২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুধভাত ও আমার মা

-

ভাবছিলাম সেকালের কথা। যখন ছিলাম একেবারেই ছোট। ছিলাম অবুঝ। প্রকৃতির নিয়ম ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। মন যা চাইত তাই-ই করে বেড়াতাম। কখনো যদি কিছু একটা মনের প্রাঙ্গণে বাধা হয়ে দাঁড়াত, তবে সেই বাধা দেয়ার জায়গাটা ধূলিসাৎ করে দেয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু পারতাম না। কারণ, ছোট বেলায় আমাকে সবসময়ের জন্য হতে হয়েছে ‘দুধভাত’।
মনে পড়ে, সেদিন আমাকে দুধভাত বানিয়ে ওরা সবাই সত্যি সত্যি খেলাটা জমিয়েছিল। আমিও ওদের সাথে তাল মিলাতাম। মিলাতাম সত্যি সত্যি খেলার অনুভূতি।
কিন্তু ওরা সবাই কানে কানে ফিসফিস করে বলে, ওই ব্যাটা দুধভাত, ওই যা করে করুক; কান দিস না ওর দিকে। কথাটা শোনবার পর মনোক্ষুণœ হই। কী আর করা, আমি তো আর ওদের মতো বড় হইনি যে, আমাকে সত্যি সত্যি খেলতে দেবে। ব্যর্থ হয়ে চলে যেতাম শ্যামলী গ্রামের মেঠোপথে...
মন খারাপে বাড়িতে কী করব খুঁজে বেড়াতাম। কিন্তু কিছুই পাইনি। দৌড়ে চলে যেতাম মার কাছে। মার আঁচল ধরে টানতাম আর বলতাম, মা মা ওমা, ভাল্লাগছে না; কী করব? মা ভালোবেসে বলেছিলেন, কাগজ দিয়ে নৌকা বানাও। নৌকা বানিয়ে মাঝি সেজে পুকুর পাড়ে পাল তুলে বসে থাকো, আমি তোমার নৌকার যাত্রী হবো। যাও তাড়াতাড়ি গিয়ে নৌকা বানাও।
নৌকা বানালাম। নৌকার পাল তুলে বসে আছি।
আমার কাগজে বানানো নৌকার যাত্রী হিসেবে মা আসবেন। আমার নৌকার যাত্রী হবেন। আমি মার থেকে ভাড়া নেবো। এই ভাবনা ভাবতে না ভাবতেই মা চলে এলেন। মা আমাকে মধুর সুরে ডাক দিলেন, এই যে মাঝি! আমাকে নদীর ওপার নিয়ে যেতে হবে, কত টাকা ভাড়া দিতে হবে বলুন? আমিও নাছোড়বান্দা বলে ফেললাম ২০ টাকা দিতে হবে, ২০ টাকা! মা বলল, ঠিক আছে চলেন তাহলে মাঝি সাহেব। মাকে নিয়ে পুকুর পাড়ের এপার থেকে ওপারে একটু হেঁটে এলাম, মাকে এবার বললাম, দেন আমাকে ২০ টাকা দেন। আমার মা আঁচল খুলে ২০ টাকা বের করে হাতে তুলে দিতেন। এভাবেই কাটত দিনগুলো।
অতঃপর জানি মার কাছে সন্তান কখনো দুধভাত হয় না। সব সময়ের জন্য শ্রেষ্ঠ হয়েই থাকে। আসলেই শ্রেষ্ঠ। আমি মার কাছে দুধভাত নই।


আরো সংবাদ



premium cement