০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


হাজার কোটি টাকার বৈশাখী বস্ত্র নিয়ে দিশেহারা তাঁতি ও ব্যবসায়ীরা

পরপর দু’বছর করোনায় পর্যুদস্ত পাবনার তাঁতশিল্প
-

করোনায় এবারো হচ্ছে না বৈশাখী মেলা। বৈশাখী মেলা উপলক্ষে বিশেষ ধরনের উৎপাদিত কাপড় বিক্রি করতে না পারায় লোকসানে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের তাঁত মালিক ও ব্যবসায়ীরা। হাজার কোটি টাকার উৎপাদিত তাঁতবস্ত্র বিক্রি করতে না পারায় অনেক মালিক বাধ্য হয়ে তাঁত কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রায় পাঁচ লাখ তাঁতশ্রমিক বেকার হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছেন।
তাঁত মালিকরা বলছেন, উৎপাদিত বস্ত্র বিক্রি করতে না পারায় তাঁতশিল্প ও এ শিল্পের সাথে জড়িতরা লোকসানে লোকসানে জর্জরিত। লকডাউনের কারণে বৈশাখী মেলা না হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বৈশাখী কাপড় কেনার জন্য আসছেন না বেপারিরা। তাই কাপড়ও বিক্রি হচ্ছে না। বৈশাখ উপলক্ষে বিশেষ ধরনের শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ তৈরি করা হয়। অন্য মৌসুমে এই তাঁতবস্ত্র বিক্রি হয় না। গত বছর ও এ বছর মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার বৈশাখী কাপড় একেকজনের গুদামে পড়ে রয়েছে। সরকারিভাবে তাঁতশিল্পের সাথে জড়িতদের প্রণোদনার ব্যবস্থা না করলে ভবিষ্যতে এ অবস্থা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে।
তাঁত কারখানা মালিক ও ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, করোনার পর থেকেই তাঁতবস্ত্রের ব্যবসায় মন্দাভাব শুরু হয়। বর্তমানে মন্দাভাব স্থায়ী রূপ নিয়েছে। একই সাথে তাঁতের উৎপাদিত শাড়ি-লুঙ্গি বিক্রি প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে। অব্যাহত লোকসানে তাঁতিরা পুঁজি হারিয়ে ফেলেছেন। বিশেষ করে প্রান্তিক তাঁতিরা চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছেন। ঋণ পরিশোধ ব্যর্থ হয়ে অনেকেই তাঁত বিক্রি করে কেউ পোশাকশিল্প শ্রমিক, কেউবা মাটি কাটা শ্রমিক আবার কেউ রিকশাচালকের কাজ করে পরিবার বাঁচাচ্ছেন। কেউ কেউ পুঁজি হারিয়ে পাওনাদারের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের প্রায় অর্ধেকের বেশি তাঁত কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের সাঁথিয়া ও শাহজাদপুর বেসিকসেন্টর সূত্রে জানা গেছে, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ তাঁতসমৃদ্ধ জেলা। জেলা দু’টির সাঁথিয়া, সুজানগর, বেড়া, চৌহালীর এনায়েতপুর, শাহজাদপুর, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ সদর ও উল্লাপাড়া উপজেলায় তাঁতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ২০০৩ সালের তাঁত বোর্ডের জরিপ অনুযায়ী হস্তচালিত তাঁতের সংখ্যা দুই লাখ ৬০ হাজার এবং বিদ্যুৎচালিত পাওয়ারলুমের সংখ্যা প্রায় ৫৫ হাজার। এই তাঁতশিল্পের সাথে জড়িত প্রায় ছয় লাখ পরিবারের ৩০ লাখ মানুষ। এ ছাড়া অন্যান্য ব্যবসা ও পেশার লোকজনও তাঁতশিল্পের ওপর নির্ভরশীল। তাঁতশিল্পকে কেন্দ্র করে চৌহালীর এনায়েতপুর, শাহজাদপুর, বেলকুচি আতাইকুলা চারটি কাপড়ের হাট গড়ে উঠেছে।
স্থানীয় বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে ও কাপড় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুর হাটে প্রতি সপ্তাহের চার দিন (দিন-রাত মিলে) কাপড় বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাপড় ব্যবসায়ীরা এই হাটে এসে শাড়ি, লুঙ্গি কিনে থাকেন। এ ছাড়া প্রতি হাটে ভারতে শাড়ি ও লুঙ্গি রফতানি হয়ে থাকে। করোনার আগে প্রতি হাটে ব্যাংক ও নগদসহ ২০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হতো। বর্তমানে কাপড় ক্রয়-বিক্রয়, রফতানি ও ব্যাংক লেনদেন প্রায় ৭০ শতাংশে নেমে এসেছে। সেই সাথে খেলাপি ঋণের সংখ্যা বেড়েছে।
পাবনার বেড়া উপজেলার হাতিগাড়া গ্রামের নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন তাঁত মালিক জানান, পুঁজি হারিয়ে তাঁত বিক্রি করে দিয়ে রাতের আঁধারে গ্রাম ছেড়ে সাভারে চলে গেছেন। পোশাক কারখানায় কাজ করছেন। এলাকায় একসময় প্রচুর দাপট ছিল। অনেক দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করেছি। এখন নিঃস্ব হয়ে মানসম্মানের ভয়ে বাধ্য হয়ে এলাকা ছেড়েছি।
এনায়েতপুরের খুকনী গ্রামের মিল্টন কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছরের ব্যবসা জীবনে এমন ভয়াবহ অবস্থা কোনো দিন দেখিনি। কাপড় বিক্রি করে শ্রমিকের মজুরির টাকাই জোগাড় হচ্ছে না। গুদামে কয়েক কোটি টাকার কাপড় পড়ে আছে। জমি বিক্রি করে বাংকের সুদের ১৬ লাখ টাকা দিয়েছি। মোট ৩০৪টি তাঁতের মধ্যে মাত্র ৫০টি তাঁত কোনো রকমে চালু রেখেছি।
রফতানিকারক মেসার্স রায় ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকার নিত্যনন্দ রায় বলেন, শুল্কমুক্ত হওয়ায় তিন বছর আগে ছয়টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এনায়েতপুর ও শাহজাদপুরের হাট থেকে প্রতি সপ্তাহে চার লাখ পিস শাড়ি ও লুঙ্গি ভারতে রফতানি করত। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে কাপড় রফতানি হতো। করোনার কারণে বিদেশে তাঁতবস্ত্র রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ তাঁতবস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হাসান বলেন, তাঁতশিল্পের প্রতি সরকারের কোনো সুনজর নেই। সারা দেশের প্রায় তিন কোটি লোক এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। করোনার শুরু থেকে অব্যাহত লোকসানের কারণে প্রায় ৭০ ভাগ তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁতমালিক, শ্রমিক ও কাপড় ব্যবসায়ীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রান্তিক তাঁতিরা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে সবাইকে পথে বসতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুক্তরাজ্যের সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ভিসা জটিলতায় আয়ারল্যান্ড সিরিজে অনিশ্চিত আমিরের জামালপুরে অ্যাজেন্টদের মারধরের অভিযোগ, আহত ৩ ট্রাম্পের সাথে যা ঘটেছিল পর্ন তারকা স্টর্মির মধ্য বয়স থেকে যে অভ্যাসগুলো আপনার আয়ু বাড়াবে শাল্লায় ২ চেয়ারম্যান সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, কারাগারে ৪ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে যুক্তরাজ্যের এফসিডিও'র ইন্দো-প্যাসিফিক প্রতিমন্ত্রীর সাক্ষাৎ রাফায় ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে : রাশিয়া মিরসরাইয়ে জাল ভোট, ৩ নির্বাচনী কর্মকর্তা আটক উপজেলা নির্বাচনের কেন্দ্রগুলো খাঁ খাঁ করছে : মেজর হাফিজ হজযাত্রীদের জীবন আল্লাহর রাস্তায় উজাড় করে দিতে হবে : জামায়াত আমির

সকল