২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৭ দফা না মানলে অকল্পনীয় শাস্তি : ড. কামালের ঘোষণা

চট্টগ্রামে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিশাল সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন ড. কামাল হোসেন (ইনসেটে)  - ছবি : নয়া দিগন্ত

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, জনগণ যখনই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, অসম্ভবকে সম্ভব করা গেছে। এবারো জনগণের বিজয় হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণই ক্ষমতার মালিক। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, জনগণ সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। আজকে জনগণ সাত দফার পক্ষে হাত উঠিয়ে রায় দিয়েছে। সিলেটেও গণরায় দিয়েছে। কাজেই সময় থাকতে সাত দফা দাবি মেনে নিন। অন্যথায় এটি অমান্য করার জন্য বিচার হবে, এর জন্য যে শাস্তি হবে তা অকল্পনীয়। তিনি বলেন, দেশে এখন প্রতিদিনই জনগণের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে, সংবিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নিয়ম রক্ষার নির্বাচনের কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সেই নিয়ম রক্ষার নির্বাচনের মাধ্যমে পাঁচ বছর কাটিয়ে দেয়া হলো, এটা গুরুতর অপরাধ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর থেকে প্রতিনিয়ত সংবিধান লঙ্ঘনের কৈফিয়ত এ দেশের জনগণ নেবে, এর জন্য শাস্তি পেতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দেয়ার প্রতি ঘণ্টার জন্য জবাবদিহি করতে হবে এবং শাস্তি পেতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। 

চট্টগ্রামে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। গতকাল শনিবার দুপুরে নূর আহমদ সড়কে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে কুরআন তিলাওয়াত, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠের মধ্য দিয়ে এই জনসভার কার্যক্রম শুরু হয়। বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ডা: শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেনÑ জে এস ডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গণফোরামের সদস্যসচিব মোস্তফা মহসিন মন্টু, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মো: মনসুর, কল্যাণ পার্টি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব: সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্য সদস্যসচিব মোস্তফা আমিন, এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহম্মেদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মো: শাজহাজান, মীর মো: নাছির উদ্দীন, তানিয়া রব। বক্তব্য রাখেনÑ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবদিন ফারুক, ড. সুকোমল বড়–য়া, গোলাম আকবর খন্দকার, ফজলুল হক ফজু, গণফোরাম কেন্দ্রীয় যুগ্মসম্পাদক আ হ ম শফিউল্লাহ, সহসভাপতি জগলুল হায়দার আফ্রিদী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, জেএসডি কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দীন স্বপন, খায়রুল কবির খোকন, জাতীয় পার্টির আহসান হাবিব লিংকন, গোলাম জিলানী চৌধুরী, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, শাহাদাত হোসেন সেলিম, লুৎফর রহমান কাজল, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, আবু সুফিয়ান, নুরী আরা সাফা, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, সোহরাব হোসেন, শাহজান চৌধুরী, ম্যা মা চিং, গাজী শাহজাহান জুয়েল, অ্যাডভোকেট জানে আলম, মো. শাহ আলম, রেহেনা আকতার রানু, চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দীন, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম সাইফুল আলম। বেলা ১টার আগেই মূল সমাবেশ শুরু হয়। 

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন আরো বলেন, সংবিধানে লেখা আছে জনগণ ক্ষমতার মালিক, সরকার সেবকমাত্র। তিনি বলেন, আজকের সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল লালদীঘি মাঠে। জনসভা করা সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, লালদীঘি মাঠ না দিয়ে মানুষকে কষ্ট দেয়ার কৈফিয়ত আদায় করা হবে। এর জন্য শাস্তি পেতে হবে। বাংলাদেশ কারো একক সম্পত্তি নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৬ কোটি মানুষ এ দেশের মালিক। আজ হোক কাল হোক সীমিত জায়গায় সভা করতে বাধ্য করে মানুষকে কষ্ট দেয়ার বিরুদ্ধে বেঁচে থাকলে মামলা করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে তিনি জানান। জনসভা করতে কারো দয়া মায়া চাই না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। 

প্রধান বক্তা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার নিজেরাই নাশকতা, সন্ত্রাস, সহিংসতা সৃষ্টি করে দেশকে অন্ধকার গহ্বরে ঠেলে দিচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করার পরপরই আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, এর মাধ্যমে দেশকে অন্ধকার গহ্বরে ঠেলে দেয়া হলো। নেত্রীর সেই কথাই আজ সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের জনগণ এখন নিজেদের অধিকার ফিরিয়ে আনার লড়াই করছে। আগামী নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারলে ভাঙা নৌকায় আর উঠবে না। মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণকে আটকে রেখে কোনো স্বৈরাচার টিকে থাকতে পারেনি। তিনি বলেন, আমরা অন্যায়ের কাছে মাথানত করব না, আমরা পরাজিত হব না। সাত দফা দাবি আদায় করে, জনগণের ভোটের অধিকার আদায় করেই ঘরে ফিরব। মির্জা ফখরুল ড. কামাল হোসেনকে জাতির অভিভাবক, বিবেক হিসেবে মন্তব্য করেন। 

আ স ম আবদুর রব বলেন, সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না, বাংলাদেশ ঘেরাও করতে হবে। স্বৈরাচার যাতে পালাতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিনা বিচারে পালাতে দেবো না, পালানোর রাস্তা নেই। তিনি বলেন, সাত দফা মেনে না নিয়ে আমাদের সাথে আলোচনা ছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলে বলব সরকার নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, দেশকে সঙ্ঘাতের দিকে ঠেলে দেবেন না। পুলিশ আর বেশিক্ষণ সরকারের পাশে নেই। খালেদা জিয়াকে নিঃসঙ্গ করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন, এ জন্য ক্ষমা নেই। মামলা-হামলায় কাজ হবে না, ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, জনতার কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে। 

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান চেতনা গণতন্ত্র আজ আওয়ামী বাক্সে বন্দী। চট্টগ্রামের সমাবেশে সরকার পদে পদে বাধা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিছিল আসতে দিচ্ছে না, সড়কে দাঁড়াতে দিচ্ছে না, বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করছে, তবুও জনতার স্রোত নেমেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে এই চট্টগ্রাম থেকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তিনি পুলিশ প্রশাসনকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ যা করেনি, আপনারা তা করেছেন। মনে রাখবেন আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, হুঁশিয়ার হয়ে যান। সরকারের বেআইনি হুকুম না মেনে জনগণের পাশে দাঁড়ান। 

ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, সরকার কোনোভাবেই চাইবে না অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করা হবে। নির্বাচনের আগে যাতে সরকারের অনিয়ম দুর্নীতির সমালোচনা প্রকাশ করা না যায় সে জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সম্প্রচার নীতিমালা করা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। এই ঐক্যই স্বৈরাচারের পতন আনবে, গণতন্ত্র ফিরে আসবে। আওয়ামী লীগকে একটি অসহিষ্ণু স্বৈরাচারী দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের এই আচরণের কারণে জনগণ ভোটের অধিকার হারিয়েছে, আইনের শাসন হারিয়েছে, বিচার বিভাগ স্বাধীনতা হারিয়েছে এবং সর্বোপরি গণমাধ্যম স্বাধীনতা হারিয়েছে। 

মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, আমরা শুধুই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন চাই। তিনি বলেন, কোনো অধিকার কেউ দেয় না, আদায় করে নিতে হয়। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, জাতিকে সঙ্ঘাতের দিকে ঠেলে দেবেন না, তা দেশকে অন্ধকারে নিয়ে যাবে। তিনি প্রশ্ন রাখেন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ খালেদা জিয়াকে জনমানবহীন কারাগারে রেখে দেয়া কোন ধরনের মানসিকতা? গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর দেয়া জায়গায় আহত মুক্তিযোদ্ধা নিজের সব কিছু ত্যাগ করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তুলে জনগণের সেবা করে আসছিলেন, আর সে প্রতিষ্ঠানে কুকুরদের লেলিয়ে দিয়ে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। 

ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার পাকিস্তানিদের চেয়ে খারাপভাবে দেশ শাসন করছে। প্রধানমন্ত্রী নিজের ছায়াকেও এখন ভয় পান মন্তব্য করে তিনি বলেন, আপনি জনতাকে ভয় পাবেন না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে যারা আছেন, তারা আইনজ্ঞ, আইনের মানুষ। তাই খালেদা জিয়াকে যেভাবে হেনস্তা করছেন, তার পুনরাবৃত্তি হবে না এই নিশ্চয়তা আছে। তিনি বলেন, এই চট্টগ্রাম থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান, তাকে নিয়েও কটূক্তি করা হয়। মওলানা ভাসানীর জন্ম না হলে শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু হতেন না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ডা: জাফরুল্লাহ বলেন, আর মাত্র ১০ দিন অপেক্ষা করেন, দেখেন কী হয়। বিজয় নিশ্চিত। 

মাহমুদুর রহমান মান্না সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, আমাদের একটাই সেøাগান তুমি যাও, ভোট দাও, ক্ষমতা ছাড়। তিনি বলেন, আমরা এই সরকারের পতন চাই, গণতন্ত্র রক্ষা করতে চাই। তিনি বলেন, জনগণের জয় হবে, ঠেকানোর কোনো শক্তি নেই। ৭৩ বছর বয়সেও একজন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অসুস্থ অবস্থায় অন্যায়ভাবে, জবরদস্তিমূলকভাবে মিথ্যা মামলায় নির্জন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আটকে রাখা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এ দিকে জনসভায় আসতে বিভিন্ন স্থানে বাধা দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। তা ছাড়া নগরীর নাসিমন ভবনের সড়কের আউটার স্টেডিয়াম প্রান্তে ফুটপাথের ওপরও পুলিশ কাউকে দাঁড়াতে দেয়নি। ব্যাপক জনসমাগম হলেও নির্দিষ্টস্থানের বাইরে মাইক টাঙাতে বাধা দেয়ার কারণে কাজীরদেউরী বাজার, ভিআইপি টাওয়ার-সংলগ্ন এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা বিপুল লোক জাতীয় নেতাদের বক্তব্য শুনতে পারেননি বলেও বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন।


আরো সংবাদ



premium cement
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে চুয়েট ১১ মে পর্যন্ত বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে শিশুর মৃত্যু হিলিতে ভটভটি-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২ ‘গাজার ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে ১৪ বছর লাগতে পারে’ সখীপুরে ছাগল চুরির মামলায় মা-ছেলে কারাগারে ‘অন্যায়ের সাথে নয়া দিগন্তের সাংবাদিকরা কখনোই আপোষ করেন না’ রাজশাহীতে হলে ঢুকতে না দেয়ায় রাস্তায় বিসিএস পরীক্ষার্থীর কান্না সালমান-শাকিবের পর এবার জয়কে টার্গেট!

সকল