২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আটকে রেখে দুই শিশু শিক্ষার্থীর উপর বর্বরতা

তেঁতুলিয়া হাসপাতারের মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আহত শিশু মারুফ ও আবু তাহের - নয়া দিগন্ত

তেঁতুলিয়ায় স্কুল সংলগ্ন দোকানে মিথ্যা চুরির অপবাধে দু’শিশু শিক্ষার্থীকে ঘরে আটকে রেখে মারপিট করে। সহপাঠি ও শিক্ষরা গুরুত্বর আহত অবস্থায় দু’শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। আহত দু’ শিশু শিক্ষার্থী তেঁতুলিয়া সদরের খালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র।

জানা যায় গত বুধবার (১ লা আগষ্ট/১৮) সকালে গড়িয়াগছ গ্রামের মনির হোসেন এর ছেলে ২য় শ্রেণির ছাত্র মেহেদী হাসান মারুফ (৯) এবং আলমের ছেলে ৩য় শ্রেণির ছাত্র আবু তাহের প্রতিদিনের মত স্কুলে যায়। সেদিন দুপুরে টিফিন বিরতির হলে স্কুলের পাশ্ববর্তী ভ্যারাইটিজ দোকানে বিস্কুট কেনার জন্য গেলে দোকানদারকে না পেয়ে ফিরে আসে। এসময় দোকানের মালিক খালপাড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মামুন (১৮) তাদের ডেকে দোকানে ভিতরে নিয়ে যায়।

পরে আধা ঘন্টা আটকে রেখে মিথ্যা চুরির অপবাধে কারেন্টের মোটা তার দিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের এলোপাতারি মারপিট করে। প্রধান শিক্ষক সহপাঠিদের মাধ্যমে জানতে পেরে দেড়গছ দূরে মামুনের দোকান থেকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে বিকাল সাড়ে ৪ ঘটিকায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালের জরুরী বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আহত শিশু শিক্ষার্থীদের ভর্তি রাখেন।

হাসপাতালের মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডের ৯ নং বেডে ভর্তিরত ২য় শ্রেণির ছাত্র মেহেদী হাসান মারুফ আমাদের প্রতিবেদককে জানান- টিফিনের সময় বিস্কুট কেনার জন্য দোকানে যায়। দোকানদারকে তাৎক্ষনিক না পেয়ে সেখান থেকে ফেরার পথে দোকানের মালিক মামুন তাদের ডেকে ঘরের ভিতরে নিয়ে মিথ্যা চুরির অপবাধে আটকে রেখে কারেন্টের কালো তার দিয়ে মারপিট করে। এসময় দোকানের মালামাল ও ক্যাশের টাকা এলোপাতারিভাবে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে আমাদের উদ্ধারের জন্য লোকজন গেলে তাদের সেই সব দেখান।

একই ওয়ার্ডের হাসপাতালের ৫নং বেডে ভর্তি ৩য় শ্রেণির ছাত্র আবু তাহের বলেন, দোকানদার মামুন আমাদের মিথ্যা চুরির অপবাধ দিয়ে টাকা ও মালামাল এলোপাতারি ফেলে দিয়ে আমাদের পিটে, পাছায় ও গালে চর থাপ্পর দিতে থাকে। এসময় বলে তোরা আর বাঁচতে পারিব না তোদের চুরির জন্য মরতে হবে। কিন্তু আমরা কোন কিছু চুরি করিনি বললে আমাদের কারেন্টের তার দিয়ে বেশি বেশি মারে।
আহত শিশুদের অভিভাবক দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাৎক্ষনিক বিদ্যালয়ের সভাপতি/প্রধান শিক্ষক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছে। কিন্তু এরিপোর্ট লিখা পর্যন্ত শালীস বৈঠকের আশ্বাসে থানায় কোন মামলা হয়নি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, টিফিন বিরতির পর সকল শিক্ষক যখন খাওয়া এবং নামাজের জন্য ব্যস্ত ছিল; ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আমি অন্য শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে শিশুদের গুরুত্বর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে এনে ভর্তি করি।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আজমল হোসেন এর সংগে এবিষয়ে জানার জন্য অফিসে গেলে তাকে পাইনি। পরবর্তীতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

তেঁতুলিয়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আবু জাফর মো. আজাদ (শিশু বিশেষজ্ঞ) জানান- আহত দু’শিক্ষার্থীদের পিঠে, পায়ের উরু ও কোমরে একাধিক মারপিটের চিহ্ন পাওয়া গেছে এবং শক্ত লাটি বা কারেন্টের তার দিয়ে পেটার কারণে রক্ত জমাট বেঁধেছে। এতে শিশুদের মনে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা অপুরনীয়। কারণ শিশুদের কোন ধরণের মারপিট করা আইনত দ্বন্ডনীয় অপরাধ।

তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার মোঃ জহুরুল ইসলাম জানান- আমি ঘটনাটি শোনেছি এবং শিশুদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু এখনো কোন লিখিত অভিযোগ না পায়নি।

আরো পড়ুন : মিরপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর যৌথ হামলা

নিরাপদ সড়কসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন চলাকারী শিক্ষার্থীদের ওপর মিরপুরে পুলিশ ও একদল যুবক যৌথ হামলা চালিয়েছে। হামলাকারী যুবকদের হাতে লাঠি ছিল। তারা পুলিশের সাথে সংঘবদ্ধ হয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। মিরপুর-১৪ নম্বরে এ ঘটনা ঘটে।

হামলার শিকার কয়েকজন শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের জানান, আজ বেলা চারটার দিকে মিরপুর ১৪ নম্বরে তাদের জমায়েত স্থলে পুলিশ এসে তাদের ওপর চড়ায় হয়। এরপর পুলিশের সঙ্গে কিছু যুবক লাঠি নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে । শিক্ষার্থীরা তখন মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থান নেয়।

বিকাল ৪টা দিকে মিরপুর-১৩ ও ১৪ নম্বরের মধ্যে বিআরটিএ থেকে কাফরুল থানা হয়ে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের গেইট পর্যন্ত সড়কে এই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে।

নাম প্রকাশ না করে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ মানবন্ধন করছিলাম। পুলিশ হঠাৎ এসে আমাদের লাঠিপেটা শুরু করেছে। পরে তাদের সঙ্গে স্থানীয় যুবলীগও যোগ দিয়েছে।’

ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে গত রোববার জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টানা আন্দোলন করছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement