২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আজো মনে পড়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার যন্ত্রণা : শওকত আলী সরকার বীরবিক্রম

-

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে শওকত আলী সরকার বীরবিক্রম বলেন, ‘১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে তিনি ঘরে ঘরে শত্রুর মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। তার ভাষণ শোনার পর আমরাও চিলমারীতে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলি। ২৫ মার্চের কালরাত্রির নির্বিচারে গণহত্যার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। পাকবাহিনীর নিশ্চিত আক্রমণ থেকে বাঁচতে অনেকেই বাড়িঘর ছাড়তে শুরু করেন। আর আমরা যুবকেরা যুদ্ধে অংশ নিতে চলে যাই রৌমারীতে।’ মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের অনেক বীরত্বের ইতিহাস আছে। বেশ কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে পাকবাহিনীকে পরাস্ত করার ঘটনা এখানকার মুক্তিবাহিনীকে দারুণভাবে উজ্জীবিত করেছিল। এ সেক্টরের হাতিয়ায় সম্মুখযুদ্ধে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন অকুতোভয় মুক্তিসেনানী শওকত আলী সরকার বীরবিক্রম। যে ঘটনা আজো তার স্মৃতিতে উঁকি দেয়।
কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার মাটি-মানুষের নেতা এবং চিলমারী উপজেলা পরিষদের উপজেলা চেয়ারম্যান তিনি। শওকত আলী সরকার বীরবিক্রম বলেন, ‘সৈয়দপুরে তৃতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈনিকদের সাথে পাক আর্মির বেলুচ রেজিমেন্টের সঙ্ঘাতের পর তৃতীয় বেঙ্গলের এক প্লাটুনের বেশি সেনা রকেট লাঞ্চার, এসএমজিসহ ভারী অস্ত্র নিয়ে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী হয়ে নদীপথে রৌমারী চলে আসি। সেখানে সাদাকাত হোসেন ছক্কু মিয়া ও নুরুল ইসলাম পাপু মিয়ার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সুবেদার আলতাফের নেতৃত্বে শুরু হয় যুবকদের প্রশিক্ষণ।’ তিনি আরো বলেন, ‘গাইবান্ধা, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারাও প্রশিক্ষণ নিয়ে এখান থেকে বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেন। ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা প্রাকৃতিকভাবেই বিচ্ছিন্ন রৌমারীতে হঠাৎ করে পাক আর্মির আগমন সম্ভব না হওয়ায় এ ধরনের তৎপরতা সহজ ছিল।’
শওকত আলী সরকার আরো বলেন, ‘পাকবাহিনী মুক্তাঞ্চলের খবর জানতে পেরে ট্রেনযোগে চিলমারী এসে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলে। তাদের সেই ডিফেন্স ভাঙতে ১ আগস্ট সুবেদার আলতাফের নেতৃত্বে আমরা চিলমারী আক্রমণের পরিকল্পনা করি। কিন্তু তিব্র আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে পিছু হটে তেলিপাড়ার চরে আশ্রয় নেই। চরে অবস্থান করেই দেখতে পাই, বাহাদুরাবাদ থেকে গানবোটে পাকবাহিনী আসছে। দু’দিক থেকে পাকবাহিনী আমাদের ঘিরে ফেলার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তারা টিকতে পারেনি। চরের সাধারণ মানুষের ওপর তারা নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। দু’দিন পর পাকবাহিনী ব্রহ্মপুত্র নদ অতিক্রম করে কোদালকাটির ভেলাবাড়ি স্কুলে অবস্থান নেয়। মোহনগঞ্জে তাদের কিছু সহযোগী ছিল। তারা তাদের পথ দেখায়। আলতাফ সুবেদারের নেতৃত্বে আমরা শপথ নেই কিছুতেই পাকবাহিনীকে এগোতে দেবো না। সোনাভরী নদী ও পারে মদনেরচর স্কুলে আমাদের ডিফেন্স ছিল। পাক আর্মি অগ্রসর হওয়ার আগেই আমরা তাদের ক্যাম্পের পাশে একটি নালার কাছে পজিশন নেই। রাতে দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সাতদিন চলে এই যুদ্ধ। যা কোদালকাটির যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। আমাদের ছিল রকেট লাঞ্চার আর ওদের গানবোট। ভীষণ গোলাগুলির পর পাকবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরদিন যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে দেখি বহুজনের রক্তাক্ত লাশ। কিছু লাশ তারা নিয়ে যায়। কিছু বালুতে পুঁতে রাখে। কুকুর সেগুলোকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করছিল। ওই এলাকার বাসিন্দা এক ফকির আমাদের জানায়, পাক আর্মি সাতদিনে আড়াই শ’ লাশ নিয়ে যায়। আমাদের শহীদ হন ২১ জন। আর দু-একজনকে ধরে নিয়ে যায় তারা। এরপর গেরিলা অপারেশন করে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানা আক্রমণ করে অস্ত্র লুট করি।’
হাতিয়া অপারেশনে শওকত আলী সরকার প্রাণে বেঁচে গেলেও এখনো শরীরে বহন করছেন গুলিবিদ্ধ হওয়ার যন্ত্রণা। সেই স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘কোম্পানি কমান্ডার আলমকে অন্য জায়গায় বদলির কারণে সে সময় শূন্যতা দেখা দিলে সেক্টর কমান্ডার উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান আমাকে ডেকে বলেন, তোমাকে তোমার এলাকায় যেতে হবে। আমি চলে আসি চিলমারীতে। তখন খবর আসে পাকবাহিনী বনগ্রাম ঘাটটি বন্ধ করে দেবে। এ ঘাট দিয়ে মুক্তিবাহিনীসহ শরণার্থীরা পারাপার করেন। আমরা রানীগঞ্জের কাছে ডিফেন্স নিয়ে থাকি। ১৩ নভেম্বর ভোররাতে পাক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ হয়। আমি ২৫ জনের একটি গ্রুপ নিয়ে ওদের উপর আক্রমণ করি। তারাও পাল্টা আক্রমণ করে। আমাদের দু-তিনজন সহকর্মী মারা যান। আমি নিজেও গুলিবিদ্ধ হই সে দিন। পায়ে গুলি লাগে। রৌমারীতে প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের তেলঢালা চিকিৎসাকেন্দ্রে যাই। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে সেখান থেকে দেশে ফিরে আসি।’ হাতিয়া দাগার কুটি নামক স্থানে ৬৯৭ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল পাকবাহিনী। এই অকুতোভয় বীরসেনানী বলেন, দেশ স্বাধীন করেছি আমরা। আমার একটাই প্রত্যাশা একটা সুন্দর সমৃদ্ধশালী স্বদেশ দেখে যেতে চাই। এ বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীরবিক্রম উপাধিতে ভূষিত হন তিনি।
তার গ্রামের বাড়ি চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নে। তিনি সাত ছেলেমেয়ের জনক। বর্তমানে তিনি চিলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।


আরো সংবাদ



premium cement
ব্রিটিশ তেলবাহী ট্যাংকারে হাউছিদের সরাসরি হামলা গাজা নিয়ে আলোচনার জন্য সৌদি আরব যাচ্ছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিরসরাই প্রেস ক্লাবের নতুন সভাপতি মিঠু, সম্পাদক মাঈন আইসিসির সিদ্ধান্ত ইসরাইলকে প্রভাবিত করবে না : নেতানিয়াহু শনিবার বন্ধই থাকছে প্রাথমিক বিদ্যালয় মে মাসে দেশে সর্বকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হতে পারে ডাসারে শিশু খেলতে গিয়ে পানিতে পড়ে নিখোঁজ সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী ট্রাস্টের শরবত বিতরণ কর্মসূচি ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের শতাধিক স্পটে জামায়াতের খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক বাধা দূর করতে সম্মত ভুটান ও বাংলাদেশ চরমোনাই পীরের অসুস্থ ভাইকে দেখতে গেল জামায়াতের প্রতিনিধি দল

সকল