০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকছে কুশিয়ারা নদীর পানি : ২ ইউনিয়ন প্লাবিত

-

সিলেটের ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জে উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিপাতে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুই উপজেলার অন্তত ৪টি স্থানে কুশিয়ারা ডাইকের(নদীরক্ষা বাঁধ) উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে এলাকার বিভিন্ন গ্রামের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। পাহাড়ি ঢলে দুই উপজেলার ১টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণ এবং ২টি ইউনিয়ন আংশিক বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এতে দুই উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের ৭/৮ শ পরিবারের হাজারো লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যতেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে এবং শনিবারের মধ্যেই বন্যা কবলিত লোকজনের জন্য ত্রাণ এসে পৌঁছাবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

গেল কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানি কুশিয়ারা নদী দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে চলছে। ওসমানীনগর উপজেলার সাদীপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারা ডাইকের লামা তাজপুর গ্রামের ভিতরে কুশিয়ারা ডাইকের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে উপজেলার সাদীপুর ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামসমূহ প্লাবিত হচ্ছে। সাদীপুর ইউনিয়নের লামা তাজপুর, পূর্ব তাজপুর, সৈয়দপুর, দক্ষিণ তাজপুর, টুকরা গাঁও, সুরিকোনাসহ বিভিন্ন গ্রামের ভিতরে ৪-৫ শ’ পরিবারের লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। কুশিয়ারা ডাইকের বাইরে অবস্থিত গ্রামগুলোর বিভিন্ন ঘর বাড়ির আঙ্গিনায় হাঁটু পর্যন্ত পানি উঠেছে। তবে গেল বছর যে সব স্থানে কুশিয়ারা ডাইকের মেরামত করা হয়েছিলো সেসব স্থান দিয়ে এবারের বন্যায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

বালাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের ৩টি স্থানে কুশিয়ারা ডাইকের উপর দিয়ে পানি বিভিন্ন গ্রামে ঢুকছে। ইউনিয়নের ফাযিলপুর, হামছাপুর ও পৈলনপুর নামক স্থানে কুশিয়ারা ডাইকের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে ইউনিয়নের সবক’টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে হামছাপুর, জালালপুর, রশিদপুর, গালিমপুর, পৈলনপুর, ফাযিলপুর,ইছাপুর, ঐয়া, কিত্তেজালালপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় পৌনে ২শতাধিক পরিবারের শত শত লোকজন পানিবন্দী রয়েছেন। ইউনিয়নের ফাযিলপুর গ্রামের নতুন রাস্তায় কুশিয়ারা ডাইকের একটি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিনের উদ্যোগে মেরামত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তাছাড়া উপজেলার পূর্ব গৌরীপুর, বালাগঞ্জ, দেওয়ানবাজার, পশ্চিম গৌরীপুর এবং ওসমানীনগরের উছমানপুর, উমরপুর,পশ্চিম পৈলনপুর, তাজপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানা গেছে।

সাদীপুর ইউনিয়নের লামা তাজপুর গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ হুমায়েল আহমদ জানান, লামা তাজপুর গ্রামে কুশিয়ারা ডাইকের একটি স্থানের উপর দিয়ে পানি ঢুকে বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত করছে। এতে সাদীপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে।

ওসমানীনগরের সাদীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী আব্দুর রব জানান, উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গেল বছর কুশিয়ারা ডাইকের যেসব স্থান মেরামত করা হয়েছিলো সেসব স্থান দিয়ে এবার নদীর পানি ঢুকছে না। তবে ডাইকের নতুন একটি স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করায় ইউনিয়নের ৪/৫শত পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পানিবন্দী রয়েছেন। বিভিন্ন বাড়ির উঠানে হাঁটু পর্যন্ত পানি উঠেছে। আমার বাড়ির উঠানেও ১৫/১৬ ইঞ্চি পানি উঠেছে। বালাগঞ্জের পূর্ব পৈলনপুর ইনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন জানান, ইউনিয়নের তিনটি স্থানে কুশিয়ারা ডাইকের উপরদিয়ে পানি গ্রামের ভিতরে প্রবেশ করছে। অপর একটি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিলে তা বন্ধ করার চেষ্টা করছি। গোটা ইউনিয়ন পানিতে ভাসছে। প্রায় পৌণে ২শ পরিবারের শত শত মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন।

বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুস সাকিব বলেন, বালাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পৈলনপুর ইউপি বন্যা কবলিত হয়েছে। পূর্ব গৌরীপুর ইউপি’র আংশিক বন্যা কবলিত রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যতেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। শনিবারের মধ্যেই ত্রাণ এসে পৌঁছবে। ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, আমি বর্তমানে লামা তাজপুর অবস্থান করছি। কুশিয়ারা ডাইকের উপর দিয়ে যাওয়া পানির স্থানে বালু ভর্তি বস্তা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement