০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


জানালা অথবা হাসনাহেনার গল্প

-


প্রথম বিকেলে পথে নামি। সবুজে ঢাকা পথ। ঘাসে ঘাসে আকীর্ণ। নাকে লাগে বুনোফুলের গন্ধ। ভেজা ঘাসের মন ‘ভালো করা’ সুবাস। গোধূলি সূর্যের হালকা রক্তিম কিরণ বুনোফুলের শরীরে মায়ার আলপনা এঁকে যায়। অচেনা পোকার ঝিঁ ঝিঁ শব্দ হৃদয়কে মুহূর্তে পাঠিয়ে দেয় ‘আম আঁটির ভেঁপুর’ কালে।
হাঁটি। গন্ধে থামি। হৃদয়ের নাকে শুঁকি। গন্ধ মেখে আবার হেঁটে চলি। জনপদের শেষে এ পথ মিশেছে আরো পথে। পথের মাথায় তিন পথ। আমার যাওয়ার পথ খুঁজি। পরিচিত কোনো পথ। যে পথে কেটেছে বহু বেলা। অনেক সময়। আড্ডা। গান। আর হৈহুল্লোড়। আজ আর পরিচিত পথের সন্ধান পাই না। সব পথের রঙ সুবাস ঘাস যেন এক। তখন হৃদয় পাখিকে নির্বাসনে দিয়ে কোনো এক পথে পা বাড়াই। দিনমণির ক্রমেই নিস্তেজ আলো দূর্বাঘাসে পড়ছে। বিন্দু বিন্দু শিশির সবুজের ডগায় নেচে ওঠে। রমণীর নাকফুলের মতো লাগে শিশিরকণা। এ পথের বুক থেকে বের হয়েছে দু’পায়া পথ। দু’পায়া পথে পা চলে। যতেœ বানানো পথ। এক হাত অন্তর অন্তর ঝাউগাছ। হাসনাহেনার গন্ধও পুলক দেয় বাতাসে। এমন অনেক রাত গেছে, হাসনাহেনার গন্ধে ঘর বের হয়েছি। খুঁজেছি তাকে। তার পেছন ছুটেছি দুপুর রাত অবধি।
স্মৃতির ডায়েরি খুললে ভেসে ওঠে, খোঁজে ফেরার এক রাত। তখন নিস্তব্ধ পৃথিবী। ঘুমের কোলে রাত ডুবেছে। হাত ঘড়ির কাঁটাটা ঘুরছে আপন মনে। জানালায় পড়ার টেবিলে বসে আছি। অকস্মাৎ একঝাঁক বাতাসে ভর করে জানালার ফাঁক গলে রুমে প্রবেশ করে প্রিয় হাসনাহেনার গন্ধ। বিমুগ্ধতার পৃথিবী আবিষ্কার করি নিজের ভেতর। জানালার অদূরেই যেন হাসনাহেনা। ঘর বের হই। ছুটে চলি গন্ধের খুঁজে। ঠাহর করা জায়গায় নেই। রেশ আছে। যেন ফ্রেমে বন্দী। গন্ধ আমাকে টেনে নিয়ে যায় আরেক জানালায়। লোহার গরাদে দেয়া জানালা। কপাট একটা খোলা। এখানে সব হাসনাহেনার বিমোহিত গন্ধ। মন গন্ধে ভরে ওঠে। বাতায়নের ভেতর দৃষ্টি দেই। চোখে ভাসে এক রমণী। মোবাইলের নীল আলোয় রমণীর ফর্সা অনিন্দ্য মুখ। গোলাপি ঠোঁটে মুচকি হাসি। বাম গালের নিচে কালো তিল। আমার দেখা জগতের শ্রেষ্ঠ সুন্দর অবয়ব। শোভন। মাথায় রাতকালো চুল। যতেœ পাট করা। তুমুল ইচ্ছা হলো রমণীকে ছুঁয়ে দেয়ার। স্পর্শ করার। মানবী নাকি আসমান থেকে নেমে আসা পরী, সন্দেহ হলো। বাসার ভেতর কারো জেগে থাকার শব্দ পেয়ে ভয়ার্ত মনে ফেরার দিকে চোখ ফেলি। রমণীর ভয়ঙ্কর আশ্চর্য চেহারা আমার হৃদয়ের অস্তিত্বে ভাসছে। কোনোভাবেই হৃদয় থেকে মোছা যাচ্ছে না তার ছবি। এমন রমণী জীবনে বোধহয় প্রথম দেখলাম।
দু’পায়া পথের শেষে নদী। মেঘনা। স্বচ্ছ নির্মল পানি। বাতাসে হালকা ঢেউ উঠছে পানিতে। ঢেউয়ে মধুর কলতান। নদীর পাড়ে বাঁশের মাচায় বসি। একা। কেউ নেই কোথাও। পরিত্যক্ত চিপসের কভার, বাদামের ছোলা দেখে মনে হয়Ñ এ জায়গা মানুষের বড় বেশি চেনা। কিন্তু আজ কেউ নেই। পৃথিবীটা যেন একাকিত্বের বড় শহর। বাতাসের দেয়ালে লেখা ‘একাকী জীবন সুখী।’ একাকী জীবন আসলে সুখী নাকি ছাই? একাকী জীবন তো বিরহ, যন্ত্রণা, হেরে যাওয়া কিংবা বৈরাগী।
কখনো মানুষ একা থাকে অগত্যা। থাকতে হয়। এই যে আমি। আজকাল একা থাকতে বেশ ফুরফুরে লাগে। তার পেছনে মানুষের হাত আছে। আছে সেই খোলা জানালার হাসনাহেনার গন্ধ মাখা মানবীর। কাছের বন্ধুদের।
বন্ধুরাও আজকাল ভিন্ন গ্রহের প্রাণী। অপরিচিত কোনো অতিথি। তারা অকারণে হৃদয়কে ভীষণ পীড়া দিয়ে যায়। মর্মাহত করে আমার আমিকে। বেশ কিছু দিন ধরেÑ এক বন্ধু কিছু টাকা ধার চাইছে। রীতিমতো তাড়া দিচ্ছে। ‘আমার কাছে কোনো পয়সা নেই’ কত বললাম। তার বিশ^াস হয় না। আমার অবস্থাটা এমন যে, মাস হয়ে দ্বিতীয় মাসের আজ পনেরো দিন। বাসা ভাড়া এখনো দেইনি। ওয়ালেট প্রায়ই ফাঁকা থাকে। কিন্তু তাকে বোঝানো যাচ্ছে না। বন্ধুর সাথে সম্পর্কটাও যায় যায় করছে।
বাবা বলতেনÑ ‘ভালোবাসায় মানুষের সঙ্গে বসবাস করো। কাউকে ঠকাবে না। লোকে যেন তোমায় সত্যিকারের মানুষ বলে।’ জীবনকে এভাবেই উপভোগ করছিলাম। ভালোই চলছিল দিনকাল। পরিচিত অপরিচিত সবাইকে ভালোবেসে তাদের মতো চলছিলাম। রেস্তোরাঁয় বিল পেইডের সময় ভাবতাম, বন্ধু বিল দিলে তার চলাফেরায় যদি সমস্যা হয়! তো নিজে দিতাম। এভাবে মাস শেষ হওয়ার আগেই পকেট ফাঁকা হয়ে যেত। কষ্ট করতাম পরে। তবুও তাদের মন জয় করতে পারিনি। সামান্য কথায় তারা যেন অপরিচিত হয়ে উঠত। তার পরও জীবন চলছে। থেমে নেই।
রাত বাড়ছে। ক্রমেই অন্ধকার গাঢ় হচ্ছে। মোবাইল বেজে ওঠে। প্রিয় মায়ের ফোন। তাড়া আসে ফেরার। বাসায় মা অপেক্ষা করছেন। একসাথে খাবেন। দ্রুত পা বাড়াই। হাসনাহেনার গন্ধে ভরা মেয়েটির বাড়ি পার হয়ে আমাদের বাড়ি। জানালা বরাবর দাঁড়াই। জানালায় আলো নেই। গন্ধও আসে না। তবুও ক্ষাণিক দাঁড়াই। ইচ্ছা হলো, তাকে এসএমএস করি। কে জানি বললÑ ‘দুই বছর পর কেন এসএমএস করবি? সে তো বোধহয় ভালোই আছে?’
আমি তখন অন্ধকারে এলোমেলো হাঁটি। গন্তব্য খুঁজি।


আরো সংবাদ



premium cement
জাতিসঙ্ঘ প্রধানকে দ্বিতীয়বারের মতো গাজায় প্রবেশে বাধা দিলো ইসরাইল টানা তাপপ্রবাহের পর চুয়াডাঙ্গায় স্বস্তির বৃষ্টি নোয়াখালীতে অশ্লীল ছবি ফেসবুকে ছড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলবিরোধী সমাবেশ থেকে গ্রেফতার প্রায় ২৫০০ কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড দাগনভুঞা উপজেলা চার মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহ্জাদা মিয়ার জামিন হামাসের সাথে চুক্তির ব্যাপারে মিসরীয় প্রস্তাব মেনে নিন : ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে ভারতে আইনি লড়াইয়ের ল’ফার্ম নিয়োগ নোয়াখালীতে ভুল চিকিৎসায় মা ও নবজাতকের মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন আদমদীঘিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ আদমদিঘিতে আ’লীগ নেতার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

সকল