৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


এই আগুনেই ভাইরে টাইনা ঢাকায় আনছে…

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কয়েকজন আক্রান্ত - ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে পরিবার নিয়ে গ্রামে বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন আগুনে দগ্ধ হান্নান হোসেন বাপ্পী। কিন্ত সংসারে অভাবে বাড়ি থেকে এসে ফতুল্লার তল্লা এলাকায় মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে আগুনে দগ্ধ হন তিনি। সারা শরীর পোড়া অবস্হায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পঞ্চম তলায় পোস্ট অপারেটিভে মুমূর্ষ অবস্থায় রয়েছেন বাপ্পী।

নারায়ণগঞ্জে ফতুল্লার তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটনায় বাপ্পীকে গতকাল সোমবার ড্রেসিং করানো জন্য ড্রেসিং রুমে নেয়া হয়। আর তার স্বজনরা কেউ মেঝেতে বসে, কেউ বা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন ড্রেসিং রুমের সামনে। ড্রেসিং শেষ করে রোগীকে বেডে নিয়ে যাওয়ার সময় একনজর দেখার জন্য। তার স্বজনদের সঙ্গেই সেখানেই আলাপ হয়।

হুইল চেয়ারে বসে বাপ্পীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন তার বড় ভাই। ওই আগুনে দগ্ধ হয়েও বেঁচে গেছেন ইমরান হোসেন। নারায়ণগঞ্জে পোশাক কারখানায় কাজ করতেন দুই ভাই। ইমরানের বড় ভাই বাপ্পীর শরীরে ৩০ শতাংশ ও শ্বাসনালী পুড়ে গেছে।

এ ব্যাপারে ইমরান জানান , '১০/১২ বছর ধরে ওই এলাকাতে বসবাস করছি। আমরা দুই ভাই পোশাক কারখানায় কাজ করি । কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে ভাই তার পরিবার ও মা-বাবাকে নিয়ে তারা চলে যান গ্রামের বাড়িতে। সংসারে অভাবের কারণে ভাই সপ্তাহখানেক আগে আবার ঢাকায় আসেন। ঘটনার দিন নামাজ পড়তে যান মসজিদে। নামাজ শেষে বের হচ্ছিলেন। তার এক পা ছিল বাইরে, আরেক পা ছিল ভেতরে। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা পাননি, আগুনের হল্কায় পুড়ে যায় তার সারা শরীর।

ইমরান হোসেন আরো বলেন, আমি যখন সুস্হ হয়ে ভায়ের কাছে গেলাম, 'ভাই আমাকে দেখেই বললেন, আমার শরীর জ্বলতেছে, আমি বাঁচমু না। পুরা শরীর তার পোড়া, চেনা যাইতে ছিল না। তারপর তারে নিয়ে এই হাসপাতালে আসি।'

গ্রাম থেকে তার ভাইয়ের ঢাকা ফেরার কথা উল্লেখ করে ইমরান জানান, 'করোনা শুরু হলে তার স্ত্রী ও মা-বাবা আর দুই বছরের ছেলেকে নিয়ে সদর পটুয়াখালীতে গ্রামের বাড়ি চলে যান বাপ্পী। সপ্তাহখানেক আগে দেশ থেকে আসছেন। দেশে তো কাজ নাই, খাওয়া নাই সংসারে অভাব । এতগুলা মানুষ না খাইয়া কত দিন থাকবে। তাই কাজের জন্য ঢাকায় আসেন, কিন্তু যে কারখানায় কাজ করতেন সেটা বন্ধ থাকায় অন্য কাজ খুঁজতেছিলেন।'

আক্ষেপ করে তিনি আরো বলেন, 'করোনা থেকে বাঁচার জন্য ভাই সবাইরে নিয়া গ্রামে গেলে, মাত্র সাত দিন আগে ঢাকায় আসলেন, এই আগুনেই ভাইরে টাইনা ঢাকায় আনছে…।'

ইমরান কান্নার কন্ঠে বলেন, আল্লাহ আমাকে এই মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। আমি মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। কিন্তু আমার বড় ভাই তো হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। তার যদি কিছু হয় তা হলে আমাদের পুরা পরিবারটি সমাস্যার মধ্যে পড়ে যাবে। এই সংসার কিভাবে চলবে?

উল্লেখ্য, গতশুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তল্লা এলাকায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজের সময় বিস্ফোরণ ঘটে। ফরজ নামাজের মোনাজাত শেষে অনেকে সুন্নত ও অন্য নামাজ পড়ছিলেন। এসময় মসজিদের ভেতরে ৪০ জনের মতো মুসল্লি ছিলেন। বিস্ফোরণে প্রায় সবাই দগ্ধ হন। দগ্ধদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৭ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।

ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডা.আবুল কালাম বলেন, 'আমরা আসলে কারো বিষয়েই এখনি শঙ্কামুক্ত হতে পারছি না। কারণ বেশির ভাগেরই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত কতজন এই সংগ্রামে টিকে থাকতে পারেন। সেটা কেউ বলতে পারে না। তবে আল্লাহর অশেষ রহমতে ইমরান হোসেন নামে একজন দগ্ধ রোগী সুস্হ হয়ে বাড়ি ফেরে গেছেন। অন্যদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।'


আরো সংবাদ



premium cement