০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নভেম্বরের রেইন

-

এক সুনসান নীরবতার সন্ধ্যার গল্প বলছি শোনো। অজানা শঙ্কা আর ভয়ঙ্কর নিস্তব্ধতায় ঘেরা চার পাশ। পুরো আকাশে ছেয়ে গেছে কালো মেঘেদের দল। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায় যেন নেমে আসছে রাজ্যের শীতলতা। বাতাসের প্রবল হিল্লোলে শূন্যে উড়ছে ডালের মজবুত সবুজ পাতারা। জমিনে ভেঙে পড়ছে গাছের পুরু ডালগুলো। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সদ্য আগত সোনারাঙা হেমন্তের সুর। মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে ছোট ও মাঝ বয়সী ধানগাছগুলো। কোথাও যেন আর দাঁড়িয়ে নেই একটি ধানও। বৃষ্টির পানি ও কাদা তো আছেই। কৃষকদের দুরু দুরু মন। এবার আসবে তো সোনা ঘরে। চার পাশ ভরে উঠবে তো ফের কাঁচা ধনের ম ম গন্ধে।
ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে গেছে। থই থই ঘন অন্ধকারে ভরে গেছে চারপাশ। কোনো একটি অজ্ঞাত পোকার ক্ষীণ ডাক শোনা যাচ্ছে থেমে থেমে। এটি ঝিঁঝি পোকা হবে না নিশ্চয়ই। শীতের স্নিগ্ধতা নেই এখন। আছে বর্ষার হিন্দোল। বাতাসের তোড়জোড়।
সময়ের সাথে সাথে স্মৃতিরা এসে ভিড় জমায় হৃদয়ের বেলকনিতে। কিছুটা সুখের কিছুটা দুঃখের। কিছুটা বর্ষার কিছুটা শীতের। অঝোরে ঝরতে থাকা ঘন বৃষ্টির দিনের। কিংবা সকালের মিহি মিহি ঘন কুয়াশার। এই ঋতু বৈচিত্র্যের মায়াবী ভূখণ্ড যেমনই সব চেয়ে নিকটতম প্রেমাষ্পদ তেমনি ভয়ঙ্কর শত্রুপক্ষও। কখন যে কি হয় বলা যায় না। প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে যেমনই বিস্মিত হই তেমনি শঙ্কিত হই এই প্রকৃতি দেখে।
এই সন্ধ্যার সাথে মিশে আছে কত মিলন ও বিচ্ছেদের স্মৃতি। কত ভয় ও আনন্দের স্মৃতি। এই সন্ধ্যায় মিশে আছে খেলার মাঠ ছেড়ে পড়তে বসার সুখ। মিশে আছে প্রবল ঝড়-তুফানের ভয়। মিশে আছে এক আকাশ স্মৃতি-বিস্মৃতির উপাখ্যান।
এ বাদল তাণ্ডব থেমে যাবে। আঁধারের রাত কেটে আবার আসবে সোনালি ভোর। পাখিরা জেগে উঠবে। গাছেরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়বে দুষ্ট ছেলেদের দল। বুড়োরা তাকিয়ে দেখবে আকাশে একদমই মেঘ নেই। প্রকৃতি আবার সাজবে হেমন্তের হৃদয়জুড়ানো সৌন্দর্যে। এভাবেই একসময় থেমে যাবে। নভেম্বরের অনাকাক্সিক্ষত বিস্ময়কর রেইন।


আরো সংবাদ



premium cement