২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নেছারাবাদে এনজিওর ঋণের চাপে গৃহবধূ আত্মহত্যার অভিযোগ

নেছারাবাদে এনজিওর ঋণের চাপে গৃহবধূ আত্মহত্যার অভিযোগ - ছবি : নয়া দিগন্ত

‘এই রকম কুলাঙ্গার ছেলে আপনি কেন জন্ম দিয়েছেন। এই ছেলে জন্ম না দিয়া কলাগাছ জন্ম দিতেন, মানুষ কলা খাইত। আপনি মরেন না কেন? আপনি মরলেও আমরা বেচে যেতাম’ এনজিওর মাঠ কর্মকর্তাদের এমন অপমানজনক কথা সইতে না পেরে জেলার নেছারাবাদে এক হতদরিদ্র পরিবারের তসলিমা বেগম (৫২) নামের এক গৃহবধূ গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

এমন অভিযোগে‘ডাক দিয়ে যাই' এনজিওর নেছারাবাদ উপজেলার ইন্দেরহাট শাখার ছয়জনকে আসামি করে মৃত তসলিমার ছেলে মো: তামিম শনিবার (১৬ মার্চ) থানায় একটি মামলা করেন।

মামলার আসামিরা হলেন ওই এনজিওর ইন্দেরহাট শাখার ফিল্ড অফিসার সমির চন্দ্র ঘোষ, মো: সাইফুর রহমান, মো: আহাদ হোসেন, নির্বাহী পরিচালক মো: শাহজাহান গাজী, এরিয়া ম্যানেজার মো: আসাদ্দুজামান মিলন, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো: দ্বীপঙ্কর শীল।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) উপজেলার উত্তর পশ্চিম সোহাগদল গ্রামের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ওই গৃহবধূ এনজিওর মাঠ কর্মীদের অপমানজনক কথা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। মামলায় আসামিদের পরস্পর যোগসাজসে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়ায় ওই গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, বাদির ছোট ভাই মিরাজ নিজ স্ত্রীর নামে ডাকদিয়া যাই এনজিওর ইন্দেরহাট শাখা থেকে ৪০ হাজার টাকার একটি ঋণ নেয়। যে ঋণে মিরাজ তার মা তসলিমাকে স্বাক্ষী রাখেন। মিরাজ কয়েকটি কিস্তি পরিশোধের পর বাড়ি থেকে সটকে পড়ে। কিস্তি খেলাপি হওয়ায় এনজির লোকেরা যখন তখন বাড়িতে এসে মাকে চাপ দিচ্ছিল। ঘটনার দিন ১৩ মার্চ সন্ধ্যার পরে অভিযুক্তরা বাড়িতে এসে মাকে অকথ্য ভাষায় কথা বলে। তাদের অপমানজনক কথা সইতে না পেরে আমার মা ওই রাতেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। পরদিন সকালে বাড়ির পাশে একটি বাগানের মধ্য জাম্বুরা গাছে গলায় লাইনোর দঁড়ি পেচানো ঝুলন্ত লাশ পেয়েছি।

তিনি বলেন, ‘ডাক দিয়ে যাই’ এনজিওর লোকদের এমন কথায় মা আত্মহত্যা করেছেন।

নিহত তসলিমার স্বামী দিনমজুর মো: মোস্তফা অভিযোগ করে বলেন, যেহেতু তাদের ছোট ছেলে মিরাজ লোন নিছে। তাই এনজিওর চাপে আমরা স্বামী স্ত্রী দিনমজুরি করে সপ্তাহে তিনশত টাকা কিস্তি দিতে চেয়েছিলাম। তারা না মেনে আমার স্ত্রীকে যা ইচ্ছা তাই বলেছে। তাদের কথা সইতে না পেরে স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন।

ডাক দিয়ে যাই এনজিও-এর পরিচালক মো: তাজুল ইসলাম খান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের ঋণগ্রহীতা কলি বেগম নামে এক গৃহবধূ অভিযোগকারী পরিবারের পুত্রবধূ। তারা ওই বাসাতে থাকত। তাই আমার অফিসের লোক তাদের বাসায় গিয়ে কলির শাশুড়ি তসলিমার কাছে কলি ও তার স্বামী মিরাজের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিল মাত্র। কোনো ধরনের অপমানজনক কথা বলা হয়নি।

নেছারাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: গোলাম সরোয়ার জানান, এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।


আরো সংবাদ



premium cement