৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সিলেট-২

লুনার বিকল্প প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় যারা

-

সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনে বিএনপির প্রার্থী, নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিনী তাহসিনা রুশদীর লুনার মনোনয়নপত্র স্থগিত করে উচ্চ আদালতের দেয়া আদেশ আপিল বিভাগ বহাল রেখেছেন। ফলে তাহসিনা রুশদীর লুনা আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না।

গত মঙ্গলবার আপিল বিভাগের এ আদেশ নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছার পর বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে।

এদিকে, এ আসনটিতে তাহসিনা রুশদীর লুনাবিহীন নির্বাচনে বিএনপি বিকল্প প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে লড়বে, না নির্বাচন থেকে সরে যাবে এ নিয়ে চলছে আলোচনা। এ আসনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরীক দল খেলাফত মজলিসের মুহাম্মদ মুনতাছির আলী ‘দেয়াল ঘড়ি’ প্রতীকে ও গণফোরামের মোকাব্বির খান ‘উদীয়মান সূর্য্য’ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা দু’জনই ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। জোটের মনোনয়ন না পেয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে মুনতাছির আলী নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে কাজ চালিয়ে গেলেও গণফোরামের মোকাব্বির খান প্রতীক বরাদ্দের দিন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান এবং তিনি যুক্তরাজ্য চলে যান। এমতাবস্থায় বিএনপি লুনার বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মুনতাছির আলী নাকি মোকাব্বির খানকে সমর্থন দিবে এই আলোচনায় সরব এখন নির্বাচনী এলাকা।

সিলেট-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও মহাজোটের ব্যানারে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মো: ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ লঙ্ঘন করার অভিযোগ এনে বিএনপির প্রার্থী লুনার প্রার্থিতার বিরুদ্ধে গত ১৩ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতে রিট করেন। অভিযোগে ইয়াহ্ইয়া উল্লেখ করেন, নির্বাচনে অংশ নিতে হলে তাহসিনা রুশদীর লুনাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদ থেকে অবসরের পর তিন বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু তিনি তা না করেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। পরে আদালত শুনানি শেষে তাহসিনার প্রার্থিতা স্থগিত করেন। উচ্চ আদালতের এ আদেশ স্থগিত চেয়ে লুনা আবেদন করেন। এর শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ গত মঙ্গলবার লুনার মনোনয়ন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে ‘নো অর্ডার’ আদেশ দেন।

সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির প্রভাবশালী নেতা নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর থেকে তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন। এ অবস্থায় নির্বাচনী এলাকার দুটি উপজেলাতেই বিএনপিপন্থী প্রার্থী বিজয়ী হন। এমনকি অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও বিএনপি সমর্থিতরা জয়লাভ করেন। ইলিয়াস আলী স্ত্রী ও বিএনপির দলীয় অবস্থান হিসেবে এই আসনে লুনা একজন শক্তিশালী প্রার্থী। কিন্ত তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে আসনটিতে মহাজোটের প্রার্থী বর্তমান এমপি মো. ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী, স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী মুহিবুর রহমান ও এনামুল হক সরদার এবং খেলাফত মজলিসের মুনতাছির আলী মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চলে আসতে পারেন। বিএনপি যদি ঐক্যফ্রন্টের শরিক দুটি দলের কোনো একজন প্রার্থীকে সমর্থন জানায়, তাহলে তিনিও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চলে আসতে পারেন।

ঐক্যফ্রন্টের একটি সূত্রে জানা গেছে, তাহসিনা রুশদীর লুনার বিকল্প প্রার্থী হিসেবে ঐক্যফ্রন্টের নীতিনির্ধারকেরা মৌখিকভাবে গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খানকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এক্ষেত্রে বিএনপি জোটের তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করছেন মোকাব্বির খান মাঠের রাজনীতিতে না থাকায় জনসাধারণের কাছে তিনি পরিচিত নন, ফলে তিনি রয়েছেন জনবিচ্ছিন্ন। এক্ষেত্রে খেলাফত মজলিসের মুনতাছির আলী দীর্ঘদিন থেকে মাঠের রাজনীতিতে কাজ করে আসছেন। জনসাধারণের কাজে রয়েছে তার ব্যক্তি ইমেজও। তাই যদি মুনতাছির আলীকে ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী করা হয় তাহলে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি চলে আসবেন এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তবে বিএনপি নেতাকার্মীরা এখনো আশাবাদি আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে তাহসিনা রুশদীর লুনা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির সভাপতি জালাল উদ্দিন বলেন, আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আমাদের বিএনপির প্রার্থী ধীনের শীষ নিয়ে এ আসনে নির্বাচন করবেন বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। দলীয়ভাবে ভোট বর্জন কিংবা অন্য কোনো প্রার্থীকে সর্মথনের বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। তবে আমাদের নেত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনার সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করা হবে।

এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও বর্তমান এমপি ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া মনোনয়ন দেয়া হয়। এতে ইয়াহ্ইয়া চৌধুরীর প্রতি ক্ষুব্ধ রয়েছে এই আসনের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা অভিমান করে নির্বাচন বিমুখ হয়ে পড়েন। কিন্তু এই আসনে নৌকার কোনো প্রার্থী না থাকায় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগ নেতা মুহিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ ঘরানার ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত অধ্যক্ষ ড. এনামুল হক সরদার। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ক্ষুব্ধ অনেকেই মহাজোট প্রার্থী এহিয়া চৌধুরীর বিকল্প হিসেবে মুহিবুর রহমান ও ড. এনামুল হক সরদারকে দেখছেন।

এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে- আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলয়ের মুহিবুর রহমান আর শফিকুর রহমান চৌধুরী বলয়ের ড. এনামুল হক সরদার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুটি বলয়ের অনেক নেতাকর্মী ইতিমধ্যে স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী পক্ষে প্রচার প্রচারণাও শুরু করেছেন। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে এখনো কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচার প্রচারণায় নামতে দেখা যায়নি। তারা দলের উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জাতীয় পার্টির ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমানের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল। সেই নির্বাচনে ইয়াহ্ইয়া ৪৮ হাজার ১৫৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আর ১৭ হাজার ৩৮৯ ভোট পেয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মুহিবুর রহমান। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে সমর্থন জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তাই মহাজোট প্রার্থী ইয়াহ্ইয়া চৌধুরীর পক্ষে যদি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবারও মাঠে নামেন তাহলে পাল্টে যাবে ভোটে হিসাব-নিকাশ এমনটাই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।


আরো সংবাদ



premium cement
ধরপাকড়ের মধ্যেই ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ অব্যাহত যুক্তরাষ্ট্রে গুলিতে ৩ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা নিহত ফিলিপাইনের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি, বাড়তে পারে আরো শিখ নেতা পান্নুনকে খুন করতে ‘হিটম্যান’ পাঠিয়েছিলেন ‘র অফিসার’ : ওয়াশিংটন পোস্ট দিল্লিকে উড়িয়ে দ্বিতীয় স্থানে কেকেআর করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা স্বীকার অ্যাস্ট্রাজেনেকার বাইডেনকে পিছনে ফেলে দিলেন ট্রাম্প ইউরোপের ‘গাজা’ যুদ্ধ আসছে শয়তানবাদ! পার্বত্য চট্টগ্রামে কেএনএফের উত্থান ও করণীয় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির কর্মীকে বেদম প্রহার সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের

সকল