২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাপমুক্তির পাঁয়তারা

-


আলমারি খুলে তিনি এহরামের কাপড়টা দেখলেন। হজ থেকে ফিরে সযতেœ রেখেছিলেন। এ কাপড়ে তার কাফন হবে কী? নাকি পলিথিন মুড়িয়ে মাটি চাপা দেবে তার লাশ?
পারিবারিক কবরস্থানে নিজের জায়গা বেছে লাগিয়েছিলেন একটি কামিনীর চারা। গ্রামে গেলে গাছটার ছবি তুলে ফোনে রাখতেন। সেখানে সম্ভবত তার কবর হবে না।
দোয়ারে দাঁড়িয়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স। প্রতিরক্ষাবাহিনীর লোকেরা এসেছে তাকে শুশ্রƒষাকেন্দ্রে নিতে। তিনি বললেন, ‘একবার ছাদে যেতে চাই’। ছাদে তার পোষা কবুতরগুলো ওড়াউড়ি করে, টবের মাধবীলতায় ফুল, দেখতে বড় ইচ্ছা হলো।
অ্যাম্বুলেন্সে একবার উঠলে আর ফেরা হবে কি না, কে জানে! পাশের বাসার অসুস্থ ইফতিকে নিয়েছিল হাসপাতালে। তিন দিন পর মারা গেল। পরিচিতজনদের শুধু জানিয়েছে রোগী বেঁচে নেই। তার পর পুলিশের অধীনে জানাজা পড়ে গণগোরস্থানে দাফন। করোনায় মরা লোকদের এমনই নির্মম ভাগ্য।
কাগজে একটা ফোন নম্বর লিখে তিনি বললেন, ‘লোকটাকে ডেকে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে দিও। গত সপ্তাহেই ঘোষ পারপাস টাকাগুলো নিয়েছিলেন।
জীবনে তিনি সবচেয়ে বাজে আচরণ করেছেন অফিসের দু’জন কেরানির সাথে। হুমকি-ধমকি আর বাপ তুলে গালি। তাদের কাছে ফোনে ক্ষমা চেয়ে নিলেন। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজেকে হয়তো তিনি পাপমুক্ত করার চেষ্টা করছেন।
পারসোনাল সেক্রেটারি মহিলাটা, যাকে ফেসবুকে অশ্লীল ছবি পাঠিয়ে কৌশলে কুপ্রস্তাব দিতেন, তার ম্যাসেঞ্জারে ঢোকে লিখলেন, ‘মাফ করে দিও বোন’।
হর্ন বাজছে। কর্তব্যরত প্রতিরক্ষাবাহিনীর তাড়ায় তিনি অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার আগে ঘাড় ঘুরিয়ে নিজের বাড়িটা দেখলেন। তিনতলা আলিশান বাড়ি, কত মানুষকে ঠকিয়ে গড়েছিলেন।
রোগটা ধরার পর কেউ তার কাছে ঘেঁষছে না। সংক্রমণের ভয়ে তিনি থাকছেন আলাদা ঘরে। যে ছেলেমেয়ে, স্ত্রীর জন্য তিনি ব্যাকুল হতেন, তারা রইল দূরে। মৃত্যুকালে প্রিয়জনদের স্পর্শটাও পাবেন না। আহা রে জীবন...
৯ দিন পর অ্যাম্বুলেন্স পুনরায় এলো। দরজা খুলে তিনি নেমে এলেন হাসিমুখে। জমের সাথে লড়ে তার জয় হলো। এ যাত্রায় বেঁচে গেলেও আরেকটা নিশ্চিত মৃত্যু তার জন্য অপেক্ষা করছে। তত দিন তিনি পাপমুক্ত থাকবেন তো! হ


আরো সংবাদ



premium cement