২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উদ্বোধনের আগেই ধসে গেলো তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়ক

রোববার প্রধানমন্ত্রী এই সেতুটি উদ্ধোধন করার আগেই ধসে গেলো সংযোগ সড়কটি। - ছবি: নয়া দিগন্ত

উদ্ধোধনের আগেই ধসে গেলো রংপুর-লালমনিরহাটের মহিপুর-রুদ্রেশ্বর সীমান্তে তিস্তা নদীতে দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর সংযোগ সড়ক। ফলে বহুল প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক সম্মৃদ্ধির দ্বার হিসেবে বিবেচিত দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুটি এখন কার্যত লালমনিরহাটের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলো।

এদিকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ওই সড়কে স্বাভাবিক যোগাযোগ নিশ্চিত করার জন্য এলজিইডি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি।

স্থানীয়রা বলছেন, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নজিরবিহীন গাফিলতির কারনে ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কে ভয়াবহ অবস্থা তৈরী হয়েছে। এ অবস্থার মধ্যেই আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হতে যাচ্ছে সেতুটি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই দিন বেলা সাড়ে ১১ টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটির উদ্বোধন করবেন।

সেতুটির সংযোগ সড়ক নিয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর দৈনিক নয়া দিগন্তে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।

সরেজমিনে দেখা গেছে তিন দফায় বিভিন্ন নামে নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে সংস্কার করার পরেও দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর উত্তরপ্রান্ত থেকে কাকিনা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কটির শেষ রক্ষা হলো না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক উদ্বোধনের দুইদিন আগেই বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে সেতুর উত্তর পাশের সংযোগ সড়কের ইচলী এলাকার ব্রিজটি তিস্তার পানির তোড়ে ধসে গেছে। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগর বাঁশের খুটি দিয়ে সংযোগ সড়কের ওই ব্রীজ এলাকাটি আটকে দিয়েছে। উৎসুক মানুষ ভির করছেন সেখানে। তারা জিও ব্যাগ ফেলে সড়কটি চালু করার চেষ্টা করছে। জরুরী প্রয়োজনে মানুষ এখন সেখানে নৌকায় করে চলাচল করছেন।

এর আগে জুলাই মাসের বন্যায় ব্রিজের মোকা ধসে পড়লে জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করেছিল সংশ্লিষ্ট দফতর। ফলে প্রধানমন্ত্রী কর্তক সেতুটি উদ্বোধন করলেও সহসাই কোন যানবাহন ও পথচারী সরাসরি ওই ব্রীজ দিয়ে চলাচল করতে পারবে না। নৌকা দিয়ে পার হয়ে এসে উঠতে হবে সেতুতে। সেতুটি অনেকাংশে অকার্যকর হয়ে পড়লো।

এদিকে ধসে যাওয়ার এই ঘটনায় ওই এলাকার মানুষের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি শুক্রবার বেলা ৩ টায় নয়া দিগন্তকে জানান, আমাদের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন রোববার।

এরআগে সংযোগ সড়কের ব্রীজের মোকা ধসে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঘটনা খুবই দু:খজনক। আমি এলজিইডি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছি শনিবার বিকেল ৫ টার মধ্যেই ধসে যাওয়া অংশ সংস্কার করে পুরোপুরি যোগাযোগ উপযোগী করতে হবে। আমি নিজেই বিকেলে সেখানে সরেজমিনে গিয়ে যোগাযোগ স্বাভাবিক হওয়া দেখতে যাব।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, এই সংযোগ সড়ক নির্মানে অনিয়মের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

লালমনিরহাট ডেপুটি কমিশনার শফিউল আরিফ সাংবাদিকদের জানান. দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যথাসময়েই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যথা সময়ে হবে। ধসে যাওয়া অংশ দ্রুত মেরামত বা সাময়িক যোগাযোগের জন্য ব্যবস্থা করতে প্রকৌশল বিভাগ কাজ করছে।

সংযোগ সড়ক নির্মানে নিম্নমানের কাজ ও ধসে যাওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান। তবে তিনি বলেন, নদী প্রতিমুহূর্তে গতিপথ পরিবর্তন করে থাকে। সেতু নির্মাণের পরিকল্পনার সময়ের গতিপথ অনুযায়ী সেতু ও নদী শাসন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এখন নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। সেটা দেখার কাজ আমার নয়, এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ। তারা দেখবে।

স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক হোসেন জানান, সংযোগ সড়ক নির্মাণের শুরু থেকে কাজের মান নিয়ে অভিযোগ করেও সুফল মেলেনি। নিম্নমানের কাজ ঢাকতে চার দফায় সংস্কার করেও চলাচলের উপযোগী করতে পারছে না প্রকৌশল দফতর। নদী শাসনের ১৩০০ মিটার বাঁধ অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। এখন লোকালয় ভাঙ্গার পাশাপাশি ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙ্গে যাচ্ছে। ফলে উদ্বোধনের আগেই দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুটি অকার্জকর হয়ে পড়লো।

এদিকে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে অপার সম্ভাবনার এই সেতুটির সংযোগ সড়ক বেহাল দশায় উদ্বিগ্ন সবাই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেতুটি চালু হলে ভারি যানবাহনের লোড নেয়ার মতো সক্ষমতা নেই সংযোগ সড়কটির।

এছাড়াও নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারনে যেকোন মুহুর্তে সড়কটি পুরোটাই ধসে গেলে কোন কাজে আসবে না বহুল কাঙ্খিত তিস্তা সড়ক সেতুটি।

সিডিউল অনুযায়ী একনেকে পাশ হওয়া বরাদ্দের মধ্যেই সেতুর উত্তর প্রান্ত থেকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের কাকিনা পর্যন্ত ৫ দশমিক ২৮০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ২টি প্যাকেজে ৪ কোটি ৪৬ লাখ ও এই সড়কে ২টি ব্রিজ ও ৩টি কালভার্ট নির্মাণে ৩টি প্যাকেজে ৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং সেতুর দক্ষিণ প্রান্ত থেকে রংপুরের অংশে ৫৬৩ মিটার সড়ক নির্মাণে ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়।

এত বিপুল পরিমান টাকা এই কাজে ব্যয় করা হলেও চলতি জুন-জুলাই মাসের বন্যায় সেতুটির উত্তর প্রান্ত থেকে কাকিনা পর্যন্ত সংযোগ সংযোগ সড়কের অধিকাংশ স্থান ধসে যায়। চলাচলের অযোগ্য হয়ে পরে এই সড়ক। শুধু তাই নয়, সড়কটি নির্মানের পর আবারও সড়ক বর্ধিত করার নামে ২টি প্যাকেজে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় করা হয। সড়কটি প্রস্থে ১২ থেকে ১৮ ফুট হলেও নিম্নমানের কাজের কারণে এখনও চলাচল অনুপোযোগী।

এরপর তৃতীয় দফায় আবারও ৫ কিলোমিটার সড়কটি শক্তিশালী করার নামে বরাদ্দ নিয়ে ৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। সাধারণত সড়ক শক্তিশালী করণে প্রতি কিলোমিটারে ১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। কিন্তু এ সড়কে তিনগুণ অর্থ বেশি খরচ করেও কোন কাজ হচ্ছে না। ৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে তিন দফায় মোট ১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হলেও এখন সংযোগ সড়কটি ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী হয়নি।

অনুসন্ধানে এলজিইডি, স্থানীয় মানুষ এবং বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কটিতে ২ ফুট এটেল মাটি দেয়ার কথা থাকলেও শুধু বালুর ওপর নিম্নমানের খোয়া দিয়ে দায়সাড়া কাজ করা হয়েছে। সে কারনে সড়কটি ধসে যাচ্ছে।

নিম্নমানের কাজ ঢাকতে সড়কটি তিন দফা সংস্কার করেও চলাচলের উপযোগী করতে পারেনি প্রকৌশল দফতর। এরই মাঝে ২টি ব্রিজ ও ২টি কালভার্টের মোকা ধসে পড়েছে। যা জিও ব্যাগ ফেলে আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ভেঙ্গে যেতে শুরু করেছে সড়ক। বিষয়টি বার বার পত্র পত্রিকায় প্রকাশ এবং স্থানীয়রা বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করা সত্বেও স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এটি তোয়াক্কা করছেন না।

গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ইচলি এলাকার ব্রীজটি ধসে যাওয়ায় সড়কটিতে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে আছে। নৌকায় করে মানুষ পারাপার হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট দফতর  বলছে নদী শাসনের ১৩০০ মিটার বাঁধ অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। তিস্তার মূল স্রোতধারা সেতু হয়ে না গিয়ে লোকালয়ের দিকে এসেছে। ফলে ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও ব্রিজ কালভার্ট ভেঙ্গে যেতে বসেছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ওই ৫ কিলোমিটার সড়কসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি ও হাট-বাজার।

এ সড়কটি ভেঙ্গে গেলে তিস্তা দ্বিতীয় সড়ক সেতুটি অলস পরে থাকবে। কোনো কাজেই আসবে না।

এলজিইডির একাধিক বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী নয়া দিগন্তকে জানান, সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর থেকেই এর ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন বাস ট্যাক, ট্যাংলরি যাতায়াত শুরু করবে। বিশেষ করে প্রতিদিন শত শত পাথরবাহী ভারি ভারি ট্রাক যাতায়াত করবে। এসব ভারি যানবাহনের লোড কোনভাবেই নড়েবড়ে ওই সংযোগ সড়কটি নিতে পাবে না। কারন ওই সংযোগ সড়কটিতে বালু দিয়েই নির্মাণ করা হয়েছে। উপরে এটেল মাটি দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয় নি।

এছাড়াও তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার কারনে যেকোন মুহুর্তে তিস্তার রুদ্রমুর্তির ঢেউ আঁছড়ে পড়বে সড়কটির ওপর। বালু দিয়ে তৈরির কারনে পানির তোড় সইতে পারছে না সংযোগ সড়কটি। যার কারনেই গত জুলাইয়ের বন্যায় সড়কটি ধসে যাওয়া শুরু করেছে।

আবার বৃহস্পতিবার ব্রীজ ধসে গেলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জরুরী ভিত্তিতে সংযোগ সড়কটি টেকসই নির্মান প্রয়োজন। নইলে সড়কটি ধসে গেলে বহুল কাঙ্খিত তিস্তা সড়ক সেতুটি অলস পড়ে থাকবে। এটি কোন উপকারে আসবে না। এই সেতুটিকে ঘিরে আশেপাশের ৬ উপজেলার মানুষের আর্থিক ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন তছনছ হয়ে যাবে।

এ ব্যপারে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রংপুর চেম্বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবুল কাশেম নয়া দিগন্তকে জানান, এই সেতু নির্মানের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বুড়িমারী স্থল বন্দরকে আরও বেশী কার্যকর করা। ব্যবহার করা। ভারত, নেপাল ও ভুটানের সাথে আমাদের যে আমদানী রপ্তানী বাণিজ্য আসে সেটি এই সেতুর মাধ্যমে আরও সম্প্রসারণ হবে। এই অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রধান শেখ হাসিনাকে এই অঞ্চলের মানুষ সাধুবাদ জানায়। কিন্তু সেতুটির লালমনিরহাট অংশের সংযোগ সড়ক এবং ব্রীজ ও কালভার্ট নিম্নমানের কাজের কারনে যেভাবে ধসে যাচ্ছে। তাতে আমরা শংকিত। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের আগেই সংযোগ সড়কটির ইচলির ব্রিজটির পার্শ্ব ধসে গেলো। এটা বড় লজ্জার বিষয়।

তিনি জানান, উদ্বোধনের আগেই ধসে গেলো। তাহলে সেতুটি প্রধানমন্ত্রী চালু করে দিলেই পাথরবোঝাইসহ ভারি যানবাহন চলাচল যখন শুরু হবে। তখন কোনভাবেই বালুর ওই সংযোগ সড়ক টিকবে না। সেতুটি চালু হওয়ার পর সংযোগ সড়কের কারনে সেতুটি অকেজো হয়ে পড়লে আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন অকালে মরে যাবে। এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন । যারা অনিয়মের সাথে জড়িত তাদের দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ ব্যপারে লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম জাকিউর রহমান জানান, তিস্তা গতিপথ পরিবর্তন করায় পানির স্রোতে সংযোগ সড়কের ইচলি এলাকার ব্রীজটি মোকা ধসে গেছে। এখন সড়কটিতে আপাতত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। আমরা চেষ্টা করছি জিও ব্যাগ দিয়ে যোগাযোগ স্বাভাবিক করার জন্য। তিনি জানান সম্প্রতি বন্যায় তিস্তা দ্বিতীয় সড়ক সেতুর সংযোগ সড়কের ব্রীজের কিছু অংশ ধসে গেছে। বালুর বস্তা ফেলে সংযোগ সড়ক ভাঙন ও ধস ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়ছিল।

যেভাবে শুরু হলো দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর কাজ

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রংপুর জোনাল অফিস সূত্র জানায়, দীর্ঘ দাবির প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ২২ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে (একনেক) বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুরে গ্রামীন যোগাযোগ ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষিটারী ইউনিয়নের মহিপুর এবং লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর সিমান্তে তিস্তা নদীর ওপর ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ এবং ফুটপাতসহ ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণের জন্য ১২১ কোটি ৬৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করে সরকার।

এরপর টেন্ডার আহবান করা হলে সেতুটি নির্মানের কার্যাদেশ দেয়া হয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডাব্লিউ এমসিজি নাভানা কনস্ট্রাকশনকে। ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সেতুটির নির্মান কাজের উদ্বোধন করেন সেই সময়কার এবং এখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এলজিইডি সূত্র মতে, একনেকে পাস হওয়া বরাদ্দে সিডিউল অনুযায়ী ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটির প্রস্থ ৯ দশমিক ৬ মিটার। যানবহন চলাচলের জন্য বরাদ্দ আছে ৭ দশমিক ৩ মিটার। দুই পার্শ্বে ফুটপাত আছে ০ দশমিক ৯ মিটার। সেতুটিতে ১৬টি পিলার, ২টি অ্যাপার্টমেন্ট, ১৭টি স্প্যানে ৮৫টি গার্ডার আছে। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ৫০ মিটার।

এছাড়াও আছে সেতুটির উভয় পাশে ১ হাজার ৩০০ মিটার নদী শাসন বাঁধ নির্মাণ এবং সেতুর উত্তর প্রান্ত থেকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের কাকিনা পর্যন্ত ৫ দশমিক ২৮০ কিলোমিটার সড়ক ও ২টি ব্রিজ, ৩টি কালভার্ট নির্মাণ, সেতুর দক্ষিণপ্রান্ত থেকে রংপুরের অংশে ৫৬৩ মিটার সড়ক নির্মান। সিডিউল অনুযায়ী এইসব কাজই ২০১৪ সালের ৩১ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এলজিইডি এবং ঠিকাদারী কর্তৃপক্ষে নানামুখি যোগসাসি অজুহাতে তিন দফা সময় ও নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে সেতুটির কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এতে সেতুটির মোট ব্যয় দাড়ায় ১৩১ কোটি ৮৬ লাখ টাকায়।

এলজিইডি সূত্র জানায়, প্রথমে সেতু নির্মাণে ২২ মাস সময় ধরা হলেও ২০১৪ সালের ৩১ জুন মেয়াদ শেষে সেতুর মাত্র ৪৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়। এরপর ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ায় এলজিইডি। প্রথম দফা সময় বৃদ্বির মেয়াদে সেতুর মাত্র ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়। ফলে

আবারো ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। তাতেও কাজ শেষ না হওয়ায় ততীয় বারের মতো সময় বাড়ানো হয় ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। এরপর ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সেতুটির নির্মান কাজ শেষ করে কালিগঞ্জ এলজিইডিকে বুঝিয়ে দেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নাভানা।

এ ব্যপারে নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশন লি: এর প্রকৌশলী মো: মকবুল হোসেন জানান, আমরা সেতু এবং সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করে চলতি বছর জানুয়ারী মাসে লালমনিরহাট এলজিইডির কাছে হস্তান্তর করেছি। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা।
এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেতুটি এলজিইডিকে বুঝে দেয়ার পর পরই সেতুটির উত্তরপান্ত থেকে কাকিনা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ধসে যেতে থাকে। এরই মধ্যে গতিপথ বদলায় তিস্তা। গত জুলাইমাসে সংযোগ সড়কে ধস মহামারি আকার ধারণ করে।
নিজেদের দায় এড়াতে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান তড়িঘরি করে সেতু ও সড়কটি স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল দফতর রংপুরের কাছে বুঝিয়ে দেন।

স্থানীয়রা জানান, লালমনিরহাটের বুড়িমারি স্থল বন্দর ও পাটগ্রম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার লাল খাখ মানুষকে রংপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত ও পন্য পরিবহনে লালমনিরহাট হয়ে ঘুরে আসতে প্রায় ৬০ কিলোমিটার পথ বেশী পাড়ি দিতে হয়।

এতে অনেক বেশী সময় ও অর্থ অপচয় হয়। একম বাস্তবায় বিগত ৪৫ বছর ধরে রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুর এবং লালমনিরহাটের কালিগঞ্জের রুদ্রেশ্বর সিমানে তিস্তা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মানের দাবি করে আসছিলেন ভূক্তভোগিরা। এই দাবির পক্ষে ৬০ কিলোমিটার পথ কমে যাওয়া এবং সেতুটিকে ঘিরে এই অঞ্চলের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তনের জোড়ালো যুক্তি উপস্থাপন করা হচ্ছিল।অবশেষে ২০১০ সালে দাবি পুরণ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে সরকার।

এলজিইডি প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা নয়া দিগন্তকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবের ১৬ সেপ্টেম্বর। সেতুটি চালু হলে রংপুর-লালমনিরহাটের অর্থনীতির চাকা খুলে যাবে। এই অঞ্চলের মানুষ আগে তাদের উৎপাদিত পন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে যেতেই পচে যেতো। এখন সেটা হবে না। অন্তত ৬০ কিলোমিটার পথ কমে যাবে। এই অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে পাথরসহ অন্যান্য সামগ্রী রংপুর, ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরিবহনে সময় ও আর্থিক সাশ্রয় হবে।


তিনি বলেন, সংযোগ সড়কটি ভারি যানবাহন চলাচলের উপযোগী রাখতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওই সংযোগ সড়কটি নির্মানে যাদের গাফিলতি আছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement