীতে মিলের ওই ছুটি ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।

রোববার সকাল ৮টা শ্রমিকরা মিলে এসে মিল বন্ধ দেখে তাদের বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে।

শ্রমিক রাবেয়া বেগম জানান, ২৫ মার্চ পর্যন্ত আমরা কাজ করার পর আমাদের ৩ সপ্তাহের বেতন বাকি থাকে। তখন আমাদেরকে বলেছিল ৫ তারিখ মিল খোলার পর আমাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করবে।  কিন্তু আজ (রবিবার) মিলে এসে দেখি মিল বন্ধ। এদিকে সরকার থেকে নাকি প্রতি শ্রমিকের জন্য ৫ হাজার টাকা এসেছে। ভাইরাসের কারণে মিল বন্ধ থাকলেও সরকারি ৫ হাজার টাকা ও আমাদের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবী করি। কিন্তু মিল কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো কথা পাত্তাই দিচ্ছে না।

একাধিক শ্রমিক জানান, টানা ১০ দিন মিল বন্ধ থাকায় আমরা না খেয়ে আছি। অন্যান্য মিলে শ্রমিদের বেতন পরিশোধ করার পাশাপাশি সরকারি ৫ হাজার টাকাও প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু উষা ও আশা জুট মিলে আমাদের পাওনা বেতনও দিচ্ছে না।

মিলের সিবিএ সভাপতি সুজন মুন্সি জানান, মিলের অর্থনৈতিক সংকট থাকায় পাট কেনার জন্য গত দুই মাস পূর্বে মালিক ও শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে ৩ সপ্তাহের বেতন বকেয়া রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। হঠাৎ করোনাভাইরাসের প্রাদূর্ভাব দেখা দেওয়ায় ২৫ মার্চ শ্রমিকদের এক সপ্তাহের বেতন প্রদান করে মিল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। মিল খোলার পর তাদের বকেয়া ২ সপ্তাহের বিল প্রদান করার কথা দেয়া হয়।

কিন্তু শ্রমিকরা একটি গুজব রটিয়েছে যে, সরকার শ্রমিকদের পাথাপিছু ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছে সেটা মিল কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দিচ্ছে না। এমন গুজবকে পুঁজি করে অযথা আন্দোলন শুরু করেছে। আমি মিলের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেছি যত দ্রুত সম্ভব তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে।

চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো: আবুল ফয়সল জানান, সরকারি ৫ হাজার টাকার অনুদানের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এমন একটি গুজব ছড়িয়ে মিলের শ্রমিকদের সাথে স্থানীয় কিছু অতি উৎসাহী লোক এক হয়ে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। যা বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণ বিস্তার ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। আমরা মিল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছি, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাসে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন।

চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. আহসানুল হক জানান, গত এক সপ্তাহ পূর্বে দাউদকান্দিতে একটি আন্দোলনের পর দাউদকান্দিতে করোনা সন্দেহে একটি বাড়ি লক ডাউন করা হয়েছে। এসব আন্দোলনে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে গেল।


আরো সংবাদ



premium cement