০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


জীবনের বড় ভুল

-


মেহেদী বসে আছে এমন সময় ডাকপিয়ন এসে একটি চিঠি দিয়ে যায়। চিঠিটি খুলতেই মেহেদীর মনে ব্যথার পাহাড় ধসে পড়ে। কারণ হলুদ খামের মধ্যে আবদ্ধ চিঠিটি ছিল একটি তালাকনামা। গ্রামের নাম অচিনপুর। সেই গ্রামে বাস করত একটি ছোট পরিবার। মা-বাবা, ছোট ভাই ও মেহেদীর দিন বেশ ভালোই কাটছিল। বাবা জেলে কৃষিকাজসহ প্রায় সব কাজই করে । আর মা হলো গৃহিণী। ছোট ভাই এবার অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। মেহেদীও লেখাপড়া করে। তবে ছাত্র হিসেবে ততটা ভালো নয়। মেহেদীর আপন চাচা স্বপরিবারে পাশের জেলায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে নিজের বাড়িতে বেড়াতে আসে। মেহেদীর চাচার একটি রূপবতী মেয়ে আছে। নাম স্বর্ণা। স্বর্ণা হলো মা-বাবার একমাত্র কন্যাসন্তান এবং একটি ছেলেও আছে খুব ছোট। মেহেদী ও স্বর্ণা চাচাতো ভাইবোন হিসেবে খুব ভালো সম্পর্কই ছিল। কিন্তু এবার স্বর্ণার ব্যবহার ছিল বিচিত্র ধরনের। সে মেহেদীর থেকে ফোন নম্বর, ফেসবুক আইডি ইত্যাদি চেয়ে নেয় এবং পরের দিন নিজ বাড়িতে ফিরে যায়।

বাড়িতে গিয়ে রাতের বেলায় মেহেদীর কাছে ফোন দিয়ে আলাপ শুরু করে দেয়। তাদের এই সংলাপ প্রতিদিন চলত। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে খুব ভাব জমে যায়। স্বর্ণা মেহেদীকে বলে, আমি তোমাকে ছোট থেকেই ভালোবাসি কিন্তু লজ্জা ও ভয়ের কারণে তোমাকে বলতে পারিনি। আমি সত্যিই তোমাকে মন থেকে ভালোবাসি। এখন থেকে তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্তও বাঁচতে পারব না। কিন্তু ভাগ্যের কী পরিহাস? স্বর্ণার মা-বাবা তার খালাতো ভাই জুয়েলের সাথে বিয়ে দেবে বলে আগে থেকেই জুয়েলের পরিবারের সাথে কথা পাকাপাকি করে রেখেছিল। জুয়েলের মা-বাবা খুশি হয়ে স্বর্ণাকে একটি স্বর্ণের মালাসহ অনেক কিছু উপহার দিয়েছিল। জুয়েল মা-বাবার সবচেয়ে ছোট ছেলে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে বিদেশ চলে যায়। চাকরি করার জন্য। গত পাঁচ বছর ধরে সে মালয়েশিয়া প্রবাসী। মেহেদী ও স্বর্ণার এই প্রেম প্রেম খেলা তারা কেউ জানত না। স্বর্ণা মেহেদীর প্রতি দিনে দিনে এতই আসক্ত হয়ে পড়েছিল যে, একদিন মেহেদীর কাছে ফোন করে বলে, যদি তুমি আমাকে এই মুহূর্তে বিয়ে না করো তাহলে আমি সোইসাইড করব। আর এত দিনে মেহেদীও স্বর্ণার প্রতি মজনুর মতো আসক্ত হয়ে পড়েছিল। তাই সে আর কিছু চিন্তা-ভাবনা না করে বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে প্রেমিকার উদ্দেশে রওনা হয়। আর স্বর্ণা তো আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল তাই আর বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি।

তারা দু’জনে মনের সুখে ঢাকার উদ্দেশে বাসে চড়ে বসল। সেখানে গিয়ে রাতে থাকার জন্য হোটেলের একটা রুম ভাড়া নিলো। এ দিকে উভয়ের পরিবার তাদের ঘটনা জানতে পারে। স্বর্ণার মা-বাবা মেহেদীকে ফোনে বলে, বেটা! তোমরা বাড়িতে চলে আসো। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে তোমাদের বিয়ে দেবো। তাদের সান্তনামিশ্রিত কথা শুনে মেহেদী ও স্বর্ণা আনন্দচিত্তে বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করার উদ্দেশে পুনরায় বাসে উঠে পড়ে। দীর্ঘ পথ জার্নিং করার পর বাড়িতে আসে। কয়েক ঘণ্টা পর মহল্লার এক মোল্লাকে দিয়ে বিয়েশাদির কার্যাদি সমাপ্ত করে। ইতোমধ্যে মেহেদীর চাচা লোকজন নিয়ে উপস্থিত হয়ে বলে, আমি এ বিয়ে মানি না; বরং তোমরা লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হও। তারপর আমরা তোমাদের বিয়ে দেবো। এ কথা বলে স্বর্ণাকে নিয়ে চলে যায়। এক দিন যায়, দুই দিন যায়, এভাবে এক মাস অতিবাহিত হয়ে যায়। মেহেদীর সাথে আর কোনোরূপ যোগাযোগ হয় না। এমনকি দুই মাস পরে মেহেদীর কাছে স্বর্ণার স্বহস্তে স্বাক্ষরসংবলিত একটি তালাকনামা পাঠানো হয়। এটি দেখে মেহেদীর মাথার ওপর যেন কষ্টের আকাশ ভেঙে পড়ল। স্বর্ণার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। এর দুই মাস পর জুয়েলের বাবা রোড এক্সিডেন্টে ইন্তেকাল করেন। ফলে কয়েক দিন পর জুয়েল বাড়িতে চলে আসে।


আরো সংবাদ



premium cement