০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণের’ গুরুত্বপূর্ণ দিক

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণের’ গুরুত্বপূর্ণ দিক। - ছবি : সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার রাতে মার্কিন পার্লামেন্ট অর্থাৎ কংগ্রেসের দু’কক্ষের সামনে যে ভাষণ দিয়েছেন তার বিষয়বস্তুর সাথে সাথে ভাষণের প্রেক্ষাপটও ছিল সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ভাষণ এমন একসময় তিনি দিলেন, যখন আগামী নির্বাচনে আরেক দফা প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছেন বাইডেন।

তার এই বার্ষিক ভাষণ ছিল পার্লামেন্ট সদস্যদের উদ্দেশে, কিন্তু তার বার্তার মূল লক্ষ্য ছিল আমেরিকার জনগণ।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ভাষণের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :

১. আমেরিকাই এক নম্বর অগ্রাধিকার, বৈদেশিক নীতি শেষের বিবেচনা
আমেরিকার আকাশসীমায় চীনা একটি পর্যবেক্ষণ বেলুন ছিল, গত সপ্তাহ জুড়ে আমেরিকার বিশাল বড় একটি খবর। কিন্তু তার ভাষণে প্রেসিডেন্ট বিষয়টিকে তেমন গুরুত্বই দেননি। ভাষণের একদম শেষদিকে খুব সামান্যই প্রসঙ্গটি তিনি তুলেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা গত সপ্তাহে পরিষ্কার করে দিয়েছি যে চীন যদি আমাদের সার্বভৌমত্বকে হুমকিতে ফেলে, আমরা আমাদের দেশকে রক্ষা করবো এবং আমরা তা করেছি।’

চীনা বেলুন নিয়ে ছিল শুধু এই একটি বাক্য। আমেরিকার বৈদেশিক নীতির জন্য বছর খানেক ধরে আরেকটি বড় ইস্যু ছিল ইউক্রেনে রুশ সামরিক হামলা। কিন্তু এ নিয়েও বাইডেন খুবই কম কথা বলেছেন।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন গ্যালারিতে বসা ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতকে সম্ভাষণ জানান। ইউক্রেনকে সাহায্য করার জন্য মিত্র দেশগুলাকে অভিনন্দন জানান। কিন্তু এই ভাষণে তিনি ইউক্রেনের জন্য নতুন কোনো সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেননি।

তুরস্ক ও সিরিয়ায় সোমবারের ভয়াবহ ভূমিকম্পে যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি তিনি।

তার ভাষণের প্রধান বিষয় ছিল অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়, যা নিয়ে আমেরিকার জনগণ চিন্তিত।

কথিত রয়েছে, আমেরিকান জনগণ বৈদেশিক নীতি নিয়ে তখনই মাথা ঘামায় যখন মার্কিন সৈন্যরা বিদেশের মাটিতে প্রাণ হারাতে শুরু করে। মনে হয়, বাইডেন এই ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দিয়েছেন।

২. অর্থনীতির জন্য নেয়া ‘সব কাজ শেষ করা হবে’
জনমত জরিপে দেখা যায় অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিই মার্কিন জনগণের কাছে এক নম্বর অগ্রাধিকার। বেশিরভাগ মানুষ এখন মনে করছে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। পরিস্থিতি ভালো হতে শুরু করলেও মানুষ এখনো তা টের পাচ্ছেনা।

বাইডেন বার বার চেষ্টা করেছেন মানুষকে বোঝাতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কারণ মানুষকে সেটা বোঝাতে পারলেই আগামী নির্বাচনে তার পুনঃনির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

তিনি রেকর্ড মাত্রায় বেকারত্ব কমার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতি ও জ্বালানির চড়া মূল্য। এ দুটি বিষয় গত ১৮ মাস ধরে তার রেটিং কমিয়ে দিয়েছে, নামতে শুরু করেছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন নতুন আইন ও বিধি এনে তিনি আমেরিকার শিল্প উৎপাদন খাতকে চাঙ্গা করেছেন। এখন সময় এসেছে, হাতে নেয়া সমস্ত কাজ শেষ করার।

এই স্লোগান আগামী দিনগুলোতে তার মুখে হয়তো বার বার শোনা যাবে।

জনগণের নজর তিনি ভবিষ্যতের দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করেছেন। কারণ তিনি জানেন বহু মানুষের মনে সন্দেহ রয়েছে যে ৮০ বছর বয়স্ক একজন প্রেসিডেন্ট দেশের জন্য আর কী করার ক্ষমতা রাখেন। বাইডেন বোঝাতে চেয়েছেন যে তার ওই ক্ষমতা এখনো রয়েছে।

৩. রিপাবলিকানদের সাথে ভালো আচরণের চেষ্টা
কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থায় সত্যিই যদি প্রেসিডেন্ট তার অর্থনৈতিক কর্মসূচিগুলো শেষ করতে চান, তাহলে রিপাবলিকান পার্টির সাহায্য তার প্রয়োজন হবে।

বাইডেনের ভাষণের সময় পেছনে ছিলেন কংগ্রেসের নিম্ন-কক্ষ অর্থাৎ প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি। বাইডেনের ‘কাজ সম্পন্ন’ করার মিশনে রিপাবলিকানরা সহযোগী হবে কিনা তা ধারণা করার বড় একটি ব্যারোমিটার হবেন ম্যাকার্থি।

বাইডেন যখন তার প্রথম দু'বছরে ‘দু’দলের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক’ এবং তার সুফল নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন, স্পিকার ম্যাকার্থিকে মৃদু হাততালি দিতে দেখা যায়। এমনকি মাঝেমধ্যে তার হাসিমুখও চোখে পড়ে।

প্রেসিডেন্ট অবকাঠামো নির্মাণে ও মাইক্রোচিপ উৎপাদনের বিনিয়োগের প্রশ্নে বা ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য নিয়ে অথবা সমকামী বিবাহে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা দেয়ার বিষয়ে দু’দলের মধ্যে সহযোগিতার কথা তোলেন।

বাইডেন বলেন, ‘আমরা প্রায়ই শুনি রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে একত্রে কাজ করা সম্ভব নয়। কিন্তু গত দু’বছরে আমরা প্রমাণ করেছি এ কথা সত্যি নয়, যারা এমনটা বলেন তার ভুল বলেন।

তবে পর্যবেক্ষকরা বলতে শুরু করেছেন, আগামী এক বছরে দু’দল একমত হয়ে তেমন কিছুই করতে পারবে না। বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রাধিকার নিয়ে দু’দলের মধ্যে মতভেদ যে বাড়তে শুরু করেছে তা স্পষ্ট।

৪. লড়াইতে পিছপা হননি বাইডেন
তার ভাষণে বাইডেন সরকারি ঋণের সীমা বাড়ানোর কথা তোলার সাথে সাথেই পরিস্থিতি তেঁতে ওঠে। এ ইস্যুতে প্রেসিডেন্টের সাথে কংগ্রেসে রিপাবলিকান পার্টি টানা-হেঁচড়া চালিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রেসিডেন্ট তার ভাষণে আপষের বিন্দুমাত্র ইঙ্গিত দেননি। কিন্তু প্রতিপক্ষ রিপাবলিকানদের খোঁচা দিতে পিছপা হননি।

রিপাবলিকানদের দাবি যে সরকারি ঋণের সাথে সরকারি ব্যয়ের সামঞ্জস্য থাকতে হবে। সে প্রসঙ্গ তুলে বাইডেন বলেন, তার পূর্বসূরি (ডোনাল্ড ট্রাম্প) সরকারি ঋণের বোঝা যেভাবে বাড়িয়েছেন তা অতীতে আর কোনো প্রেসিডেন্ট করেননি।

সাথে সাথে রিপাবলিকান সদস্যরা হৈ-চৈ করে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে ছাড়েননি।

পেছনের দিকে বসা রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য মেজরি টেইলর গ্রিন চিৎকার করে বলেন, প্রেসিডেন্ট একজন মিথ্যাবাদী।

শোনা গেছে যে প্রেসিডেন্টের ভাষণ শুরুর আগে স্পিকার তার রিপাবলিকান সতীর্থদের মুখ সামলাতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ওই পরামর্শে কাজ হয়নি। দু’দলের মধ্যে দূরত্ব যে কত বেশি তার নমুনা আরো একবার বেরিয়ে আসে।

৫. আমন্ত্রিত অতিথিরা কিছু আবেগি মুহূর্তের জন্ম দেয়
প্রতি বছরের স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণের মতো এবারো প্রেসিডেন্ট বাইডেন নতুন কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন যেগুলোর অধিকাংশই আইনে রূপ নেবে তা সম্ভাবনা ক্ষীণ। তার দুটি পুলিশের সংস্কার এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে আইন।

এই দু’প্রস্তাবের সমর্থকরাও ছিলেন অতিথি হিসেবে গ্যালারিতে বসা। ছিলেন সম্প্রতি পুলিশের হাতে নিহত টায়ার নিকোলসের মা-বাবা এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় মনিটরি পার্কে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনার এক ‘হিরো’, যিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল।

তাদের দেখিয়ে প্রেসিডেন্ট কণ্ঠে আবেগ এনে বলেন, ‘এই দুটি বিষয়ে আইন করা জরুরি। এই কক্ষে আজ আমরা যারা রয়েছি তাদের সবারই ভূমিকা নিতে হবে, আমরা আর চোখ বন্ধ করে রাখতে পারি না।’

মেমফিসে পুলিশের পিটুনিতে নিহত নিকোলসের মা-বাবাকে দেখিয়ে বাইডেন পুলিশের সংস্কারে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। নিহত টায়ারের মা রোভন ওয়েলস ও সৎবাবা রডনি ওয়েলস ওই সময় গ্যালারিতে উঠে দাঁড়ান।

বাইডেন বলেন, ‘আপনাদের অনেকেরই হয়তো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা রয়েছে সন্তান হারানোর ব্যথা কতটা প্রবল। কিন্তু একবার ভাবুন আইনের হাতে এক সন্তানের মৃত্যু কতটা কষ্টের হতে পারে।’

তবে বাস্তবতা হচ্ছে পুলিশের সংস্কার বা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন তৈরির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

বরং ‘জাংক ফি’ অর্থাৎ ব্যাংকের বিভিন্ন ফি বা বিমানে সিটের জন্য অতিরিক্ত ফি বন্ধে কিছু করার জন্য প্রেসিডেন্টের আবেদনকে হয়তো রিপাবলিকানরা অনেক বেশি গুরুত্ব দেবে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
কালিগঞ্জে উপজেলা আ’লীগের নেতা সুমন বিজয়ী গাজীপুর সদরে বড় ব্যবধানে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতার বিজয় কুমিল্লায় ৩ শিশুকে বেঁধে নির্যাতন, ট্রাক্টরচাপার চেষ্টা আমিরুলকে হারিয়ে গজারিয়ায় চেয়ারম্যান হলেন জিন্নাহ ফরিদপুর সদরে সামচুল, মধুখালীতে মুরাদ ও চরভদ্রাসনে আনোয়ার বিজয়ী বঙ্গোপসাগরে লবণবাহী ট্রলার ডুবি : ২৬ জেলেকে জীবিত উদ্ধার গ্রাহকের অজান্তে টাকা কেটে নিলে কঠোর ব্যবস্থা : পলক যেসব পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশকে ১.১৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিলো আইএমএফ পিরোজপুরের ৩ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিজয়ীরা হলেন যারা গাজীপুরে কলেজছাত্র খুনের ঘটনায় মূল হোতাসহ গ্রেফতার ২ এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকায় ওয়ার্ল্ড হ্যান্ড হাইজিন ডে পালিত

সকল