লন্ডনের দক্ষিণে ক্ল্যাফাম এলাকার একজন বাসিন্দা রোববার বিকালে তার বাড়ির বাগানে রোদ পোহাচ্ছিলেন। বিকাল আনুমানিক পৌনে চারটার দিকে তিনি তার চোখের সামনে যা দেখলেন তা তার কল্পনারও অতীত ছিল। তার মাত্র কয়েক গজ দুরে আকাশ থেকে ধপ করে একটি লাশ এসে পড়ে। রক্তে ভেসে যায় তার বাগানের একাংশ।
পুলিশ জানাচ্ছে, হিথরো বিমানবন্দর-গামী কেনিয়ান এয়ারওয়েজের একটি বিমান থেকে লাশটি এসে পড়েছে। যে বাড়ির বাগানে লাশটি পড়েছে, সেটির পাশের বাড়ির বাসিন্দা বলেন, হঠাৎ 'ধপাস' করে পতনের জোর একটি শব্দ শুনে দোতলার জানালা থেকে বাইরে তাকিয়ে পাশের বাড়ির বাগানে একটি লাশ দেখতে পান। ‘বাগানের দেয়ালে ভরা ছিল রক্ত।’
‘আমি দ্রুত বাইরে বেরিয়ে দেখি আমার প্রতিবেশীও বাইরে বেরিয়ে আসছে। ভয়ে কাঁপছিল সে।’ ঐ ব্যক্তি, যিনি তার নাম প্রকাশ করতে চাননি, বলেন, তার এলাকার একজন 'প্লেন স্পটার' আকাশে একটি বিমান থেকে লাশটি পড়তে দেখেছেন ।
পুলিশ আসার প্রায় সাথে সাথেই ঐ 'প্লেন স্পটার' ঐ বাড়ির সামনে হাজির হন। তিনিই তখন বলেন, কেনিয়ান এয়ারওয়েজের একটি বিমান থেকে ঐ লাশটি পড়েছে।
ঐ প্রতিবেশী বলেন, ‘দুই সেকেন্ড দেরী হলেই, লাশটি এমন এক জায়গায় পড়তো যেখানে কয়েকশ মানুষ ছিল। আমার দুই বাচ্চা ১৫ মিনিট আগেও বাগানে ছিল।’
‘আমি হিথরো বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে প্রতি পাঁচ বছরে গড়ে এরকম একটি ঘটনা ঘটে।’
এত ওপর থেকে পড়লেও লাশটি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়নি। ঐ ব্যক্তি বলেন, ‘লাশটি যে ছিন্নভিন্ন হয়নি তার প্রধান কারণ সেটিকে একটি বরফের দলার মত দেখাচ্ছিল।’ পুলিশ বলছে, লাশের ময়না তদন্ত করা হবে। তবে তারা এই ঘটনার পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র দেখছেন না।
প্রতি পাঁচ বছরে একটি ট্রাজেডি
কেনিয়ান এয়ারওয়েজ জানিয়েছে, তারা তাদের বিমানটি পরীক্ষা করেছেন। কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারের খোপের ভেতর একটি ব্যাগ, পানি এবং কিছু খাবার পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিহত ঐ ব্যক্তি ব্রিটেনে আসার জন্য নাইরোবি বিমানবন্দরে লুকিয়ে ল্যান্ডিং গিয়ারের খোপের মধ্যে গিয়ে উঠেছিল।
দূরপাল্লার বিমান আকাশে ওঠার পর ল্যান্ডিং গিয়ারের খোপের ভেতরের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত নীচে নেমে যেতে পারে। সেখানে তখন দীর্ঘক্ষণ বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব।
অবতরণের আগে চাকা খোলার জন্য ল্যান্ডিং গিয়ারের ঢাকনা খোলার পর লাশটি ছিটকে পড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কেনিয়ান এয়ারওয়েজের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘৬,৮৪০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে লাগে আট ঘণ্টা ৫০ মিনিট। এটা দুঃখজনক যে লুকিয়ে আমাদের একটি ফ্লাইটে উঠে একজনের জীবন গেছে। আমরা শোকাহত।’ মুখপাত্র জানান, ঘটনা তদন্তে তারা হিথরো এবং নাইরোবি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করছেন।
লুকিয়ে বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারের খোপে উঠে হিথরো বিমান বন্দরে আসার পথে এ ধরণের ট্রাজেডি আগেও হয়েছে। ২০১৫ সালে জুন মাসে লন্ডনের রিচমন্ড এলাকায় একটি অফিসের ছাদে একজনের লাশ এবং আরেকজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় পাওয়া যায়। তারা দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ থেকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি বিমান লুকিয়ে উঠেছিল। ২০১২ সালের অগাস্টে কেপ টাউন থেকে আসা একটি বিমানের মালপত্র রাখার খোলের ভেতর একটি লাশ পাওয়া গিয়েছিল।