০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


স্লুইসগেট বন্ধ করে মাছ চাষ

বাগমারায় ১০ হাজার একর জমির ফসল হুমকিতে

-

রাজশাহীর বাগমারা থানা সংলগ্ন সোনাবিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম স্লুইসগেটের মুখ বন্ধ করে দিয়ে অবৈধভাবে মাছ চাষ করছেন এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল। এতে কৃত্রিম জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় ওই বিলের প্রায় ১০ হাজার একর জমির আউশধান, পানবরজ ও পটোলসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ওই বিলের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া কুঁচামারা দাঁড়ার লিজ বাতিল করে বিলটি উন্মুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে এলাকার কৃষক ও মৎস্যজীবীদের পক্ষ থেকে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি আবেদন করা হয়েছে। ওই আবেদনপত্রে বাগমারা গ্রামের কার্ডধারী মৎস্যজীবী মাহাবুর রহমানসহ গরীপুর ও বাসুপাড়া ইউনিয়নের চার শতাধিক কৃষক ও মৎস্যজীবীর স্বাক্ষর রয়েছে। আবেদনের অনুলিপি রাজশাহীর জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরেও দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার গনিপুর ও বাসুপাড়া ইউনিয়নের সোনাবিলের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া মাঝিগ্রাম থেকে বাগমারা থানা সংলগ্ন স্লুইসগেট হয়ে রানী নদীর সাথে সংযোগপূর্ণ কুঁচামারা দাঁড়াটি আজীবন ধরে করমুক্ত ও উন্মুক্ত ছিল। ওই বিলে তথা কুঁচামারা দাঁড়ার উন্মুক্ত জলাশয়ে এলাকার দরিদ্র মৎস্যজীবীরা আজীবন স্বাধীনভাবে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তা ছাড়া ওই বিলের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া কুঁচামারা দাঁড়ার মুখে থানা সংলগ্ন স্লুইসগেট দিয়ে কৃষকরা সুবিধা মতো বিলে প্রয়োজনীয় পানি প্রবেশ করিয়ে নিয়ে আবার কখনো অতিরিক্ত পানি বের করে দিয়ে ফসল চাষ করে আসছিলেন। সম্প্রতি এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল দাঁড়াটি লিজ নিয়ে বিল সংলগ্ন এলাকার মৎস্যজীবীদের উচ্ছেদ করে দিয়ে এখন পুরো বিলটিই দখল করে নিয়েছে। প্রভাবশালী ওই মহল ক্ষমতার দাপটে বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম স্লুইসগেটের মুখ বন্ধ করে দিয়ে অবৈধভাবে মাছ চাষ শুরু করেছে। এতে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় বিলের প্রায় ১০ হাজার একর জমির আউশধান, পানবরজ ও পটোলসহ বিভিন্ন ফসল এখন হুমকির মুখে পড়েছে। ২-১ দিনের মধ্যেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা না হলে ওই বিলের চাষকৃত সব ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ দিকে বাগমারা গ্রামের কার্ডধারী মৎস্যজীবী মাহাবুর রহমান, বালানগর গ্রামের আক্কাছ আলী ও আশরাফুল ইসলাম বলেন, সেই ছোট্ট বেলা থেকেই আমরা ওই বিলের পানিতে স্বাধীনভাবে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলাম। কিন্তু প্রভাবশালীরা বিলটি দখলে নেয়ার পর থেকেই আর ওই বিলে মাছ ধরতে পারছি না। করোনার কারণে তারা দূরে কোনো কাজেও যেতে পারছেন না। এ অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটছে আমাদের বলে মনের কথা ব্যক্ত করতে গিয়ে এক পর্যায়ে তারা কেঁদে ফেলেন।
উপজেলা জলমহাল ইজারা কমিটির সভাপতি বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ বলেন, এ বিষয়ে এলাকার কৃষক ও মৎস্যজীবীদের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের কথা বিবেচনা করে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বলেন, পানি চলাচল বন্ধ করে কেউ মাছ চাষ করতে পারবে না। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে সরকারি নির্দেশনাও রয়েছে। তারপরও কেউ ব্রিজ, কালভার্ট ও স্লুইসগেটের মুখ বন্ধ করে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানাসহ দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement