আশায় বাঁধি বুক
- জোবায়দা আক্তার জবা
- ০৩ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
বছর আসে বছর যায়। এটাই জীবনের নিয়ম। প্রতিটি বছরই স্মৃতির পাতায় লেখা রয়ে যায়। এই বছরটাও পার হয়ে গেল অনেক কিছু শিখিয়ে পড়িয়ে। ২০২০ ছিল পঞ্জিকাজুড়ে একটি বিশেষ গাণিতিক সাল। আকর্ষণ আকাক্সক্ষা সবই দানা বেঁধে ছিল মনে। অনেক পরিকল্পনা সাজানো ছিল। মেয়ে সিনথিয়ার বিয়ে দেবো, সায়মা জেএসসি পাস করবে। বৃত্তি পাবে। আমার সংসার ও দোকানের আরো কিছু সংস্করণ করব। সায়মার বাবা ভালো একটা কোম্পানিতে জয়েন করে ইতালি থেকে লন্ডন যাবে। অনেক বছর ধরে স্বল্প পরিসরে যা লেখালেখি করি তা দিয়ে এ বছর একটা বই বের করব।
মোটামুটি পরিকল্পিতভাবে সব চলছিল ফেব্রুয়ারি অবধি। হুট করে খবর এলো সায়মার বাবার সর্দি-জ্বর-কাশি হয়েছে। তেমন গুরুত্ব দেইনি। হয়তো ঘরে দু-চারদিন হাল্কা পাতলা ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে। এর মাঝে ওর সাথে যোগাযোগ কমে এলো। কী কারণ বুঝলাম না। ফোন তেমন রিসিভ করে না। করলে কথা বলে কম। জানতে চাইলে তেমন কিছু খুলেও বলছে না। এদিকে টুকটাক মিডিয়ায় খবর বেরুচ্ছে পৃথিবীতে নাকি নতুন একটা অসুখ মহামারী আকার ধারণ করেছে। এই মহামারীর নাম করোনা। এ নিয়ে শুরু হলো দুশ্চিন্তা। মাত্র ক’দিনের মধ্যে যা বুঝলাম তাতে মন উতলা হয়ে উঠল। ভাবলাম সায়মার বাবাকে বাড়ি আসতে বলব। যাই ঘটুক একসাথে থাকব।
এ দিকে ওর সাথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ। আমি পাগলের মতো খোঁজ করছি। ওর রুমমেট দু’দিন বলছিল সেও অসুস্থ এবং তাদের বাইরে যাওয়া বন্ধ। কেউ ওদের কাছে আসছেও না। কী এমন অসুখ সারা পৃথিবীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে এক নিমেষে!
এমন ভয়ঙ্কর অসুখ যেন শত্রুর জীবনেও না আসে! কোনো উপায়ন্তর না দেখে আমি আল্লাহর কাছে রাত-দিন প্রার্থনা করছি। ইতালিতে মৃত্যুর খবর দেখি আর রোজই শঙ্কিত থাকি, আজ বুঝি আমি বিধবা হলাম! এমনকি খাদ্য শঙ্কটেও ভুগছে সায়মার বাবা। সন্তানদের নিয়ে সময় মতো খাবারটাও মুখে যাচ্ছে না আমার। ওকে আসতে বলছিলাম। বলে না এখন আসায় অনেক সমস্যা। তুমি দোয়া করো, আল্লাহ ভরসা। তোমরা সাবধানে থেকো। দেখতে দেখতে কিছুদিনের মাঝে ও সুস্থ হয়ে গেল। কিন্তু শুরু হলো এ দেশে করোনার নবীনবরণ। একে একে ছেলেমেয়ে সবার পড়াশোনা, বাইরে যাওয়া, আমার দোকান সব বন্ধ হলো। কিন্তু তার পরও এই মহামারী এড়াতে পারিনি। বাসার সবাই করোনায় আক্রান্ত হলাম। সমাজ থেকে একঘরে হয়ে কাটালাম ২৮ দিন। তবুও ভালো লাগছে কারণ আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমরা সবাই বেঁচে আছি।
অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে এ বছরে। জীবনের অর্থহীন সব সম্পর্ক আর সব কিছুর ঊর্ধ্বে আল্লাহ কর্তৃক প্রকৃতির ভূমিকাই মনুষ্য সভ্যতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। করোনা এখনো যায়নি হয়তো কোনো দিন যাবেও না। তবুও বেঁচে থাকার এ লড়াই জীবনের অংশ হিসেবে মেনে নিয়ে আমাদের সামনে এগোতে হবে। আশায় বুক বাঁধি সুন্দর হবে নতুন বছর, পূরণ হবে জীবনের স্বপ্ন। প্রত্যাশা অবিরাম।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা