২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তবুও তারকা নন আহমেদ মুসা

-

আহমেদ মুসা এখন শুধু নাইজেরিয়া বা আফ্রিকান আলোচনার মধ্যমণিই নন। তাকে বিশেষভাবে স্মরণ করছে আর্জেন্টাইনরা। তার জোড়া গোলেই আইসল্যান্ডের বিপক্ষে জয় নাইজেরিয়ার। প্রথম ম্যাচে হেরে পিছিয়ে পড়া দলটির প্রেরণা এখন মুসা। আর আর্জেন্টাইনরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ, এই মুসাই যে তাদের শেষ আশা বাঁচিয়ে রেখেছে দারুণভাবে। সেই সাথে সারা বিশ্বে থাকা তাদের শত কোটি সমর্থকও। মুসার জোড়া গোল তার এখন নিজ দেশ, আইসল্যান্ড ও আর্জেন্টিনা সবার সম্ভাবনাই জিইয়ে রেখেছে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার। এক মুসাই পাল্টে দিয়েছে ‘ডি’ গ্রুপের হিসাব। শুধু এটাই নয়, মুসা এখন বিশ্বকাপ ফুটবলে নাইজেরিয়ার সর্বোচ্চ গোলদাতা। ২০১৪ ও ২০১৮ বিশ্বকাপ মিলে চার গোল তার। তিনিই প্রথম নাইজেরিয়ান, যার পরপর দুই বিশ্বকাপ আসরে গোল আছে। একজন ফুটবলারের তারকা হওয়ার জন্য আর কী চাই। অথচ এরপরও আহমেদ মুসা তারকা ফুটবলার নন ১৯৯৪ সাল থেকে বিশ্বকাপ খেলা দেশটির। বরং তাকে ছাড়িয়ে দেশটির বর্তমান স্টার ফুটবলার হলেন ভিক্টর মোসেজ। এমন তথ্য দিলেন রাশিয়ায় আসা ডেইলি ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার সাংবাদিক ইদিমা পিটার তাইয়ো এবং দি সানের জন জোসা। আগে ছিলেন বর্তমান অধিনায়ক জন আবি মিকেল। তাদের মতে, ভিক্টোর মোসেজ পাঁচ বছর ধরে চেলসিতে খেলেন। তার পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা রয়েছে। কিন্তু আহমেদ মুসা তা নন। এক ম্যাচে দুর্দান্ত তো পরের ম্যাচেই ছন্দ পতন। ভিক্টোর মোসেজের তারকা খ্যাতির আরেকটি কারণ ২০১৩ সালে আফ্রিকান নেশন্স কাপে নাইজেরিয়ার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নেপথ্য এই মোসেজ।
অবশ্য এখন কেউ কি আর তারকা না বলে পারবে আহমেদ মুসাকে? তার দুই গোলেই দল প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এবার তার গোল সম শক্তির আইসল্যান্ডের বিপক্ষে। কিন্তু চার বছর আগে তো কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনা শিবিরে। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে পোর্তো আলেগ্রেতে দুইবার তিনি বল পাঠিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার জালে। তার দুর্দান্ত স্কিলের কাছে কি নাস্তানাবুদই না হয়েছিল মেসিদের রক্ষণভাগ। পরশু ভলগোগ্রাদেও তার পায়ের কাজে পরাস্ত আইসল্যান্ডের রক্ষণ প্রাচীর।
৪৯ মিনিটে প্রথম গোল করলেন চমৎকারভাবে ডান পায়ে শূন্যে ভাসা বল নামিয়ে তারপর ডান পায়ের তীব্র শটে। তার বল রিসিভের সময়ই বোকা বনে যান আইসল্যান্ডের রক্ষণকর্মী। ৭৫ মিনিটে মুসার দ্বিতীয় গোল তো আরো অসাধারণ। ডিফেন্স থেকে আসা লব ধরে এরপর গতিতে এক ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করেন। পরে কাটান আগুয়ান গোলরক্ষককে। তখন পোস্টের নিচে গোললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে দুই আইসল্যান্ডিক ডিফেন্ডার। এই দুই ডিফেন্ডারের বাধা ডিঙ্গিয়ে তিনি শট নেন একেবারেই ঠাণ্ডা মাথায়। যা সাধারণত আফ্রিকানদের কাছে প্রত্যাশিত নয়। কপাল ভালো থাকেল আইসল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকও পেয়ে যেতেন। কিন্তু তার একটি শট ক্রসবারে লাগায় হলো না তা।
মুসাকে ঘিরে আর্জেন্টিনা এখন বেশ খুশিই। তবে ২৬ জুন তিনি হবেন ভঙ্গুর আর্জেন্টিনার রক্ষণ প্রাচীরের জন্য আতঙ্কের নাম। যা তিনি চার বছর আগে দেখিয়েছিলেন। ক্রোয়েশিয়ান ফরোয়ার্ডরা গত ম্যাচে নাকানি চুবানি খাইয়েছিল তাদের। আইসল্যান্ডও তাদের বিট করছিল বারবার। এবার তো মুসার পালা।
মুসার যে আন্তর্জাতিক ম্যাচে পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা নেই এর প্রমাণ তার করা গোলসংখ্যাই। ২০১০ সাল থেকে নাইজেরিয়া জাতীয় দলের হয়ে ৭৪ ম্যাচে গোল করেছেন মাত্র ১৫টি। ২০১১ সালে নাইজেরিয়ান লিগে সর্বোচ্চ ২০ গোল করেন মুসা। যা এখনো রেকর্ড। এখন তিনি রাশিয়ার ঘরের ছেলে হয়ে গেছেন। ২০১২ সাল থেকে খেলছেন সিএসকেএ মস্কো ক্লাবে। চার বছরে ১২৫ ম্যাচে গোল করেছেন ৪৫টি। এরপর ২০১৬তে ইংলিশ লিগের ক্লাব লিস্টার সিটিতে যোগ দিয়ে হতাশ করেছেন। ২১ ম্যাচে মাত্র দুই গোল। ফলে এ বছর লোনে আবার ফিরে এসেছেন সিএসকেএ মস্কোতে। ফর্মও ভালো তার। ১০ খেলায় গোল সংখ্যা ৬।

 


আরো সংবাদ



premium cement