২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একটি শহর নান্দনিক দৃশ্য

-

মানুষের সুন্দর কোনো স্বপ্ন যখন বুকে থাকে, বুকটা তখন কত সজীব থাকে! যেন সবুজ বাগানের তাজা ফুল! সেই স্বপ্নটি যখন জীবনের অঙ্গনে প্রস্ফুটিত হয়, জীবনটা তখন হয়ে উঠে এমন সুন্দর সুরভিত, যেন শুধু একটি ফুল নয়, বসন্তের পূর্ণ একটি পুষ্পিত উদ্যান। আমার ভাঙা বুকেও একটি স্বপ্ন ছিল; বহুদিনের স্বপ্ন। আমি কোনো একদিন তুরস্কে যাব। তুরস্কের আকাশ দেখব, ভূমি দেখব এবং তুরস্কের সেই মানুষগুলো দেখব। যারা একদিন ইসলামী খেলাফতের ঝাণ্ডা ধারণ করে বিশ্ব শাসন করেছে । তাই স্বপ্ন ছিল ইস্তাম্বুলের বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নেবো, ইস্তাম্বুলের বাগানে ফুলের ঘ্রাণ নেবো। সেই ইস্তাম্বুল; যা সুদীর্ঘ ৫০০ বছর ইসলামী খেলাফতের রাজধানী ছিল। সেই ইস্তাম্বুল যা জয় ২৪ বছরের যুবক মুহাম্মদ আল ফাতিহ। যার বিজয়ের খোশখবর দিয়েছিলেন স্বয়ং পেয়ারা নবী মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম।
কিন্তু আমার মতো গরিবের যদিও বা হৃদয়ের গভীরে কোনো স্বপ্ন লালন করে, বাস্তবেও ওই স্বপ্নের ছোয়া পাবে কিভাবে? একটি কথা নির্মম সত্য যে, ‘কল্পনা আর বাস্তবতা দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন জগৎ। অর্থ ও সামর্থ্য ছাড়া স্বপ্ন ও কল্পনা মুখ থুবড়ে পড়ে যায়।’ তাই বহু বছর হৃদয়ের স্বপ্ন হৃদয়েই ঘুমিয়েছিল। স্বপ্নেও ভাবেনি এ স্বপ্ন কখনো বাস্তব হবে। শুধু হৃদয়ের গভীর থেকে একটি মিনতি উচ্চারিত হতো; ‘হে আল্লাহ আমার স্বপ্নের কথা তুমি জানো এবং জানো আমার উপায়হীনতার কথা। হে আল্লাহ তুমি গায়েব থেকে ব্যবস্থা করো; আমার বহু বছরের স্বপ্নটি তুমি পূর্ণ করো। একটা সময় দয়াময় আল্লাহ বান্দার মিনতিপূর্ণ করলেন, অবশেষে তুরস্কে গেলাম। ইস্তাম্বুলের বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নিলাম এবং ইস্তাম্বুলের বাগানে ফুলের ঘ্রাণ নিলাম। বড় মধুর ছিল জীবনের দীর্ঘ স্বপ্নের সেই অল্প কটি দিনের প্রতিটি মুহূর্ত।
একদিন রওনা হলাম তোপকাপে-এর উদ্দেশে। খুব বেশি দূরে নয়। গাড়িতে করে ৫ মিনিটের পথ। তবে যেখানে গিয়ে গাড়ি থামল। সেখান থেকে মূল ফটক যথেষ্ট দূরে। বিশাল এক বাগান হেঁটে পার হতে হয়। বেশ হিমেল বাতাস ছিল। গাছের পাতাগুলো ঝিরঝির নড়ছিল। হাঁটা পথের দু’পাশে ফুলের কেয়ারি। নানা বর্ণের ফুল ফুটে আছে। সে বড় মনোরম দৃশ্য। সেখানে একটি দৃশ্যের অবতারণা হলো, তবে আগের তুলনায় কিছুটা পরিমিত উচ্ছ্বাসের সাথে। বিভিন্ন শ্রেণীর বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ মুসাফাহার জন্য যেন রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। ভক্তির আতিশয্যে কেউ কেউ মেহমানের দাড়ি ছুয়ে নিজের হাতেই চুমু খাচ্ছে। হৃদয়ের ভালোবাসার আরো কত রকম প্রকাশ! কত রকম উচ্ছ্বাস।
একজন বয়োবৃদ্ধ লাঠি ভর করে হাঁটছেন, কণ্ঠস্বর ও উচ্চ নয়। বিশেষ করে লক্ষ করে নয়, মেহমানদের দিকে তাকিয়ে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বললেন, ‘তোমাদের দেশের মানুষের কাছে তুর্কি ভাইদের আন্তরিক ভালোবাসা ও সালাম পৌঁছে দিও।’ এ রকমভাবে তুরস্কের পথে পথে মেহমানরা এমন কতভাবে যে তুর্কি ভাইদের ঈমানি ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে। লিখতে গেলে এক দফতর হয়ে যাবে। তবুও তাদের হৃদয়ের সত্যিকারের মানচিত্র আঁকা সম্ভব হবে না। মোটকথা, ইস্তাম্বুলের পথে পথে যেমন তাজা ফুল ফুটে থাকতে দেখেছি। প্রতিটি মানুষের মুখেও দেখেছি সেই তাজা ফুলের হাসি। একপর্যায়ে আমরা তোপকাপে বা কামান দুয়ার নামে পরিচিত সেখানে পৌঁছলাম এবং দেখলাম সেখানে একটি শাহী বালাখানা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দর্শনীয় সব কিছু ঘুরে ঘুরে দেখলাম। আরেকটি কথা না বললেই নয়, আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রজব তাইয়্যেব এরদোগান যিনি ইস্তাম্বুলে জন্মগ্রহণ করেছেন । যিনি জীবনের দীর্ঘ চড়াই-উৎরাই পারি দিয়ে ১৯৯৪ সালের ৭ মার্চ এই ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। আজকের আধুনিক ইস্তাম্বুল মূলত এরদোগানেরই অবদান। এমন একজন সৎ, যোগ্য ও জনপ্রিয় নগরপতিকে জেলে যেতে হয়েছিল শুধু জনসভায় একটি কবিতা আবৃত্তি করার অপরাধে। বিখ্যাত তুর্কি কবির সে কবিতাটি হলো : মসজিদ আমাদের ব্যারাক/গম্বুজ আমাদের হেলমেট/মিনার আমাদের বেয়নেট/আর বিশ্বাস হলো আমাদের সৈনিক।
একপর্যায়ে এই এরদোগানই জাতীয় নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর পদে সমাসীন হন। আজ তুরস্কে এরদোগানের সুযোগ্য নেতৃত্বে সমৃদ্ধির পথে সুসংহত পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। তুরস্ক এখন পৃথিবীর ১৭তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। অন্য দিকে সেই তুরস্কেই ইসলামের নবজাগরণ হচ্ছে। সেখানে এখন স্কুল পড়ুয়া যুবকেরা যদি ৪০ দিন ফজরের নামাজ জামাতের সহিত আদায় করে। তাহলে তাদের জন্য বাইসাইকেল উপহার দেয়া হয়। এক কথায়, যার হাত ধরে তুরস্কে ইসলামের এক অভূতপূর্ব জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশাবাদ ভবিষ্যতে আরো হবে ইনশা আল্লাহ। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement